হাটহাজারী প্রতিনিধি
‘বঅত দিন পর গ্রামত আস্ছিদি, ছোড বেলায় এডেই আছিলাম। এডে ওগগা বট গাছ আসিল; বট গাছর নিচে আড বইসতো, তহন আডত আইসতাম। ছোড় বেলার স্রিতি বিয়াগগিন আঁর মনত পরের। এনডে আই ক্লাস থ্রি পর্যন্ত মহাজইন্নে বাপর ইস্কুলুত পরালেখা গইজ্জি। ইয়ার পরে আর বাপে আরে শঅরত লইগেইয়িগুই। তই, আর ব্যাক পরালেখা শরত।’ (বহুদিন পর গ্রামে এসেছি। ছোটবেলা এখানে ছিলাম। ছোটবেলার সবকিছু এখনও মাথায় রয়ে গেছে। এখানে একটি বটগাছ ছিল; বটগাছের তলে হাট বসতো, তখন হাটে আসতাম। ছোটবেলার সব স্মৃতি মনে পড়ছে। এখানে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত মহাজন বাপের স্কুলে পড়াশোনা করেছি। এরপর আমার বাবা আমাকে শহরে নিয়ে যায়। তারপর সব লেখাপড়া শহরে)গতকাল বুধবার বিকেলে হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে দীর্ঘ ১৮ বছর পর বাপের ভিটায় পা রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময়কালে চাটগাঁইয়া (চট্টগ্রামের) ভাষার এসব কথা বলেন।
এ সময় ড. মুহাম্মদ ইউনুস চাটগাঁর ভাষায় কিছু ছন্দ বলেন। এগুলো হলো-ছোটবেলায় ছড়ার মতো বলতাম, ‘আবদুর রশীদ ঠেন্ডলের ঠাঁট/ নজু মিয়া হাট, দুলা মিয়ার দাদার বাড়ি/ শোলক মিয়ার মোটর গাড়ি।’ তখন আমাদের দাদারা মোটর গাড়ি নিয়ে আসতেন।
এ কথা চিন্তা করতেও কেমন লাগছে। দেশে তখন মোটর গাড়ি কেউ চিনতও না। এসব কথা মনে পড়ছে। একের পর এক পরিবর্তন হচ্ছে। পরবর্তীতে শুনলাম ‘নজু মিয়া হাট বলে শ’র অই গেইয়ে। শ’র বলে বিলেত অই গেইয়ে।’ এখন তো নজুমিয়া হাট শহর হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। আপনাদের শহর মনে হচ্ছে? আরও হবে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, খুব ভালো লাগছে সবাইকে দেখে। আজ (বুধবার) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন সভায় এসেছিলাম। বাড়ির কাছে এসেছি, কোনো রকমে বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে পারো কিনা দেখো। নড়াচড়া করা মুশকিল, অনেক আয়োজন লাগে। সবার সঙ্গে দেখা করে গেলাম। আশাকরি, ভবিষ্যতে আরও আসা-যাওয়া হবে। আমার জন্য দোয়া রাখবেন।
এর আগে বিকেল ৪টা ৫৮ মিনিটে তিনি তাঁর বাপের ভিটা হাজী মোহাম্মদ দুলা মিয়া সওদাগর বাড়িতে এসে পৌঁছান। সেখানে তিনি ২৩ মিনিটের মত সময় অতিবাহিত করেন। এরপর বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি তাঁর পিতামহ হাজী মোহাম্মদ নজু মিঞা সওদাগর বাড়ির অদূরে নূরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন কবরস্থানে শায়িত দাদা-দাদির করব জেয়ারত করেন।
তারপর কোন প্রকার ফুল, ব্যানার, পতাকা ও ¯েøাগান ছাড়াই বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট থেকে ৫টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ৭ মিনিটের মত তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করে উপস্থিত সকলের কাছ থেকে বিদায় নেন। বিদায়ের আগে চাচা হাজী মো. শফিকে বুকে টেনে নেন।
এদিকে, সারাদিনের প্রখর রোদ আর তীব্র গরম উপেক্ষা করে তাঁর নিকট আত্মীয় ও এলাকার শত শত মানুষকে তাদের বাথুয়া গ্রামের কৃতিসন্তান বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে স্বাগত জানাতে এবং এক ঝলক দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তবে, নূরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন মাঠে তাঁর আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময়ের জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স’র (এসএসএফ) পাস (পরিচিতি কার্ড) পাননি তাদের অনুষ্ঠান স্থলের বাইরে এবং বিভিন্ন বাসাবাড়ির ছাদে ও বেলকনিতে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।