জন্মগত জোড়া লাগানো শিশুর সফল অপারেশন

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত জন্মগত জোড়া লাগানো (কনজয়েন্ট) শিশুর সফল অপারেশন সম্পন্ন করেছে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগ। গত ৬ মে হাসপাতালে রিয়াদ জাফর চৌধুরী ও সুরাইয়া ইসলাম দম্পতির জোড়া যমজ বাচ্চার বাবা-মা হন। জন্মের ২৩ ঘণ্টার মধ্যে সফল অপারেশনের মাধ্যমে জোড়া লাগানো যমজ নবজাবকদ্বয়কে আলাদা করা হয়। ৩ ঘণ্টার জটিল অপারেশনে ৮ জন বিশেষজ্ঞ সার্জনসহ ১৮ জনের টিম অংশ নেন। এটি চট্টগ্রামে প্রথম এবং বাংলাদেশে ৬ষ্ঠ যমজ জোড়া বাচ্চা সার্জারি। জন্মের সময় ওজন ছিল যথাক্রমে ৯৭৩ ও ১০৪৫ গ্রাম, এখন ১২৫৫ ও ১৩৫০ গ্রাম। গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহেদ মালেক বলেন, চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত জন্মগত জোড়া লাগানো (কনজয়েন্ট) যমজ শিশুর সফল অপারেশন সম্পন্ন করেছে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল। এটি আমাদের খুবই আনন্দের বিষয়। এটি খুবই জটিল অপারেশন, অপারেশনের বাচ্চা দুটি সুস্থ আছে। চট্টগ্রামে বিদেশি মানের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বাচ্চা দুটি সুস্থভাবে বাঁচতে পারলে আমাদের সে প্রচেষ্টা সফল হবে বলে মনেকরি।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিদ নবী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। জন্মগত জোড়া লাগানো শিশুর সফল অপারেশন চট্টগ্রামের জন্য একটি মাইলফলক। আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে। টিমের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে আমাদের উপর আস্থা রাখায় বাচ্চার বাবাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শিশু সার্জারি বিভাগের সার্জন ডা. আদনান ওয়ালিদ বলেন, এটি আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। বাচ্চা দুটির শরীর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো (হার্ট, লিডার, ফুসফুস ইত্যাদি) আলাদা ছিল। বুকের দিকে চামড়া জোড়া লাগানো ছিল। সেটি আমরা অপারেশন করে আলাদা করেছি। জন্মের পর বাচ্চার অবস্থা দেখে আমরা ৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে টিম গঠন করি। বাচ্চার পরিবার সর্বাত্বক সহযোগিতার ফলে বিষয়টি আরও সহজ হয়ে উঠে আমাদের কাছে।
গাইনোকোলজি বিভাগের সার্জন ডা. রেশমা শারমিন বলেন, গাইনোকোলজি বিভাগের ভর্তির পর যমজ বাচ্চার পজিশন দেখে সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিই। যমজ বাচ্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে একটি বাচ্চা বের করে আনি। পরবর্তীতে ২য় বাচ্চাটি বের করি। কিন্তু এই বাচ্চার ক্ষেত্রে প্রথম বাচ্চার বের করতে গিয়ে দেখতে বাচ্চাদুটি জোড়া লাগানো। বিষয়টি আমরা বাচ্চার পরিবারের সাথে শেয়ার করি। অবশেষে আমরা বাচ্চার দুটির সফল ডেলিভারি করতে সক্ষম হই।
নবজাতকের বাবা রিয়াদ জাফর চৌধুরী বলেন, গর্ভধারণের ২৮ সপ্তাহ জানতে পারি যমজ বাচ্চার বাবা হতে যাচ্ছি। জন্মের পর জানলাম বাচ্চাদুটি জোড়া লাগানো। আমরা অপারেশনের জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। এই হাসপাতালে ও এমডি ও চিকিৎসকরা আমাকে সাহস দিলেন। ওনার অপারেশন করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করলেন। অবশেষ সফলভাবে অপারেশন সম্পন্ন করলেন। জটিল অপারেশ ছিল। এক্ষেত্রে শিশুদের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। আমাদের বাচ্চাগুলো আল্লাহর রহমতে ভালো আছে। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
নবজাতকদ্বয়ের মা সুরাইয়া ইসলাম বলেন, আমি যখন গর্ভধারণ করি, তখন আমি জানতাম আমার সিঙ্গেল বেবি হবে। পাঁচ মাস পর আমি যখন অ্যানোমলি স্ক্যান (আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা) করাতে যাই, তখন ডাক্তার জানালেন-এটা টুইন বেবি (জমজ বাচ্চা)। আমি তো আসলে একটা বাচ্চা প্রত্যাশা করেছিলাম, তখন আমার ব্যাপারটা খুশিরই ছিলো। ছয় মাস পর পুনরায় আল্ট্রা করার পর ডাক্তাররা জানালেন বাচ্চা জোড়া লাগা হতে পারে। এখানে একটা প্রশ্ন রেখেছেন ডাক্তার। জোড়া লাগা বাচ্চার বিষয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না। এই ব্যাপারে আমি কিছু জানতাম না। পরে গুগল করে দেখলাম, তখন আমার খুশিটা কোত্থেকে কি হয়ে গেল, আমি নিজেও জানি না। পরে আমি পুনরায় আরেকজন ডাক্তারকে দিয়ে আল্ট্রা করালাম, ওনি একই বিষয় সাসপেক্ট (অনুমান) করেছেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে-আমার প্রেগনেন্সির প্রথম থেকে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের ডাক্তার রেশমা সুলতানা ম্যাডামের চিকিৎসায় ছিলাম। ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করলাম, ম্যাডাম নিজেও একটু আপসেট ছিল। ম্যাডাম আমাকে অভয় দিলেন, ওনি আমার সাথে থাকবেন। পরে শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. আদনান স্যারের সাথে পরিচয় হলো এখানে। আপনারা জানেন, জোড়া লাগা বাচ্চাদের অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। আমার বাচ্চাদের আল্লাহর রহমতে সেই অবস্থায় পড়তে হয়নি। তবে আমাদেরকে অনেকে অনেক কথা বলেছেন, দেশের বাইরে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। পরে আমরা অ্যাপোলো ইমপেরিয়ালের ওপর আস্থা রাখি। আমার বাচ্চার যেদিন ডেলিভারি হলো-তার একদিন পর সার্জারিও হলো।