‘জলাবদ্ধতা প্রকল্পে প্রচুর বিনিয়োগ করেও সুফল পায়নি জনগণ’

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, কোনো প্রকল্পে কিংবা ব্যবসায় যদি সুফল না আসে, সেখানে কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না। পূর্বে জলাবদ্ধতা প্রকল্পে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেও তার সুফল জনগণ পায়নি। সে কারণেই এ প্রকল্পে নতুনভাবে অর্থ বরাদ্দ পেতে নানা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।
গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় আয়োজিত নগরীর সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে এক মতবিনিময় সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের একটি বড় সমস্যা, সে জন্য প্রধান উপদেষ্টা এ সমস্যা সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য আমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছেন। আমরা বিভিন্ন খাল পরিদর্শন করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে কি করণীয় সে বিষয়ে আপনাদের মতামত নিয়েছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি জমি পুনরুদ্ধার ও আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা করা, পরিচ্ছন্নতা কর্যক্রম পরিচালনার জন্য জনবল সংকটসহ আইনি জটিলতা কিভাবে সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এর দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করবো।
বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক, পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে আপনাদের মতামত গ্রহণ করতে। আপনাদের বুদ্ধিদীপ্ত মতামত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। আইনি জটিলতা, অর্থ সংস্থানের সমস্যা ও ভূমি অধিগ্রহণে যে সমস্যা রয়েছে, তা নিরসনে আমরা একটা সমন্বিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাই। আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছি।
পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর খালগুলোকে তার স্বাভাবিক গতিপথে রাখতে হবে। আপনারা এখান থেকে অল্প একটু দূরে এই নগরীর পাশেই পটিয়াতে যাবেন, দেখবেন যে সেখানে ৫ গ্রামে পানিই নাই। এই খালগুলো আপনারা ব্যক্তি নামে দিয়ে দিচ্ছেন, আবার আমরা উচ্ছেদ করে দিচ্ছি, আবার ওদেরকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি। আবার তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকারকে অধিগ্রহণ করে নিতে হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে কিন্তু ভূমি প্রশাসনকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা উচিত। খাল দখলকারীদের আইনের আওতায় এনে এদের কঠিন জবাবদিহির মুখোমুখি করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় আগামী চার মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর জলবদ্ধতা নিরসনে কর্ম প্রক্রিয়া উপস্থাপন করেন নদী বিশেষজ্ঞ ফাইয়েজ আহমেদ তাইয়েব। সভায় বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান, জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামস এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
সভায় চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক সিকান্দার খান, চট্টগ্রাম ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম, আমার দেশ পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুর প্রধান জাহিদুল করিম কচি, স্থপতি জেরিন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি এসএম নুরুল হক, রাজনীতিবিদ এস এম ফজলুল হক প্রমুখ।