একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা থাকবে কি না, সে বিষয়ে সোমবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা জানান। তিনি বলেন, কমিশন উচ্চ আদালতের আদেশ আজ (বৃস্পতিবার) পেয়েছে। এ বিষয়ে আইন শাখাকে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে কমিশনকে অবহিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর ২৫ নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে চার ব্যক্তির করা একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার রুলসহ আদেশ দেয়।
জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের পদক্ষেপ নিতে ওই চার রিটকারী নির্বাচন কমিশনে যে আবেদন করেছিলেন, তা তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয় ওই আদেশে। খবর বিডিনিউজের
২০০৮ সালের ১ আগস্ট তরিকত ফেডারেশনের দায়ের করা এক রিট মামলার রায়ে হাই কোর্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে।
নিবন্ধন বাতিল হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এ দলের নেতারা এবার তাদের জোটসঙ্গী বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন। স্বতন্ত্র হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন কয়েকজন।
রিটকারীরা বলছেন, জামায়াতের নিবন্ধন নেই, তাই ওই দলের কোনো নেতা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছেন না। যেহেতু নিজস্ব প্রতীকে পারছেন না, সেহেতু অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণেরও সুযোগ নেই। তাদের সেই সুযোগ দিয়ে নির্বাচন কমিশন হাই কোর্টের রায় ও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের বিভিন্ন বিধির সঙ্গে ‘প্রতারণা, প্রবঞ্চনা’ করেছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছে তিন কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে। আমরা যেহেতু আজকে (বৃহস্পতিবার) পেয়েছি, স্বাভাবিকভাবে আমাদের হাতে আরো দুটি কার্যদিবস আছে ।
শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় রবি ও সোমববার ইসির হাতে আছে ইংগিত দিয়ে তার মধ্যেই কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানান ইসি সচিব।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রথমবারের মত ভোটের মাঠে নেমে গ্রাম পুলিশের সদস্যরা কী হারে ভাতা পাবেন, সে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশন সচিব।
তিনি বলেন, ৬৪টি জেলায় ৪১ হাজার গ্রাম পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে চার দিন কাজ করবে। এ দায়িত্বে গ্রাম পুলিশের চৌকিদাররা প্রতিদিনি ৫০০ টাকা এবং দফাদাররা ৬০০ টাকা করে ভাতা পাবেন।
দফাদার ও চৌকিদার মিলে সারা দেশে গ্রাম পুলিশের সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার। এদের মধ্যে দফাদারদের মাসিক বেতন ৩ হাজার ৪০০ টাকা। আর চৌকিদাররা পান ৩০০০ টাকা।
তাদের বেতন সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে গত অক্টোবর মাসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেখানে দফাদারের বেতন ৬ হাজার টাকা এবং চৌকিদারদের বেতন ৫ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়।
কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ না করায় এখনও তাদের বেতন বাড়েনি।
ইসি সচিব বলেন, নির্বাচনে গ্রাম পুলিশের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ৮ কোটি ২১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এই বরাদ্দ জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। গ্রাম পুলিশ জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে এই বরাদ্দ বুঝে নেবেন।
গ্রাম পুলিশের সদস্যরা পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মাঠপর্যায়ে তথ্য দিয়ে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে বলে জানান ইসি সচিব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়গুলো তারা খতিয়ে দেখছেন।
এ সময় সাংবাদিকরা বেশ কিছু এলাকার হামলা-সংঘর্ষের তথ্য দিলে সেগুলোকে ‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন হেলালুদ্দীন।
তিনি বলেন, এগুলো উপমহাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। পাশের দেশ ভারত, শ্রীলংকায়ও এ ধরনের ঘটনা হয়। তবে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে সব জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।