পূর্বদেশ ডেস্ক
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ‘সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঠিক তথ্য না দিয়ে প্রকৃত তথ্য আড়াল করেছেন’ অভিযোগ করে তার অপসারণ দাবি করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এনবিআর দুই ভাগ করা নিয়ে এ সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের দেওয়া বক্তব্য ‘মারাত্মকভাবে আহত করেছে’ বলেও পরিষদের নেতাদের ভাষ্য। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে ‘লাগাতার অসহযোগ’ কর্মসূচি পালনসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।
সরকার গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে।ওর বিরোধিতা করে এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।
এর ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুরে এনবিআর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা। সেখানে ওই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে নতুন কর্মসূচি তুলে ধরেন অতিরিক্ত কর কমিশনার হাসিনা আক্তার, শুল্কের উপ কমিশনার শাহাদাত জামিল শাওন এবং উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তফিজুর রহমান।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১. গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ের পর থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে ‘লাগাতার অসহযোগ’ কর্মসূচি পালন করা হবে; ২. এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিগুলোর বিষয়ে আজ দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হবে; ৩. আজ এনবিআর এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিজ নিজ দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে; ৪. শনিবার এবং রোববার কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশন ছাড়া ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এই দুইদিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে; ৫. সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ছাড়া ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।
লাগাতার কর্মসূচি ও অধ্যাদেশ বাতিলের দাবির মুখে মঙ্গলবার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা। অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ওই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ছাড়া আরও দুজন উপদেষ্টা ছিলেন।
রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তিন প্রাক্তন সদস্য ও এনবিআর চেয়ারম্যানও ছিলেন সেখানে।
সভায় রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যরা স্পষ্টভাবে বলেন যে, তাদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে যেভাবে সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে, তা জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রতিফলিত হয়নি।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে পরিষদ বলেছে, মিটিং শেষে অর্থউপদেষ্টা মহোদয় একটা স্টেটমেন্ট মিডিয়ার কাছে দিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, দেশের স্বার্থে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে, দশের স্বার্থে যে অধ্যাদেশ অনুমোদন হয়েছে তা থাকবে, তবে আমাদের যে জিনিসগুলে আছে তা অ্যাডভাইজরি কমিটির সাথে আলোচনা করে বিধি বা অন্য কিছু করে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে আর কোনো আলোচনা নয়। আমাদের আন্দোলন চলবে কি চলবে না- সে বিষয়ে কিছু আসে যায় না মর্মে তিনি মন্তব্য করেছেন।
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মিলিত ঐক্য পরিষদের দাবি সমূহ হলো- ১. জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; ২. অবিলম্বে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে; ৩. রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং ৪. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনা করে প্রত্যাশী সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।