মাহমুদুল হক আনসারী
বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে দেশ অচল। সারা দেশের খেটে খ্ওায়া নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে। জুন মাস থেকে চলে আসা কোটা সংস্কারের কর্মসূচিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থিরা এখন্ও মাঠে রয়েছে। সরকার শিক্ষার্থিদের কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নিয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ফলে এই দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থিদের আন্দোলনে দুই শতাধিক অথবা তার চেয়ে বেশি ছাত্র সহ নিরীহ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনের দাবিটি জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়েছে। ফলে দাবির পক্ষে ছাত্র সমাজের সাথে সর্ব স্তরের জনগণের সমর্থন পায়। ছাত্র দের ধারাবাহিক এই আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হয়। পরিতাপের বিষয় হলো আন্দোলনে মেধাবি ছাত্র নিহত, আহত, গ্রেফতার হ্ওয়াতে সরকারের প্রতি আন্দোলন কারিদের খোপ বৃদ্ধি পায়। নিরীহ আন্দোলন কারি ছাত্র-ছাত্রিদের গ্রেফতার, হয়রানি, অপহরণ ইত্যাদির কারণে ছাত্র সমাজ সরকারের উপর আন্দেলনকে র্আও কঠোর করে। সারা দেশে বৈষম্য বিরোধি ছাত্র সমাজের প্লাট ফর্ম হয়ে উঠে গণজাগরণের মঞ্চ হিসেবে। অব্যাহত ছাত্র হত্যা গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রতিবাদের সাথে দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন সমূহ একাত্ততা প্রকাশ করে। আন্দোলনের সমন্¦য়কদের নানা ভাবে হয়রানি গ্রেফতারের সাধারণ শিক্ষার্থি ্ও জনগণ প্রশাসনের উপর খেপে যায়। ফলে আন্দোলন আরও শক্তি সঞ্চয় করে। দীর্ঘ এই সময়ে সরকার ছাত্র আন্দোলনকে দমন করতে কারফিউ জারি করে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনির ব্যাপক উপস্থিতি মাঠে নামিয়ে দেয়। শুরু থেকে ছাত্র অধিকার আন্দোলনকে সরকার খুব বেশি গুরুত্ব না দেয়ার ভুল সিদ্ধান্ত ও খেসারত হিসেবে আজকের এই ভয়াবহ পরিণতি।
সরকার কোটা সংস্কার মেনে নিয়ে ছাত্রদেরকে আলোচনায় বসার আহবান করলেও কয়েকশ ছাত্র হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক বিচার দাবি করছি। শিক্ষা প্রতষ্ঠান খুলে দিতে বলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রি, প্রধান মন্ত্রি এবং একদফা দাবি পুরু সরকারের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করছে ছাত্ররা। ছাত্র হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষুভ, মিছিল, সমাবেশ করেছে। আজ রবিবার থেকে সর্বাত্তক দেশব্যাপি অবরোধ কর্মসূচি চলছে। ব্যাপক ভাবে ধস পাকড হচ্ছে। শত শত আহত হ্ওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে জানা যাচ্ছে। সরকারি দল ও বৈষম্য বিরোধি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম ও ঢাকাতে সরকার দলীয় এবং বিএনপির বাড়িঘরে হামলা পাল্টা হামলা হয়েছে। পুরু দেশে এক অরাজক ও নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি চলছে। মানুষ হাটবাজার, কর্মস্থল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। ইতিমধ্যে জনগনের প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম কয়েক গুন বেড়ে গেছে। খেটে খাওয়া নি¤œ ও মধ্যবিত্ত মানুষ চরমভাবে ভোগান্তির মধ্যে পড়ছে। উদ্ভিগ্ন , উৎকন্ঠা এবং চরমভাবে নিরাপত্তা হীনতায় ভোগছে। এই অবস্থার দ্রুত অবসান চাই। সরকার, রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্য বিরোধি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সুবুদ্ধির উদয় হোক। দেশের সম্পদ ধ্বংস করে আন্দোলন কাম্য নয়। জনভোগান্তি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অসহযোগ জনগনের জানমালের ক্ষতি সাধন রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে জনগণ মূল্যায়ন করে না।
দেশ জনগনের সম্পদ , নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। একটি কর্মসূচি বা দাবি আদায়ের নামে গোটা জাতিকে অচল করে দেয়ার নাম আন্দোলন নয়। এই সব কর্মসূচী দিয়ে বর্তমান সময়ে যখন সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফিতির মধ্যে চরম ভাবে জীবন পার করছে , সেই কঠিন সময়ে জন ভোগান্তি বৃদ্ধির যেকোনো ধরনের অবরোধ, অসহযোগ কর্মসূচি থেকে সকলকে বিরত থাকা উচিত। গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক পন্থায় আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায় জনগণ। সরকার সহ সকলকে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ রক্ষার পথে চলার প্রত্যাশা রাখছে জনগণ।
লেখক : প্রাবন্ধিক