জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে চট্টগ্রাম

1

সাইফুল্লাহ চৌধুরী, নোয়াখালী থেকে

দাপুটে শুরু হলেও একের পর এক গোল মিসের মহড়া। তার উপর ২০ মিনিটে আত্মঘাতি গোলে পিছিয়ে পড়া! ৬৩ মিনিটে গোলশোধ। অতিরিক্ত ৩০ মিনিট গোলহীন। টাইব্রেকার নামক ভাগ্য পরীক্ষায় অবশেষে জয় চট্টগ্রামকে এনে দিয়েছে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নের সম্মান, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ। সাবাশ চট্টগ্রাম, ব্র্যাবো মনি-নাজু এন্ড কো.।
জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ওয়াসিম অঞ্চলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে চট্টগ্রাম জেলা। গতকাল নিরপেক্ষ ভেন্যু নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলায় চট্টগ্রাম জেলা টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে ফেনী জেলাকে হারিয়ে এ কৃতিত্ব দেখায়। খেলার নির্ধারিত ৯০ এবং অতিরিক্ত ৩০ অর্থাৎ মোট ১২০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র থাকার পর টাইব্রেকারে খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকায় ৮ অঞ্চলের ৮ চ্যাম্পিয়ন দলকে নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা জেলার মুখোমুখি হতে পারে বলে জানা গেছে।
গতকাল শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের অসমতল মাঠে চট্টগ্রাম ও ফেনী সাভাবিক খেলা দেখাতে না পারলেও সমানতালে লড়াই করার চেষ্টা করেছে। এ যেন “কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান”। দু-দল ১টি করে গোল করেছে, ৪/৫ টি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে, দু’দলের কিপারও ৩/৪ টি করে নিশ্চিত গোল রক্ষা করেছে। কিন্তু টাইব্রেকারে গিয়ে কারিশমা দেখিয়েছে চট্টগ্রাম। “শেষ ভালো যার সব ভালো”– প্রবাদটি আরো একবার সত্যে প্রমানিত করে টাইব্রেকারে ৪ শটে ৪ গোল করে বাবু, ফাহিম, জাহেদ ও দীপু শতভাগ সাফল্য পেয়েছে। পক্ষান্তরে ফেনী’র রাব্বী প্রথম শটে গোল করলেও দ্বিতীয়টিতে নুরুদ্দিনের শট সাইডবারে লাগে এবং রাকিবুলের তৃতীয় শট চট্টগ্রামের কিপার হিরো ঠেকিয়ে দিয়ে হিরো বনে যান জয়ের নায়ক। তিনি ম্যান অব দ্য ফাইনাল হন।
এর আগে খেলার ধারার বিপক্ষে ২০ মিনিটে গোলের দেখা পায় ফেনী। তবে গোলটি ছিল আত্মঘাতী। এ সময় ফেনীর লেফট উইঙ্গার রাব্বী’র ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে চট্টগ্রামের ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক আলাউদ্দিন নিজের জালে বল ঢুকিয়ে দেন (১-০)। গোল হজম করার পর চট্টগ্রাম জেলা যেন আহত বাঘের মতো প্রতিপক্ষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। মুহু মুহু আক্রমণে ফেনীর রক্ষণভাগে ফাটল ধরালেও দুরবল ফিনিশিং এর কারণে গোলের দেখা পায়নি।দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে চট্টগ্রাম নব উদ্যমে খেলা শুরু করে। পরিবর্তিত খেলোয়াড় হিসেবে দীপু ও শাহীন মাঠে নামলে খেলার মোড় ঘুরে যায়। ১২ মিনিটে ডানপ্রান্তে সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে দীপু ফাঁকায় বল পেয়ে বাইরে মেরে দেন। ১৪ মিনিটে কর্নার ফেনীর রাব্বি’র হেড অল্পের জন্য লক্ষভ্রষ্ট হয়। ১৮ মিনিটে সমতা আনে চট্টগ্রাম। ডানপ্রান্তে কর্নার লবে ফেনীর বক্সে সৃষ্ট জটলায় সুমন ডানপায়ের জোরালো শটে বল জালে জড়ান (১-১)। এ গোলে উজ্জীবিত চট্টগ্রাম আরো কয়েকটি সুযোগ থেকে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে ফেনীর নুরুদ্দিন কিপারের হাতে মেরে দিলে খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। অতিরিক্ত সময়ে দু দল গোলের চেয়ে রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত ছিল। এরপরও অতিরিক্ত সময়ের ৭ মিনিটে ফেনীর কিপারের ভুলে প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি আসিফ। ১১ মিনিটে চট্টগ্রামের শাহীনও কিপারের হাতে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন। দ্বিতীয়ার্ধের ১১ মিনিটে কর্ণার থেকে ফেনীর নুরুদ্দিনের নিখুঁত হেড চট্টগ্রামে কিপার হিরোর হাতে চলে গেলে খেলা টাইব্রেকারে গড়ায়। যেখানে শেষ হাসি ছিল চট্টগ্রামের। উল্লেখ্য, সিডিএফএ সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল, কোষাধ্যক্ষ দিদারল আলম, যুগ্ম সম্পাদক সালাউদ্দিন জাহেদ, নির্বাহী সদস্য মাহাবুবুল আলম, মাহামুদুর রহমান মাহাবুব, জসিম আহামেদ, সাইফুল আলম খান, কাজী জসিমউদদীন, রায়হান রুবেলসহ বিপুল সংখ্যক ক্রীড়া সংগঠক, সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড় চট্টগ্রাম থেকে এসে খেলোয়াড়দের উতসাহ যোগান।