মনিরুল ইসলাম মুন্না
নগরীর লালদীঘি ময়দানে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনের বৈশাখী মেলা। আজ (শুক্রবার) বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা। খেলার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার মেলা ও খেলা প্রাঙ্গন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
দেখা গেছে, বলী খেলাকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হয়েছে বিশালাকৃতির একটি মঞ্চ। যার ভিত্তি গড়া হয়েছে ১৫৮টি বাঁশের খুঁটির ওপর। ২০ বাই ২০ ফুটের এই মঞ্চে কাঠের তক্তার ওপর দেওয়া হয়েছে বালির আস্তরণ, যেখানে বলীরা লড়বেন ‘চ্যাম্পিয়ন’ মর্যাদার জন্য।
এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এরই মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছেন প্রায় ১৫০ জন বলী। ইতোমধ্যে মঞ্চ নির্মাণে ব্যস্ত শ্রমিকদের দৃশ্য দেখা গেছে মাঠের দক্ষিণ পাশে। কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে ৭-৮ জন শ্রমিক টানা ৫ দিন ধরে কাজ করছেন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি চলছে।
মঞ্চ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা মো. মনির হোসেন জানান, ৫ দিন যাবত প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ জন করে শ্রমিক এই মঞ্চ তৈরির কাজ করছেন। আশা করি আজ (বৃহস্পতিবার) রাতের মধ্যে পুরো মঞ্চ প্রস্তুত হয়ে যাবে।
এদিকে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত লোকজ পণ্য আসতে শুরু করেছে বৃহত্তম এই বৈশাখী মেলায়। লালদীঘির আশপাশের এলাকায় পসরা সাজিয়েছেন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা দোকানিরা। ফুলের ঝাড়–, হাতপাখা, বেতের তৈরি খাঁচা কিংবা মাটির তৈরি তৈজসপত্র সবকিছুই সাজানো শুরু হয়েছে থরে থরে। পোড়ামাটির ফুলের টব, জগ, গ্লাস, শো-পিস, হাতপাখা, শীতল পাটি, দা, বঁটি, খেলনা, টমটমের গাড়ি, শিমুল তুলা, সংসারের টুকিটাকি থেকে শুরু করে ফলসহ গাছের চারা বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেপারী, দোকানি ও গৃহস্থরা। আগামীকাল অনুষ্ঠেয় জব্বারের বলী খেলাকে কেন্দ্র করে বসা এ মেলা এবার যেন একটু আগেভাগেই জমজমাট হয়ে উঠেছে। গত বুধবার থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছেন সারা বছর ধরে মেলার প্রতীক্ষায় থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।এবার আন্দরকিল্লা থেকে কোর্ট বিল্ডিং পর্যন্ত প্রধান সড়কে বৈশাখী মেলার স্টল না বসানোর পরামর্শ দিলেও ফুটপাত ও সড়কের কিছু অংশে ভাসমান দোকান বসতে দেখা গেছে।
অপরদিকে ঢাকা থেকে আসা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, মাটির তৈরি তৈজসপত্র নিয়ে ৪ দিন আগে চট্টগ্রামে এসেছি। আমি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার জিনিস এনেছি। জানি না বিক্রি করতে পারবো কি না।
সিলেট, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, সাভার, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা তৈজসপত্র নিয়ে এসেছেন মেলায়।
বিক্রেতাদের শঙ্কা ঝড়-বৃষ্টি ও চাঁদাবাজি নিয়ে : মেলায় আসা ব্যবসায়ীরা কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি ও নানা স্তরের চাঁদাবাজি নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন। তাদের মতে, দূর থেকে আমরা এসেছি। কিন্তু এসব যদি হয়, তাহলে আমরা ব্যবসা করতে পারব না।
মেলায় আসা খেলনা বিক্রেতা হাসান বলেন, ঝড়-বৃষ্টি নিয়ে খুব ভয়ে আছি। এমনিতে আমাদের মূল সড়কে বসতে দেয়া হচ্ছে না। তার উপর বৃষ্টি হলে ব্যবসা একদম মন্দা যাবে।
আরেক বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, আগের বার মেলায় আমাদের কয়েক দফায় চাঁদা দিতে হয়েছিল। এবারে কেমন সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। তাই এটা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
বলীখেলার মূলপর্বের উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ। বিজয়ী বলীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিশেষ অতিথি থাকবেন বলীখেলার পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের কর্মকর্তারা।
বলীখেলা আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব আবদুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল জানান, প্রতিবছরের মত এবারও ১১ থেকে ১৩ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হবে বৈশাখী মেলা।
তিনি বলেন, আবদুল জব্বারের বলীখেলা চট্টগ্রামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। জব্বারের এ বলীখেলা এখন চট্টগ্রামবাসীর প্রধান বিনোদনের অংশ। তাই এখানে ঐতিহাসিক বলীখেলা ও বৈশাখী মেলাকে ঘিরে জনসাধারণ ও যানবাহনের নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য আন্দরকিল্লা থেকে কোর্ট বিল্ডিং পর্যন্ত প্রধান সড়কে মেলার স্টল না বসানোর পরামর্শ দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, বৈশাখী মেলাকে ঘিরে স্টল ও দোকানের স্থান বিক্রি, দখল চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মরহুম আবদুল জব্বারের পরিবার সবসময় প্রতিবাদ করে আসছে। এবারও দোকান-বিক্রি ও দখল, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে কয়েক দফা বৈঠকে জানানো হয়েছে।