নিজস্ব প্রতিবেদক
পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের টানা ছুটি শেষে গতকাল সোমবার অফিস-আদালত খুললেও কার্যতঃ শহর এখনও ফাঁকাই রয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহের ছুটি কাটিয়ে মানুষ শহরে ফিরতে শুরু করলেও এখনও চেনারূপে ফিরে নি নগরী। কর্মজীবীরা কাজের টানে কর্মস্থলে ফিরছেন। তবে পরিবারের অনেকেই এখনও শহরমুখী হন নি। চলতি সপ্তাহজুড়ে শহরে ফেরার চাপ থাকবে বাস-ট্রেনে। সবমিলিয়ে আগামী সপ্তাহ নাগাদ শহর পুরোদমে ফের কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটিকে কেন্দ্র করে গত ৯ এপ্রিল থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে ঈদের ছুটি শুরুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ চট্টগ্রাম ছেড়েছেন। ফাঁকা নগরীতে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য বাসাবাড়ি ও অলিগলিতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। মানুষ এখনও বাসা-বাড়িতে না ফেরায় কোথাও আইন-শৃঙ্খলাজনিত কোনও অঘটনের খবর পাওয়া যায় নি।
দীর্ঘ ছুটি শেষে গতকাল সোমবার প্রথম কর্মদিবসে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে মানুষ গ্রামের বাড়ি যাওয়ায় বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি ফাঁকা পড়ে আছে। শহরে চিরচেনা যানজট ও মানুষের কোলাহল নেই। সব মিলিয়ে এবারের ঈদে ১৫ লক্ষাধিক মানুষ শহর ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। ঈদে যানবাহনে বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য ঠেকাতে স্টেশনগুলোতে বিআরটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেসি টিমের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। চোর-ছিনতাইকারীদের লাগাম টানতে নগরীর ‘আইস অব সিএমপি’ কর্মসূচির আওতায় সিসিটিভিগুলোর দিকে নজর বাড়িয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে বাসাবাড়ি ও অলিগলিতে বাড়ানো হয়েছে টহল।
জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে যানবাহনে শহরমুখী মনিুষের চাপ বাড়ছে। এবার ঈদযাত্রায় কারও কাছ থেকেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করলে এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বাসে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে না পারে, সে লক্ষে আমাদের গঠিত বিভিন্ন কমিটি ভাড়ার বিষয়টি নজরদারি করছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক জানান, রেলপথে ঈদ যাত্রার দশটি আন্তঃনগর, চারটি মেইল-এক্সপ্রেস ও দুটি স্পেশাল ট্রেনে করে চার দিন ধরে গড়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষ চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি গেছে। ইতিমধ্যে তাদের কেউ কেউ হয়তো পরিবার ছাড়াই শহরে ফিরেছে। তবে ট্রেনে করে শহরমুখী মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে।
ঈদুল ফিতরের ছুটির নিরাপত্তার বিষয়ে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা গয়েছে। নগরজুড়ে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
নগরীর লালদীঘি পাড়ের একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্বদেশকে বলেন, সোমবার প্রথম খোলার দিন থাকলেও বেশিরভাগ স্টাফই আসলে কর্মস্থলে আসেন নি। লেনদেনও হয়েছে নেহায়েৎ কম। অনেকে ঈদের ছুটির সাথে মিলিয়ে দুয়েকদিনের বাড়তি ছুটির দরখাস্ত দিয়ে গেছেন। তাই ব্যাংকপাড়া আসলে এখনও সরগরম হয়নি।
নগরীর ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বালিজ্য কেন্দ্র খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক ছগীর আহম্মদ পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের এখানকার লোডিং- আনলোডিংয়ের শ্রমিকরা এখনও বাড়িতে। আগামী রবিবারের আগে তারা কর্মস্থলে ফিরবে বলে মনে হয় না। সেদিক থেকে দেখলে খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য আগামী সপ্তাহে পুনরায় সরগরম হয়ে উঠতে পারে।
বিভিন্ন খাতের সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত শহর কিংবা গ্রামে ঈদের ছুটির আমেজ থাকবে। এখনও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলো বন্ধ রয়েছে। এগুলো খোলার কথা রয়েছে আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে। সবমিলিয়ে আগামী সপ্তাহের আগে শহরে কর্মচাঞ্চল্য ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। নতুন সপ্তাহ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বিভিন্ন খাতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করবে।