নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সারাদেশে সংঘাত-সহিংসতায় শহীদ হওয়া পরিবারের জন্য মাসিক ভাতা প্রদানের দাবি করেছেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, চট্টগ্রাম শাখা। এ সময় পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার পক্ষ থেকে ৭টি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন পেশার বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ও বিদগ্ধজনদের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় সংস্কার কমিশন’ গঠন করে তার সুপারিশনামার আলোকে সংবিধান, বিচার বিভাগ, প্রশাসনসহ সর্বস্তরে একটি মৌলিক সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
গতকাল শনিবার নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে ঐতিহাসিক ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন এই দাবি করেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতা ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার সদস্য ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নে (সিএমইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে মানবাধিকার আর ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে জগদ্দল পাথরের মত জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছিল। অবৈধ সরকার মেগা প্রজেক্ট, মেগা করাপশন আর মেগা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দেশ ও অর্থনীতিকে এক দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে গেছে। এসবের বিচার অবশ্যই হতে হবে। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচির পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম মোহাম্মদ জানে আলম, অ্যাডভোকেট এনামুল হক, ডা. হারুন, ডা. আব্বাস, অ্যাডভোকেট হাসান আলী, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত, ইঞ্জিনিয়ার আতিকুজ্জামান বিল্লা, জসিম উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার সুমন, অ্যাডভোকেট মফিজউল্লাহ, অ্যাডভোকেট সানজি, ইঞ্জিনিয়ার কিবরিয়া প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা পেশাজীবীরা সুস্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকারের সঙ্গে শুধু বিপ্লবী ছাত্র সমাজ নয়, পুরো দেশ প্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি আর সর্বস্তরের জনগণ তাদের হৃদয় নিংড়ানো সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ, পতিত ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান কিংবা পুনর্বাসনের যে কোনো ঔদ্ধত্য দেশবাসী প্রয়োজনে আবারও মরণপন লড়াইয়ের মাধ্যমে পরাজিত করবেই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জুলাই-আগস্টের মহাবিপ্লবের টর্নেডোতে ছত্রখান হয়েছে হাসিনার স্বৈরাচারের তাসের ঘর। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মরণাস্ত্রের সামনে নিরস্ত্র অবস্থায় বুক পেতে গৌরবময় মৃত্যু আলিঙ্গনের বীরত্বগাঁথা সমসমায়িক বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। এমন অমিততেজ সাহস আর দেশপ্রেম থেকে সংঘটিত বিপ্লব ১৯৭১ এর পর বাংলাদেশ ও তার মানুষের সামনে পুনরায় এনে দিয়েছে মুক্তির মহাসোপান। বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত একটি মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েমের শহীদী স্বপ্ন বাকি মানুষের আকাক্সক্ষাকে জোরদার করেছে। এই স্বপ্ন আকক্সক্ষার আলোকে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, চট্টগ্রাম শাখা থেকে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনাসমূহ জাতির সামনে হাজির করছি-
১. বিভিন্ন পেশার বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ও বিদগ্ধজনদের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় সংস্কার কমিশন’ গঠন করে তার সুপারিশনামার আলোকে সংবিধান, বিচার বিভাগ, প্রশাসন সহ সর্বস্তরে একটি মৌলিক সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ।
২. বিগত ১৫ বছর ধরে গুম, খুনে জড়িতদের এবং সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মানবতা বিরোধী গণহত্যার পরিকল্পনাকারী, আদেশদাতা ও হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা।
৩. প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সংবাদমাধ্যমসহ রাষ্ট্র আর তার সহযোগী অর্গানসমূহে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ কায়েম আর দুর্নীতির হোতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিগত দিনে জেল, জুলুম আর চাকরিচ্যুতির কারণে অমানবিক পরিস্থিতি শিকার ব্যক্তিবর্গকে সসম্মানে পুনর্বহাল ও ক্ষতিপূরণ প্রদান। কারণ আমরা মনে করি, গত ১৫ বছর ধরে হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল ও শক্তি সমূহের অবর্ণনীয় ত্যাগ ও সংগ্রামে সৃষ্ট পটভূমিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরিচালিত কোটা সংস্কার থেকে ১ দফা আন্দোলনে শক্তি সঞ্চার আর অগণিত জনতার সমর্থন পেয়েছে। তাই পূর্বাপরের এ সম্পূরক লড়াইয়ের ত্যাগ স্বীকার যাঁরা করেছেন তাদেরও সমানভাবে মূল্যায়ন করা উচিত।