জনপ্রতিনিধি-বিত্তবানদের কার্যক্রমে ভাটা?

14

করোনা মহামারির প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই হানা দিয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা গত বছরের সব পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার ঘোষিত লকডাউন ও রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খেটে খাওয়া মানুষের মাথায় হাত। মধ্যবিত্ত পরিবারের অবস্থাও একেবারে সঙ্গীন।
মূল্যসন্ত্রাসের কারণে হাহাকার চারদিকে। এমন অবস্থায় জনপ্রতিনিধিদের তৎপরতা করোনার প্রথম ধাক্কার সময়কালের ধারেকাছেও নেই। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর যে তৎপরতা ছিল, তা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
বিত্তবানদের তরফেও এ ধরনের তৎপরতা অনুপস্থিত। সরকারি সহায়তার পূর্বাভাস আগের তুলনায় অনেক কম। দরিদ্র জনগোষ্ঠী চলমান করোনা ও রমজান কিভাবে সামাল দেয় সেটা নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার প্রত্যাশায় সবার।
তথ্য মতে, গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থগিত হয়েছিল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে মহামারিতে খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থাকার অনেক আয়োজন ছিল কাউন্সিলর প্রার্থীদের। এমনকি তাদের চাল, ডাল ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা সরঞ্জাম বিতরণের খবরে সয়লাব থাকত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়া।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চললেও এখন জনগণের পাশে কাউন্সিলরদের থাকার খবরের দেখা মিলছে না। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের সাথে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, লকডাউন হলেও সব খোলা, মানুষ কাজ করতে পারছে। অন্যদিকে সামনে রমজান, তখন এমনিতেই সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে জনগণের পাশে থাকতে হবে। এছাড়া সরকার বা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এখনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই অনেকটা পরিস্থিতি অবলোকন করছেন জনপ্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোরশেদ আলম বলেন, ‘গত বছরের করোনা মহমারি যখন চরমে, মানুষ যখন অক্সিজেন না পেয়ে বেসামাল। তখন আমার উদ্যোগে ওয়ার্ডের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে জরুরি অক্সিজেনসহ এ্যাম্বুলেন্স সেবা নিশ্চিত করেছিলাম। এবারও সেটা শুরু করে দিয়েছি। তবে খেটে খাওয়া মানুষকে ত্রাণ দেওয়া এখনও শুরু করিনি। পরিকল্পনা রয়েছে, প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। সরকারের ঘোষিত লকডাউনের সময় বাড়ানো হলে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ওয়ার্ডবাসীকে সহযোগিতা করা হবে।’
৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন বলেন, ‘সামনে রমজান, তখন খেটে খাওয়া ও এলাকার মানুষের পাশে থাকতে হবে। এখনও করছি। তবে ঢালাওভাবে করছি না। কেননা প্রকাশ্যে করলে সামলিয়ে উঠতে পারবো না। কেননা আমার এলাকায় খেটে খাওয়ার মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই সাধ্য-সামর্থের মধ্যে যতটুকু করা যায়, সেভাবেই জনগণের পাশে রয়েছি।’
৩২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, ‘আমি পরিস্থিতি অনুধাবন করছি। করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও সরকারি বরাদ্দ আসেনি। সিটি কর্পোরেশনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে যারা যোগাযোগ করছেন তাদের তো সহযোগিতা করছি।’ তিনিও রমজান আর লকডাউনের সময় বাড়লে খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থাকার পরিকল্পনার কথা জানান।
১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নেছার উদ্দিন মঞ্জু বলেন, গত বছরের করোনার প্রথম ঢেউ মোকাবেলা করেছি। আমার এলাকায় লকডাউনও ছিল। সে হিসেবে গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারও কাজ করবো। তাছাড়া এখনও তো সবকিছু খোলা। মানুষ আয় রোজগার করতে পারছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে, মানুষ যদি কষ্টে থাকে। তাহলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে অবশ্যই পাশে থাকবো।’
করোনার শুরু থেকে খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে ঘরে চাল, ডাল ও আলু পৌঁছে দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ফেরদৌস বেগম মুন্নি। তিনবার নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৫ সালের নির্বাচনে হেরেছিলেন। গেল নির্বাচনে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। করোনা দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে থাকা নিয়ে মুন্নি বলেন, ‘গতবার কাউন্সিলরের দায়িত্বে ছিলাম না। তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষের পাশে ছিলাম। এবার নির্বাচিত হয়েছি। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কি করে দেখি, করোনা পরিস্থিতিও বুঝি। তারপর সিদ্ধান্ত নিব, কিভাবে মানুষের পাশে থাকা যায়।’