জগৎ বিখ্যাত সাধক হযরত শাহছুফি আমানত খান (র:)

1

মোঃ নুরুল আবছার

ইয়া আইয়্যুহালাযীনা আ-মানুত্তাকুলা-হা ওয়াক‚নূ মা “আছ্ ছা-দিক্বীন।

বাংলা অর্থঃ হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথী হও। (সুরা তওবা আয়াত নং-১১৯, আলকোরআন) ।
সমস্ত প্রশংসা সর্বশক্তিমান আল্লাহর, যিনি সমগ্র জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পরম দয়ালু। আর লাখো দরুদ ও সালাম পেশ করছি আকায়ে নামেদার তাজেদারে মদিনা দোজাহানের সর্দ্দার হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর পাক চরণে, যাকে সৃষ্টি না করলে সৃষ্টিক‚লের কোন কিছুই আল্লাহ সৃষ্টি করতো না। আল্লাহ জ্বিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করার জন্য। সে মোতাবেক বিভিন্ন নবী রাসুলের মাঝে আসমানী কিতাব নাযিলের মাধ্যমে মানব জাতিকে হেদায়তের পথ দেখানো হয়েছে। সর্বশেষে আকোরান নাযিল হয় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর উপর। আল্লাহর রাসুল আল কোরআনের ইসলামের বানী সমগ্র বিশ্বের আনাচে কানাচে পৌঁছে দিয়ে ইসলাম ধর্মকে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মে রূপান্তরিত করে নবুয়ত প্রতিষ্ঠিত করেন। আল্লাহর কোরআন ও রাসুল (সাঃ) এর হাদিস সমগ্র মানব জাতির জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের দিক নির্দেশনা দেয়। মহান রাব্বুল আলামীন শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)এর পর্দা নেওয়ার মাধ্যমে নবুয়তের পরিসমাপ্তি ঘটায়ে বেলায়ত যুগের সূচনা করেন। যা উপরে উল্লেখিত কোরানের আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়াছে। বিশ্বাসীদেরকে বলেছেন আল্লাহকে ভয় কর ও সত্যবাদীদের সাথী হও। সত্যবাদী বলতে আল্লাহ আহলে বায়াত ও আওলাদে রাসুলদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। যাদের সান্নিধ্যে গেলে আল্লাহ ও রাসুলের দিদার লাভ হয় ।
‘আল্ বেলায়তু জিন নবুয়ত অর্থাৎ বেলায়ত নবুয়তের ছায়া মর্মে এই হাদীস শরীফের ভাষ্যমতে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তবে প্রতীয়মান হয় যে রাসুলে পাক (সাঃ) নবুয়তের পরিসমাপ্তির মাধ্যমে বেলায়তের যে ধারা প্রবাহিত করেছেন তা নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শান এ আজমতেরই বহিঃ প্রকাশ মাত্র। তারই ধারাবাহিকতায় যে সত্তা হুজুর পুর নুর রউফুর রহিম (সাঃ) এর বেলায়তী ক্ষমতার শান-এ আজমতের নিদর্শন হিসাবে জগতে আবির্ভাব ঘটেছে সেটা সুফিবাদ ।
সুফিবাদ ইসলামের আধ্যাত্মিক দর্শন। আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা এ দর্শনের মূল বিষয় । আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপনই হলো এ দর্শনের মর্মকথা ।
ইসলাম ধর্মে সুফিবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। সুফি শব্দের উৎপত্তি, আরবি শব্দ সাফা থেকে যার অর্থ খাঁটি। সুফিগণ ধার্মিক এবং সহজ সরল জীবনযাপন করেন। আরাম, আয়েশ ও আনন্দ পরিত্যাগ করেন এবং জাগতিক সম্পর্ককে ছিন্ন করে তাদের জীবনকে মানবতার খেদমত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কুরবানি করে দেন। মুসলিম সুফিরা আবহমান কালথেকে যে জিনিসগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন সেগুলি হলো দুনিয়ার অসার চিন্তা ভাবনা ও দ্রব্যাদি থেকে নিজেকে মুক্ত করা। বিনয় ও শ্রদ্ধার সাথে নবী করিম (সাঃ) এর পথে থাকা, ধ্যান ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে এক অদৃশ্য সংযোগ স্থাপন করা। এই সুফি দরবেশগণের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রসার ঘটে। যার মধ্যে শাহেনশাহে আদালত হযরত শাহছুফি আমানত খান (র:) অন্যতম। তিনি গাউছে ছামদানী, পীরেল হাছানী, শেখ ছৈয়দ আবু মীর মহিউদ্দিন গাউছুল আজম বড় পীর আবদুল কাদের জীলানির বংশধর। তার পূরবর্তী বংশধর ইসলাম প্রসারের জন্য সূদুর বাগদাদ হতে ভারতের বিহারে আগমন করেন। তিনি তখনকার সময়ের বিখ্যাত সুফি সাধক হযরত আবদুর রহিম শহীদ (রাঃ) এর হাতে বায়াত গ্রহণ করে কঠিন রেয়াজতের মাধ্যমে বেলায়াতের উঁচু মকামে অধিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বিহার থেকে চট্টগ্রামে আগমন করে চট্টগ্রাম জজ কোর্টে নিজেকে চাকুরিতে নিয়োজিত করেন, যাতে সাধারণ লোকেরা বুঝতে না পারে। সারাদিন কোর্টে চাকুরী শেষ করে লালদীঘির পূর্ব পাড়ে নিজ খানকায় সারারাত ব্যাপী রিয়াজত/সাধনায় মশগুল থাকতেন। কঠোর সাধনার মাধ্যমে নিজেকে বেলায়েতের উঁচু মকামে অধিষ্ঠিত করেন। তার কেরামত এই অধমের জ্ঞান ও কলমের কালি দিয়ে লেখা সম্ভব নয়। তার বেলায়তি ক্ষমতা সারা জগতের মানুষ অবগত আছে। এই মহান সাধকের মাজার থেকে রাতদিন আল্লাহর রহমতের বারিধারা বর্ষণ হয়ে চলেছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত চলবে। জাতি, ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত ফরিয়াদি পতঙ্গের ন্যায় উপড়ে পড়ে, অন্তরভরা ফরিয়াদ পেশ করেন এবং আল্লাহ পাক এই মহান আউলিয়াকেরামের উছিলায় প্রত্যেকের নেক মকছুদ পূরণ করেন।
প্রতি বছর ১লা জিলহজ্ব মাজার প্রাঙ্গণে লক্ষ আশেক ভক্তদের অংশগ্রহণে মহা সমারোহে হযরত শাহছুফি আমানত খান (রা:) এর ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। এই মহান ওরশ শরীফের উছিলায় আল্লাহ যেন আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা করেন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক