সুইফট চ্যানেল ব্যবহার করে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেকে জড়িত আছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদশ ব্যাংককে বলেছেন তিনি।
গতকাল রোববার রিজার্ভ চুরির ঘটনা বিশ্লেষণে গঠিত পর্যালোচনা কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এটা তদন্ত করতে গিয়ে আগের সরকারের সময় সীমাহীন গাফিলতি দেখা গেছে। তদন্তের আগেই সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা জড়িত আছে তাদের নাম যেন অভিযোগপত্রে না দেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।
ফরাসউদ্দিন সাহেবের মাধ্যমে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সেটা দেখেছি। সিআইডি রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে যাদের নাম এসেছে তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে কমিটি তা জানতে চেয়েছে। কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেটাও আমরা বলে এসেছি।
আসিফ নজরুল পর্যালোচনা কমিটির সভাপতি হিসাবে আছেন। সদস্য সচিব হিসাবে আছেন তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
আর কমিটির সদস্যরা হলেন- জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বেসরকারি সদস্য ব্যাংকার আলী আশফাক ও নজরুল হুদা। সবাই গতকাল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে ২ বিলিয়ন ডলার চুরি বা লুট করার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন এখনও উদ্ধার করা যায়নি। পুরো বাংলাদেশকে লুট করার পারিকল্পনা ছিল। ২ বিলিয়ন ডলার চলে গেলে আজকে প্রায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তাম।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ অংশে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, দায়ীদের নাম এখনই ডিসক্লোজ করছি না। এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে কি না দেখা হচ্ছে।
রিজার্ভ উদ্ধারে বিদেশে যে লিগ্যাল ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেখানেও অনিয়ম থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন পর্যালোচনা কমিটির প্রধান।
তখনকার সরকার কিছু লিগ্যাল ফার্মকে রিজার্ভ উদ্ধারের কাজ দিয়েছিল। ওই ফার্মের সঙ্গে গত সরকারের ঘনিষ্ট একজন আইনজীবী জড়িত ছিলেন। এই ফার্মকে লাখ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে ইমেইল আদানপ্রদান করলেও টাকা দিতে হয়।
এত বেশি টাকার বিনিময়ে ফার্মটাকে বাছাইয়ের পেছনে ওই সরকারঘনিষ্ট আইনজীবীর কী সংশ্লিষ্টতা, সেটাও আমরা দেখতে বলেছি। কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়েছিল কি না দেখব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনা করতে গত ১২ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে সভাপতি করে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করেছে সরকার। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।