চেয়ারম্যান অপসারিত হলেও সচিবরা বহাল তবিয়তে

1

আনোয়ারা প্রতিনিধি

আনোয়ারা উপজেলার ১১ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হলেও তাদের সাথে সুসম্পর্ক থাকা সচিবরা এখনো বহাল তবিয়তে থাকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, নানা অনিয়মে চেয়ারম্যানদের সহযোগী ছিল ইউপি সচিবরাও। এখন চেয়ারম্যানরা পালিয়ে গেলেও তাদের প্রেসক্রিপশনে কাজ করছে বহাল থাকা সচিবরা। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের চেয়ারম্যানদের সাথে মিলেমিশে এসব সচিবরা উন্নয়নের বরাদ্দের টাকা ভাগবাটোয়ারা করেছেন। তীব্র আন্দোলনের ফলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলেও সচিবরা আগের মতোই নাগরিক সেবা দিচ্ছে ঘুষ-বাণিজ্যের মাধ্যমে। দলীয় মুখচেনাদের সেবা দিতে তাদের মধ্যে যে আগ্রহ, সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে তারা নানানভাবে হয়রানি করছে। জন্ম-মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ ও জাতীয়তা সনদসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
আনোয়ারার সচেতন সমাজ অবিলম্বে এসব ইউপি সচিবদের বদলি করে নতুন সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর গত ৫ মাস চেয়ারম্যানরা পরিষদে না আসলেও তাদের নামে উন্নয়ন বরাদ্দের চেক ছাড় করা হয়। এসব চেক ছাড়ে সহযোগিতা করেছেন সচিবরা। পলাতক চেয়ারম্যান এবং সচিবরা মিলে ১% এর টাকা উন্নয়ন বরাদ্দের নামে নয়-ছয় করেছেন। গত এক মাস আগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের এক চিঠিতে চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়। এর পরপরই শুরু হয় ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম। নতুন ভোটার হতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যোগাড় করতে জনগণ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, বৈরাগ ইউপির সচিব নজরুল ইসলাম, বারশত ইউপির বাবু তিলক, রায়পুর ইউপির লিটন বিশ্বাস, বটতলী ইউপির মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বরুমচড়া ইউপির মোহাম্মদ মামুন, বারখাইন ইউপির আব্দুর রহিম, আনোয়ারা সদর ইউপির আব্দুল হান্নান, চাতরী ইউপির মোহাম্মদ শাহ আলম, পরৈকোড়া ইউপির এনামুল হক, হাইলধর ইউপির শিবু পালিত, জুঁইদন্ডী ইউপির লিটন দাশ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে একই জায়গায় কর্মরত আছেন। এর মধ্যে বারখাইন ইউপির সচিব আব্দুর রহিম সবচেয়ে বেশি ১২ বছর ধরে চাকরি করছেন সচিব হিসেবে একই ইউপিতে। বারখাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসনাইন জলিল চৌধুরী শাকিল অপসারণের আগেও পরিষদে তেমন আসতেন না। ফলে পরিষদের সব কাজ সচিব আব্দুর রহিমই করতেন। এতে করে তিনি পরিষদের উন্নয়ন কাজসহ নানা কাজে অনিয়মের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। চট্টগ্রাম শহরে গড়েছেন প্লট-ফ্ল্যাট। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে সেবার জন্য গেলে সাধারণ মানুষের সাথে দুর্ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে বারখাইন ইউনিয়নের সচিব আব্দুর রহিম বলেন, দশ বছর ধরে আছি এটা সত্য। ৫ আগস্টের পর চেক তো আমরা পাশ করিনি। তখন চেয়ারম্যানরা ইউএনও’র তত্ত্বাবধানে ছিল। তখনকার ইউএনও ইশতিয়াক ইমন স্যার চেকগুলো পাশ করতে বলেছেন। আমরা তাই করেছি। ৫ আগস্টের পর উন্নয়ন তহবিলে যে বরাদ্দ ছিল সেগুলোর কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে সম্পন্ন করে আমরা টাকা উত্তোলন করেছি।
সিংহরা গ্রামের বাসিন্দা শিমুল সরকার বলেন, ভোটার হওয়ার জন্য আমার এক কাকা চাতরী ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তার কাছ থেকে নিয়ম বহিভর্‚তভাবে টাকা নেয় সচিবসহ ইউপির অন্যরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিনা আকতার বলেন, সচিবদের অনিয়মের খবর পেয়ে আমি চারজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছি। তাদের ব্যাপারে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর চিঠি পাঠাব। যারা অনিয়মের সহযোগী ছিল তারা থাকতে পারবে না।