জাতিসংঘের গুমবিরোধী সনদে বাংলাদেশ

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে জাতিসংঘের গুমবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক সভায় ‘আন্তর্জাতিক কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পার্সনস ফ্রম ফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ শিরোনামের এই সনদে সই করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
এ সময় তিনি বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। গুমের শিকার ব্যক্তিদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবসের এক দিন আগে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলো। খবর বিডিনিউজের।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনকালে ক্রসফায়ারের নামে বিচার বহির্ভূত হত্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেওয়ার পর লাশ উদ্ধার বা নিখোঁজের ঘটনা আলোচনায় ছিল।
এসময় হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন, গোপন বন্দিশালায় দীর্ঘদিন আটকে রাখার ঘটনাও উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) বিরুদ্ধে ‘আয়নাঘর’ নামে গোপন বন্দিশিবির তৈরি করে নির্যাতনের অভিযোগও আসে বিভিন্ন প্রতিবেদনে।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের পরিবারের সদস্যদের ফিরে পেতে দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ‘গুমের’ এসব ঘটনা তদন্ত কমিশন গঠনের কথা বলে আসছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জাতিসংঘের গুম বিষয়ক কনভেনশনে পক্ষভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানানো হয়।
সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ সরকারি বাহিনীর যে সদস্যরা ‘গুম, খুন, নির্যাতনের’ মত অপরাধে যুক্ত ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে।
পরদিনই আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ঘটা ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই কমিশনের কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস এবং মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়ছে, তদন্ত কমিশন আইন, ১৯৫৬ সালের ক্ষমতাবলে এই কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্য কর্তৃক জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের’ জন্য এ কমিশন।
এতে বলা হয়, জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনাসমূহের বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করা এবং এতদ্বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা; জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাহাদের আত্মীয়- স্বজনকে অবহিত করা এবং জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে এই কমিশন।
এসব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংশ্লিষ্ট যেকোনো কার্যক্রমও এই তদন্ত কমিশন চালাতে পারবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
কমিশনকে তদন্তকাজ সম্পন্ন করে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।