জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা

2

লোহাগাড়া প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। প্রতিদিন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি খোলা থাকলেও কোনো স্বাস্থ্য কর্মীর দেখা পায় না রোগীরা। চিকিৎসক আসবে- এমন আশায় কয়েকঘন্টা অপেক্ষার পর নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয় রোগীদের।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের নয়া পাড়া এলাকায় অবস্থিত টিনের চালের জরাজীর্ণ পুরনো ভবন পদুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ রোগী থাকলেও নেই কোনো চিকিৎসক ও জনবল। প্রতিদিন বাহিরের দরজা খোলা রাখা হলেও ভেতরে চিকিৎসকের শূণ্যতা এবং অন্যান্য রুমে ঝুলে থাকে তালা। স্বাস্থ্যকর্মী এবং ওষুধ সরবরাহ না থাকায় ফ্রি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা। অনেক সময় রোগী গেলে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধও পাওয়া যায়। সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ফ্রি চিকিৎসাসহ ওষুধের আশায় প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এভাবেই বসে থাকেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দরিদ্র ও অসহায় রোগীসহ বয়োবৃদ্ধা মানুষ। উপজেলার একাধিক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমন পরিস্থিতি বিরাজমান। ফলে বিনামূল্যে সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা।
পদুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা লায়লা বেগম নামে এক নারী বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসছিলাম চিকিৎসাসেবা নিতে। এসে দেখি কোনো ডাক্তার নেই। এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম খাঁতুন বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঔষধ আছে, তবে কোনো ডাক্তার পেলাম না। যদি ডাক্তার থাকত, চিকিৎসা সেবা নিতে পারতাম।
শিক্ষার্থী সৈয়দ হোসেন মানিক বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থাকার পরও জনগণ সেবা পাচ্ছে না, এটা দুঃখজনক। স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার অভাব রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শব্বির আহমদ বলেন, এতো পুরোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকা অনেক দুঃখজনক। আমি অতীতে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাকে বার বার অবগত করেছি, তবে কোনো সাড়া পাইনি। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনেক রোগী হয়, তবে চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এলাকার মানুষ ডাক্তার দেখাতে পারেনা। দ্রæত সময়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন হলেও চিকিৎসক দিলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, এখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকের বদলি হওয়ায় এবং টাইফয়েড ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নের কারণে জনবল সংকটে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। লোহাগাড়ায় মানুষের দৌড়গোঁড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের চিকিৎসক সংকট, যার কারণে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে শীঘ্রই একজন চিকিৎসক পদায়ন করার চেষ্টা করা হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। ইতোমধ্যে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য ঢাকায় চিঠি দিয়েছি। দ্রæত সময়ের মধ্যে সপ্তাহে যাতে দুইদিন হলেও ডাক্তার রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করতে পারে সেজন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. ফজলে রাব্বী বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছি। টাইফয়েড ক্যাম্পেইনের কারণে জনবল সংকট রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কিছুদিনের মধ্যে সারাদেশে ৪৮তম বিসিএসের মাধ্যমে ৩ হাজার ২০০ জন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে। ওখান থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য চিকিৎসক পেলে যেসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক নাই, ওইসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। অতি দ্রæত জনবল নিয়োগ দিলে এমন ভোগান্তিতে থেকে মুক্তি পাবে এমনটাই প্রতাশা স্থানীয় এলাকার সচেতন মহলের।