নগরের বন্দর-পতেঙ্গায় জ্বালানি তেল বেচাকেনার দোকানের অনুমতি রয়েছে মাত্র ৪ থেকে ৫টি। অথচ অর্ধশত চোরাই তেলের ভাসমান দোকান গড়ে উঠেছে এলাকাটিতে। সরকারি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকে কেনা বিভিন্ন কোম্পানির তেলের ভাউচারের চালকরা মূলত এসব তেল বিক্রি করার সঙ্গে জড়িত। আর এই সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা ইপিজেড থানার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ। বিগত সরকারের আমলে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ করে’ চালাতেন এই চোরাই তেলের ব্যবসা। সরকার পতনের পর ভারতে গা ঢাকা দিলেও দেশে ফিরে এবার ধরা পড়েছেন পুলিশের জালে। শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাতে নগরের ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর এলাকার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকা থেকে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও ও ইপিজেড থানা পুলিশের একটি দল। খবর সিভয়েসের
জানা গেছে, নগরের পতেঙ্গা, ইপিজেড, কর্ণফুলী, সদরঘাট ও বন্দর এলাকাকে ঘিরে তেল চোর সিন্ডিকেটের তৎপরতা চলে। বিদেশে থেকে তেলসহ খাদ্যপণ্য নিয়ে আসা জাহাজ থেকে তেল সংগ্রহ করে এসব এলাকায় মজুদ করা হয়। এর সাথে যুক্ত রয়েছেন কিছু অসাধু নাবিক। জাহাজে থাকা নাবিক এবং অন্য স্টাফাদের জন্য খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জাহাজে পৌঁছে দেওয়ার নামে বহিনোঙরে ভাসমান জাহাজ থেকে ড্রামে ভরে তেল নামানো হয়। পরে ওই তেল ভাউচার করে খোলা বাজারে বিক্রি করে।
চালকরা পতেঙ্গা ভিআইপি সড়কে গাড়ি থামিয়ে বড়বড় পাইপের মাধ্যমে অল্প সময়ে ভাউচার থেকে নামিয়ে ফেলে তেল। এসব তেলের মধ্যে রয়েছে কেরোসিন, অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল। এছাড়া বন্দর থানা কেন্দ্রিক যেসব তেলের দোকান রয়েছে এসব দোকান চোরাই তেল কিনছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কনটেইনার ডিপো থেকে বের হওয়া কনটেইনারবাহী লরি ও কাভার্ডভ্যান থেকে।
আইনশৃংখলা বাহিনীর তথ্যমতে, তেল চুরির একাধিক সিন্ডিকেট থাকলেও মূলত অধিক সক্রিয় হারুনের সিন্ডিকেট। তার নেতৃত্বাধীন চক্রটি বালুবাহী বার্জ দিয়ে তেল পাচার করেন। ‘এমভি তানিশা’ নামে তার একটি জাহাজ আছে। অভিযোগ রয়েছে ওই জাহাজে করেই তেল পাচার করেন তিনি। চোরাকারবারসহ বিভিন্ন অভিযোগে হারুনুর রশিদের নামে নগরীর পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানায় ৪টিরও বেশি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারি এমভি তানিশা জাহাজ থেকে ১১ হাজার লিটার চোরাই ভোজ্যতেল উদ্ধার করে নৌ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় হারুনুর রশিদসহ তার ভাইয়ের নামে একটি মামলা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তেল চোর সিন্ডিকেটের হোতা হারুনুর রশিদ গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগের দিনই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। তিনি মূলত দক্ষিণ হালিশহর ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বিদেশে পলাতক ‘নেতা সুমনের’ গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে তিনি ২২ আগস্ট দেশে ফেরেন। এরপর থেকে আত্মগোপনে থেকেই নিজের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘গতকাল রাতে হারুনুর রশিদকে আমরা সিমেন্ট ক্রসিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করি। সরকার পতনের আগের দিন তিনি ভারতে গিয়েছিলেন। এরপর গত বছরের ২২ আগস্ট আবার ফিরে আসেন। আমরা তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’