ছয় দশকের ঐতিহ্যের ইফতারি রয়েল বাংলা সুইট্ হাউসে

5

এম এ হোসাইন

ছয় দশক ধরে স্বকীয়তা ও গুণগত মান বজায় রেখে চলেছে ঐতিহ্যবাহী খাদ্য প্রতিষ্ঠান রয়েল বাংলা সুইট্ হাউস। পবিত্র রমজান মাসে ইফতার আইটেমের জন্য রয়েল বাংলা সুইট্ হাউসে রোজাদারদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে তবেই পছন্দের ইফতার সামগ্রী হাতে পাওয়া যায়।
রয়েল বাংলা সুইট্ হাউসের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। একসময় এটি ‘বোম্বাইওয়ালার মিষ্টির দোকান’ নামে পরিচিত ছিল। তবে আদতে এটি সম্পূর্ণ বাঙালিয়ানা খাবারের দোকান। ছয় দশকের ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠান রমজান মাসে বিশেষ ইফতার আইটেম নিয়ে হাজির হয়।
প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলি জানান, তার পূর্বপুরুষরা ইয়েমেন থেকে এসেছিলেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেছিলেন।
তিনি বলেন, আমাদের ‘চিকন জিলাপি’ সবচেয়ে জনপ্রিয়। এটিকে জালেবিও বলা হয়। এছাড়া পেঁয়াজু, বেগুনি, সবজি পেঁয়াজু, মুরগির বিভিন্ন আইটেম, হালুয়া, সেমাই, ফিরনি এবং দইও আমাদের বিশেষ আইটেম। আমাদের দই গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়, কোনো কেমিক্যাল বা পাউডার দুধ ব্যবহার করা হয় না। প্রতিষ্ঠানের সূচনালগ্ন থেকে বিশেষ আইটেমগুলোর মধ্যে হালুয়া এবং চানাচুর অন্যতম। মোহাম্মদ আলি বলেন, আমরা ১২ রকমের হালুয়া তৈরি করি, যা ক্রেতাদের মধ্যে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। প্রতি বছর আমরা প্রায় দুইশ রকমের আইটেম তৈরি করি, যা একদম ফিক্সড। নতুন কিছু তৈরি করার চিন্তা আপাতত নেই। তবে হালুয়া, সেমাই, ফিরনির মধ্যে ভিন্নতা নিয়ে আসি।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা হাজি মইজ আহমেদ আলি এই প্রতিষ্ঠানে অনেক খাবারকে পরিচিতি দিয়েছেন। তার মধ্যে আফ্লাতুন অন্যতম। এই খাবার একমাত্র আরব দেশেই পাওয়া যায়। আমার বাবাই আমাদের কমান্ড দেন এবং তার অধীনেই আমরা সবাই কাজ করি।
রয়েল বাংলা সুইট্ হাউস বাংলাদেশের একমাত্র সবচেয়ে পুরনো একই মালিকানাধীন খাদ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে। মোহাম্মদ আলি বলেন, চট্টগ্রামে পুরনো লাইসেন্স একমাত্র আমাদের কাছেই আছে, যেটি প্রথম সিটি কর্পোরেশন থেকে পেয়েছি।
খাবারের দাম নিয়েও রয়েল বাংলা সুইট্ হাউস সচেতন। মোহাম্মদ আলি বলেন, আমরা গত চার বছর ধরে কোনো খাবারের দাম বাড়াইনি। সবকিছুর দাম বাড়লেও আমরা দামের দিক দিয়ে সচেতন। আমার বাবার কড়া নির্দেশ, দাম বাড়ানো যাবে না। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে খাবারের মান অক্ষুন্ন রাখতেই হবে।
ঐতিহ্যবাহী এই দোকানের খাবার বাইরে পাঠানোর সুযোগও আছে। মোহাম্মদ আলি বলেন, আমরা হোম ডেলিভারি করি না। তবে চট্টগ্রামের বাইরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাই। আমাদের বিশেষ গেস্টরা অর্ডার করে থাকেন।
রয়েল বাংলা সুইট্ হাউস থেকে ইফতার সামগ্রী কিনে খুশি ক্রেতারা। তাদের অনেকেই বলছেন, ঐতিহ্যবাহী এই খাবারগুলো ছাড়া তাদের ইফতার সম্পূর্ণ হয় না। এখানে খাবারের মান ভালো, তাই দূর-দূরান্ত থেকে এসেও ইফতার কিনছেন তারা।
ফিরোজ আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, দীর্ঘদিনের সুনাম আছে রয়েল বাংলার। বিশেষ করে ইফতারি আইটেম কেনার জন্য মানুষের ভিড় বেশি হয়। ভিন্ন স্বাদের ইফতারের আমেজ নিতে এখান থেকে ইফতারি কেনা।
রয়েল বাংলা সুইট্ হাউস শুধু একটি খাদ্য প্রতিষ্ঠান নয়, এটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের অংশ। ছয় দশক ধরে এই প্রতিষ্ঠান তার গুণগত মান ও স্বকীয়তা বজায় রেখে চলেছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।