জনসচেতনতার বিকল্প নেই

1

বর্ষা মানেই ডেঙ্গু রোগের হাতছানি। দেশে কয়েকবছর ধরে মশাপ্রবাহিত রোগ ডেঙ্গু আর চিকনগুণিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে অতিরিক্ত। বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। তবে এবার ডেঙ্গুর সাথে করোনার সংক্রমণের কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ২০২০ সালে এপ্রিল-মে মাসে করোনার প্রাদুর্ভাবে যে মহামারি পুরো বিশ্বকে ক্ষত-বিক্ষত করেছিল সেই করোনা আবারও ফিরে আসার খবর আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। তবে করোনার সাথে হাতেহাত রেখে ডেঙ্গুর আগমনটা এখনকারের মত অস্বস্তিকর বলা যায়। এ ডেঙ্গু আষাঢ়ের আগেই এসেছে বৈশাখের মাঝামাঝিতে। সাথে কোথাও কোথাও চিকনগুনিয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩২৪ জন। এছাড়া এ বছর জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে ১৭ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩০ জন। ডেঙ্গু নিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৪৬৬ জন। নানা কারণে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন বছরজুড়েই লক্ষ করা যায়। বস্তুত মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশে এডিসের ঘনত্ব বাড়ছে। এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে এবার এডিস মশার বংশবৃদ্ধির হার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি এডিস মশার সন্ধানে অনুসন্ধান চালিয়েছেন একদল গবেষক। ঈদুল আজহার ছুটির আগের দুই সপ্তাহ ধরে চলা এ জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১৫ বাড়ির মধ্যে ৭ থেকে ৮টি বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এডিসের লার্ভার এমন ঘনত্ব উদ্বেগজনক। এদিকে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রভাব বৃদ্ধির খবর দিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পুরোপুরি সচেতন আছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা। তারা বলছেন, সিটি মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নগরীকে ক্লিন, গ্রিন ও হেরদি সিটিতে রুপান্তর করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি বাস্তবায়নের নিমিত্তে প্রতিদিন নগরীর খাল, নালা, নর্দমাগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান চলছে। নিয়মিত মমকনিধন কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি সিডিএর বাস্তবায়ানাধিন জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কার্যক্রমও সমন্বয় করছেন। সঙ্গতকারণে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এবাওে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রভাব অনেক কম।
অন্য এক জরিপে দেখা যায়, চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার চেয়ে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি। জরিপ হয়েছিল শীতের সময়। ওই সময় এডিসের উপস্থিতি কম থাকারই কথা। কিন্তু এরপরও এডিসের লার্ভার এ উপস্থিতি বরগুনায় ছিল বেশি। গবেষকরা লক্ষ করেন, বরগুনাসহ বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত উপকূলীয় এলাকায় বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির পানি বড় মটকা বা প্লাস্টিকের তৈরি পাত্রে ধরে রাখা হয়। তাদের ধারণা, বর্ষা মৌসুমের পানি উন্মুক্ত অবস্থায় রাখায় সেখানে এডিসের বংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট মোকাবিলায় দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হয়। এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা না হলে ডেঙ্গু বিস্তারের আশঙ্কা থেকেই যায়। যেহেতু বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে, সেহেতু ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে। এ সুযোগে জমে যাওয়া পানিতে এডিসের বংশ বিস্তারের বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। অথচ এ মশা নির্মূলে কর্তৃপক্ষের কার্যকর ব্যবস্থাপনা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। চলতি জুনের প্রথম ১৬ দিনে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আগের মাসের আক্রান্তের চেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে আগামী জুলাইয়ের শেষদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেতে পারে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অনেকের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসছে। কেন এমনটি হচ্ছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা হওয়া দরকার। ২০২৩ সালে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলার পরও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ কেন জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে বছরব্যাপী মশক নিধন ও অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা চট্টগ্রামে মশার ওষুধের বিকল্পের কথা শুনে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে চসিকের সাবেক মেয়র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাবনাও নিয়েছিলেন, যা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাবনা আর আলোর মুখ দেখেনি। আমরা মনে করি, বর্তমান মেয়র তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে যেভাবে চট্টগ্রামকে পরিবেশবান্ধন ও হেলদিসিটিতে রূপান্তর করতে চাচ্ছেন, তাতে মশার ওষুধের গুণগত মান বৃদ্ধির বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মশা নির্মূলে সফল হবেন। এছাড়া ডেঙ্গুসহ করোনা থেকে রক্ষা পেতে হলে সকলকে সচেতন ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।