জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার তাগিদ

2

দেরিতে হলেও বীর প্রসবিনী চট্টগ্রাম সফর করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদেষ্টা। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প পরিদর্শন এবং প্রকল্পটি দ্রæত শেষ করে চট্টগ্রামকে কীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেয়া যায়, তা সরেজমিনে দেখার জন্য ওই তিন উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সফরে আসছেন বলে আমরা জানতে পারি। উপদেষ্টারা হলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক। উপদেষ্টা আদিলুর রহমানও আসার কথা ছিল, রাষ্ট্রীয় কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে হয়ত তিনি আসতে পারেন নি। এরপরও তিনজন উপদেষ্টার অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রামে আগমন করায় চট্টগ্রামবাসী আনন্দিত, উদ্বেলিত। বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলোর চট্টগ্রাম থেকে একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও মেয়র থাকলেও চট্টগ্রামের সমস্যা নিয়ে একসাথে বসছেন-এমন কোন দৃষ্টান্ত আমাদের কাছে নেই। সেই তুলনায় অরাজনৈতিক সরকারের এ আমলে তিন উপদেষ্টা একসাথে চট্টগ্রাম সফর চট্টগ্রামবাসীকে আশাবাদী করবে। এ উদ্যোগের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত আছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। দৈনিক পূর্বদেশসহ সহযোগী সবকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত ১৮ জানুয়ারি তিন উপদেষ্টা চট্টগ্রামে এসেই নগরীর বহদ্দারহাটে খননকৃত বারইপাড়া খাল খনন পরিদর্শনে যান। এসময় উপদেষ্টাত্রয় বহদ্দারহাট খাল খনন প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ প্রকল্পটি সম্পন্ন করার উপর জোর তাগিদ দেন। এরপর উপদেষ্টারা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এর অধিনে পরিচালিত জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্পের বেশকিছু অংশ পরিদর্শন করেন। এসময় প্রকল্প বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্বে সমন্বয়ের উদ্যোগের উপর জোর দেন তিন উপদেষ্টা। প্রকল্পগুলো পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, জলাবদ্ধতা নিয়ে কী করা যায় সেটা দেখতেই আমরা চট্টগ্রামে এসেছি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে কতটুকু করা যায়, যাতে একটা দৃশ্যমান উন্নতি হয় সেজন্য রোববার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আমরা সবার সঙ্গে বসবো। সেখানে একটা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করবো। এ কর্মপরিকল্পনা সব সংস্থাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, অন্যবারের উদ্যোগের সঙ্গে এবারের উদ্যোগের পার্থক্য রয়েছে। তা হচ্ছে, যেসব সংস্থা এ কাজগুলো করতে ব্যর্থ, তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এ কাজটা হয়নি, এ কারণে হয়নি- এসব অজুহাত শোনা হবে না। ব্যর্থতার যে দায়দায়িত্ব সেটা তাদের নিতে হবে। আমরা একটা দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখতে চাই। না হলে এসব প্রকল্পের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, আমরা ভেবে দেখবো। মার্চের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য কিছু কাজ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, আগের কাজের হিসাব দিতে হবে। আগের কাজগুলো ফলপ্রসূ হয়েছে কি না দেখতে হবে। আগের কাজ বাদ দিয়ে আমরা খালি প্রকল্পই করে যাবো, ওয়াল বানিয়ে যাবো এটা তো হতে পারে না। আমরা মার্চের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য একটা টার্গেট সংস্থাগুলোকে দিয়ে দেবো। দেখবো উনারা কতটুকু অর্জন করতে পারেন, যদি না পারেন, তাহলে কেন পারলেন না, সেটার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং সেটা আমরা বিশ্লেষণ করে দেখবো। এসময় সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে শুধু সিটি করপোরেশন এবং সিডিএ নয়-ওয়াসা, পোর্ট, পানি উন্নয়ন বোর্ড আছে। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়েই আগামীকাল বসবো। এটা এককভাবে কেউ সমাধান করতে পারবে না। সবগুলো সংস্থা যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে আমরা একটা উদ্যোগ নেবো। বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প বিষয়ে এ উপদেষ্টা বলেন, এই প্রকল্পটা ১১ বছর ধরে শুরু হয়েছে। এটা শেষ হয়ে যাওয়া দরকার ছিল। এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, অনেকগুলো মামলা আছে। মামলার তালিকাগুলো আমরা নেবো। মামলাগুলোর বিষয়ে কী করা যায়, সেটা দেখবো। জমি অধিগ্রহণের একটি বিষয় আছে। কোথায় কোথায় জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, সেটাও আমরা দেখবো। এ জন্য আমরা জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে কথা বলবো। এসময় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনে সরকার নতুনভাবে চিন্তা করবে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া প্রকল্পগুলো যদি সমস্যার সমাধান করতে না পারে, তাহলে সেগুলো নিয়ে সরকার নতুনভাবে চিন্তা করবে।
এসময় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম অভিন্ন কথা বলেন। চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এ শহর আমাদের সবার। যত সংস্থা আছে, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এ শহরকে বাসযোগ্য করতে পারি, সেই চেষ্টা আমার পক্ষ থেকে অবশ্যই থাকবে। উল্লেখ্য যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নিতে আসেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আদিলুর রহমান খান ও ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক। এ টিম এরই মধ্যে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া মেগাপ্রকল্পসহ সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং শুরু করেছেন। আমরা অন্তর্বর্তীকালনি সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আশাকরি, প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম তদারকি ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হলে, চট্টগ্রামের দুঃখ জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে চট্টগ্রামবাসী কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।