জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শীতকালে প্রকৃতির বিরূপতা

0

মানুষ প্রকৃতির উপর জুলুম করছে নানা ভাবে। যার কারণে দেশ ও বিশ্বের আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তিত হতে দেখা যাচ্ছে। বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। বাড়ছে বিশ্ববাসীর বিড়ম্বনা। ক্যালেন্ডারের পাতায় পৌষ পেরিয়ে মাঘের যাত্রা শুরু হয়েছে চার দিন আগে। ঋতুচক্রের হিসাবে এখন শীতের ভরা যৌবন। কিন্তু আবহাওয়ার বিরাজমান অবস্থায় দেখা মিলছে না হাঁড়কাঁপানো কনকনে শীতের। গ্রামীণ জনপদে কুয়াশার চাদরে মুড়ে খানিকটা অনুভূত হলেও শহুরে জীবনে তো শীত নেই বললেই চলে। তাই ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ প্রবাদটি যেন কথার কথাতে পরিণত হতে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে শীতকালও ক্রমশঃ প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার শিকার হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গতকাল শনিবার থেকে তাপমাত্রা কমে একটানা পাঁচ-ছয় দিন শীত কিছুটা বেশি অনুভ‚ত হতে পারে। অবশ্য সারাদেশের মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়। গত দু’দিন ধরে সেখানে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আবারও নেমেছে ‘সিঙ্গেল ডিজিটের’ ঘরে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপক‚লীয় ও প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদ অবশ্য মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে। দুপুর গড়াতেই ঘন কুয়াশা সরিয়ে দেখা দেয় সূর্যের কিরণ।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন দিন ও রাতের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমার প্রবণতা নেই। কখনও কিছুটা বাড়তে পারে, আবার কখনও কমতে পারে। তবে শনিবার থেকে দিনের তাপমাত্রা কমার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফলে তখন শীতের অনুভ‚তি বাড়তে পারে। কোনও কোনও অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহও হতে পারে। তবে শৈত্যপ্রবাহ সম্পর্কে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। দেশের উত্তরাঞ্চলসহ উপক‚লীয় এলাকায় কুয়াশা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। এবারের শীত মৌসুমের শুরুতে গত বছরের ডিসেম্বরের একেবারে শেষ দিকে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। কয়েক দিন থাকার পর তা আবার কমে আসে। মাঝে কয়েকদিন ঘন কুয়াশাও ছিল। এরপর শীত কমেছে আবার বেড়েছে। তিন দিন মাঝারি থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর তাপমাত্রা ফের বাড়তে থাকে। এ বছর এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়নি। মাঝে এক দিন শুধু তেঁতুলিয়ায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, শনিবার থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে। তবে দু’দিন পর তাপমাত্রা আবার বাড়তে পারে। আবার শনিবার থেকে তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। তখন তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা কম। ২০ জানুয়ারির পর আবার একটি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবার শীতের তীব্রতা কমে গেছে। দেশের অভ্যন্তরে শিল্পায়ন বেড়েছে। এসব কারণে আবহাওয়ায় অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, সাধারণত জানুয়ারি আমাদের দেশের সবচেয়ে শীতলতম মাস। এই সময়ে এক থেকে তিনটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়, এবার ব্যতিক্রম। এবার মাত্র একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। ডিসেম্বরে তাপমাত্রা গতবারের থেকে অনেক বেশি ছিল। সাধারণত নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় হয়। ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় না। এ বছর ব্যতিক্রম দেখা গেছে।
এদিকে রাজধানী ঢাকার মত ক্রমান্বয়ে শীতহীন নগরীতে পরিণত হচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামও। গত এক দশকে বছরে ঢাকার মত চট্টগ্রাম শহরেও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে মাত্র একবার। আর আশপাশের এলাকা থেকে তাপমাত্রা থাকছে তিন থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। রাতে যে শীত নামে, তা শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে নামছে না। গত তিন দশকে গিরিকুন্তলা চট্টগ্রামের সবুজ এলাকা ও জলাভ‚মি কমে গিয়ে বেশির ভাগ এলাকা কংক্রিটে ঢেকে গেছে। ফলে সেখানে দিনের বেলা সূর্যের তাপ আসার পর তা রাতেও জমে থাকছে। এতে রাতের তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী তিনদিনের জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পাড়ে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং দিনের তাপমাত্রা সাামান্য হ্রাস পেতে পারে। বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় সামান্য পরিবর্তন হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঋতু চক্রের চরিত্র ঠিক না থাকলে প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক থাকে না। প্রকৃতির জগতে নানা বিপর্যয় দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়ে জনজীবনে। স্বাভাবিক ঋতুচক্র ঠিক রাখতে প্রকৃতি ধ্বংসের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে।