জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধী টিকা ক্যাম্পেইন শুরু কাল

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশে ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগী। হিউম্যান প্যাপিলামো ভাইরাসের মাধ্যমে এই রোগে আক্রান্ত হয় নারীরা। তবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা না গেলেও জরায়ুমুখ ক্যান্সার টিকাদানের মাধ্যমে সারিয়ে ফেলা সম্ভব। সে লক্ষ্যে জেলায় আগামিকাল ২৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) থেকে চট্টগ্রাম মহানগর ও ১৫ উপজেলায় জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে মাসব্যাপী টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আয়োজিত সাংবাদিক ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএইচ নাওশাদ খান, ডা. এফএম জাহিদুল ইসলাম।
সিভিল সার্জন বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের মধ্যে একটি বৃহত্তর অংশ জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। নারীদের এ ক্যান্সার প্রতিরোধে আমাদের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু আসলে এতে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আর যদি কেউ অসুস্থ হয়েও থাকে সে ক্ষেত্রে আমাদের মেডিকেল টিম প্রস্তুত আছে। আশা করছি এ কার্যক্রম আমরা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবো।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও আগামিকাল থেকে শুরু হচ্ছে টিকা দান কর্মসূচি। নগরীর খাস্তগীর স্কুলে টিকাদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠিক উদ্বোধন করা হবে। এতে সরকারের স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
চট্টগ্রামের ৪ হাজার ৩৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৮৯ জন কিশোরী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহির্ভ‚ত ১০ হাজার ২১৯ কিশোরীকে এ টিকা দেওয়া হবে। সপ্তাহে ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ১৮ দিন এ কার্যক্রম চলবে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হচ্ছে।
এদিকে কিশোরীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ টিকা এইচপিভি প্রথম ডোজ প্রদান কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে অ্যাডভোকেসি সভা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। গতকার মঙ্গলবার চসিক মেমন জেনারেল হাসপাতাল মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইমাম হোসেন রানা’র সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রাম নগরীতেও আগামিকাল ২৪ অক্টোবর হতে ১০ দিনব্যাপী জরায়ুমুখ ক্যান্সর টিকা প্রথম ডোজ এইচপিভি কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এর আওতায় নগরীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত ৫ম থেকে ৯ম শ্রেণিপড়ুয়া ছাত্রীদের এই টিকা দেয়া হবে এবং পরবর্তীতে মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে ৮ দিন ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয় বহিভর্‚ত কিশোরীদের টিকা প্রদান করা হবে। কোনো কিশোরী যাতে টিকা গ্রহণে বাদ না পড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহŸান জানান। কারণ এইচপিভি টিকা কিশোরী ও মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় বর্হিভ‚ত কিশোরীদের ১ লাখ ৩৬ হাজার জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা প্রথম ডোজের এইচপিভি প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চসিকের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরীন ফেরদৌসী, শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা আক্তার, ডা. সরোয়ার আলম, ডা. প্রসূন রায়, ডা. হোসনা আরা বেগম, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ডা. তপন চক্রবর্তী, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ওয়াহীদুল আলম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ইউনিসেফ চট্টগ্রামের হেলথ অফিসার দেলোয়ার হেসেন। উপস্থিত ছিলেন ডা হাসান মুরাদ চৌধুরী, ডা. সূমন তালুকদার, ডা. আকলি মাহমুদ নাফে, ডা. জুয়েল মহাজন।