ছাত্র-জনতাকে টার্গেট করে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে : মামুনুল

2

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতাকে ‘টার্গেট করে’ খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হক। তিনি বলেছেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টজুড়ে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তা একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্র-জনতাকে টার্গেট করে শান্তভাবে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসন না দেখলে একথা বিশ্বাস করার উপযুক্ত ছিল না। এখন তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন’। খবর বিডিনিউজের
গতকাল রবিবার সকালে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে ‘নৈরাজ্য প্রতিরোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’ এক গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস পঞ্চগড় জেলা শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করে। জেলার বিভিন্ন ইসলামিক দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী এতে অংশ নেন।
সমাবেশ থেকে মামুনুল হক প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের অসংখ্য ভাইয়েরা কাদিয়ানীদের মিথ্যা মামলার শিকার। দয়া করে ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা অন্য সব মিথ্যা মামলার আগে পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীদের দ্বারা দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ দাবি জানাচ্ছি এবং আমি আপনাদের সবাইকে বলছি, আমাদের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কখনো আপনারা উত্তেজিত হবেন না। এই দেশ আমাদের। কাজেই আমাদের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতে হবে। সংখ্যালঘুদের জানমাল ও ধর্মীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের দরবারে দেখায় দিতে হবে বাংলাদেশের মুসলমানেরা সাম্প্রদায়িক নয়, সংঘাতপূর্ণ নয়, ইসলামের উদার নীতিতে বিশ্বাসী’।
মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা কাদিয়ানীদের এক মাস সময় দিলাম। এক মাসের মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আর যদি তা না করা হয় তাহলে আমার ভাইদের রক্ষার করার জন্য পরবর্তীতে পদক্ষেপ নিতে হবে’।
২০২৩ সালের মার্চে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে তাদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন বেশ কয়েকটি মামলা করে; যাতে কয়েক হাজার মানুষকে আসামি করা হয়।
খেলাফত মজলিসের জনসভাকে কেন্দ্র করে শহরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ব্যানার ও দাবি সম্বলিত ফেস্টুন নিয়ে স্টেডিয়ামে জমায়েত হন।
সমাবেশে মামুনুল হক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার ভাইয়ের রক্তের দাম আছে, এদেশের হাজারো মজলুম ভাই ও বোনের রক্তের দাম নাই? আপনার কাছে যদি ৩০ হাজার তাগড়া যুবক ও দামাল ছেলের জীবনের ও রক্তের দাম না থাকে, এদেশের মানুষের কাছে আপনার বাপ-ভাইয়ের রক্তের কোনো দাম থাকবে না’।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের জমায়েতের প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে সব আলো নিভিয়ে দিয়ে, ঘুমন্ত-তাহাজ্জুদরত নেতাকর্মীদেরকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে গণহত্যা চালিয়েছিল। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভিনদেশি রাষ্ট্রের আশীর্বাদে এবং তাদের সমর্থন নিয়ে বাংলার ক্ষমতার মসনদকে জোর করে দখল করে থাকার জন্য শেখ হাসিনা সরকার গুম-খুন ও হত্যা চালিয়েছিল। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে একই কাজ করেছে’।
জনগণের বিজয়কে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে সব মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য দীর্ঘদিন ধরে রাখতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভেদে জড়িয়ে পড়লে আত্মঘাতী হবে। আমাদের চ‚ড়ান্ত লক্ষ্য আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করা, বিজয়ী করা। ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে’।
খেলাফত মজলিস পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মীর মোর্শেদ তুহিনের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব জালালুদ্দিন, মাহবুবুল হক, সদস্যসচিব আবু সাইদ নোমান, বায়তুল মাল সম্পাদক ফজলুর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর পঞ্চগড় জেলা শাখার আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক ক্বারী মো আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহরের পাবলিক ক্লাব মাঠে সংগঠনের এক গণসমাবেশে বক্তব্য দেন মামুনুল হক। সেখানে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা গত ৫০ বছর প্রতিশোধের রাজনীতি করে দেশটাকে ধ্বংস করেছে। তিনি বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে, বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আরেকটি দেশকে ট্রানজিট দিয়ে দেন। কারণ, তিনি এই দেশের উন্নতি চাননি। এই বাংলাদেশকে অঙ্গরাজ্যে পরিণত করাই ছিল শেখ হাসিনার রাজনীতি’। তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘গণতওবা করে’ এবং দলের নাম পাল্টে ফের রাজনীতিতে আসার পরামর্শ দেন।
সংগঠনের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাঈদ আহমদ সাঈফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমেদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা এনামুল হক মূসা।
শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দোয়া করা হয়।