জাগ্রত হোক বিশ্ববিবেক

2

হৃদয়ে সবার প্যালেস্টাইন। ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরাইলের বর্বর হামলা অব্যাহত। এমন পরিস্থিতিতে গাজাবাসীর অনুরোধে সমগ্র বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসন ও অমানবিক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জনগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন একযোগে প্রতিবাদমুখর। দেশে গতকাল ৭এপ্রিল পালিত হলো ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’ কর্মসূচি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকল ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। গাজায় অমানবিক গণহত্যার প্রতিবাদে দেশের আরো বিভিন্ন সংগঠন পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহবান জানিয়েছে নিপীড়িত গাজাবাসী। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বন্ধ রাখার আহবান জানিয়েছে তারা।
গাজাবাসীর এই আহবানে সাড়া দিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ইংরেজি অক্ষরে ছবিতে লেখা রয়েছে, ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপস’ অর্থাৎ গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, সংহতি জানাই। আগামিকাল ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটে যোগ দিন’।
সেদিন বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনে আহবান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এক ফেসবুক পোস্টে এ তরুণ নেতা লিখেছেন, মানুষ ও মুসলিম হিসেবে এসব (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অফিস-আদালত) বন্ধ রাখাতেই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় বরং দলমত নির্বিশেষে সারাদেশের ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা হয়তো এই মুহূর্তে আমাদের গাজার ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারবো না। কিন্তু তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে নিজ ভূমির রাজপথে অন্তত নামতে পারবো। তিনি বলেন, এনসিপি, বিএনপি জামায়াত বা কোনো (রাজনৈতিক) দলের ব্যানারে নয় বরং দল-মত নির্বিশেষে ‘বাংলাদেশ’ ব্যানারে আমরা রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। খুনি, রক্তপিপাসু নেতানিয়াহুর বিপক্ষে স্লোগান দিতে পারি। প্রত্যেক জেলায় ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন মিলে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচি পালিত হোক। ৭ এপ্রিল কোনো দল, মত, পক্ষের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশের পক্ষ হতে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষে হোক।
একই আহবান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। নিজের ফেসবুকে পেজে তিনি লিখেছেন, গাজার প্রতি বৈশ্বিক সংহতির অংশ হোন। আগামিকাল সোমবার, ৭ এপ্রিল ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’- এই কর্মসূচি সফল করুন।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় দক্ষিণের খান ইউনিসে এক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তরের গাজা সিটিতে দুই শিশুও নিহত হয়েছে। গাজার খান ইউনিসে এক ভবনে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বোমা হামলায় কমপক্ষে আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন গড়ে ১০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা বা আহত করেছে। এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্যাতিত গাজাবাসীর জন্য সমগ্র বিশ্ববাসীকে আর্থিক ও সাহায্যের হাত বাড়ানো খুবই জরুরি। আমরা বিশ্ব হতে সবধরনের জুলুম নির্যাতন ও দখলদারিত্বের অবসান আশা করি।