চুক্তি না করে ফেঁসে যাচ্ছে ৮ মিল মালিক

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ মৌসুমে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ চুক্তি না করায় ৮ চাল মিল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তর। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে চুক্তি সম্পাদন না করায় গত ২২ ডিসেম্বর এসব মিল মালিককে শোকজ করা হয়। পরবর্তী পাঁচ কর্মদিবসে শোকজের জবাব দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হলেও ২১ দিনেও জবাব দেয়নি অভিযুক্ত চাল মিল মালিকরা। যে কারণে মিলের লাইসেন্স বাতিলসহ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের মতো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তর।
চট্টগ্রামের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আট চাল মিল মালিক আমন সংগ্রহে চুক্তি করেনি। চুক্তি না করায় আট চাল মিল মালিককে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছি। ওরা এখনো জবাব দেয়নি। জবাব দেয়ার পর তা যদি গ্রহণযোগ্য হয় একসেপ্ট হবে নয়তো বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রামে ১২৮টি আতপ চাল কল ও ১২টি সিদ্ধ চাল কল আছে। এরমধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মো. হাসানের মালিকানাধীন মেসার্স শাহ আমানত অটো রাইচ মিল, মো, রেজাউল করিমের মালিকানাধীন মেসার্স শাহজালাল অটো রাইচ মিল, মো. মুছার মালিকানাধীন মেসার্স চৌধুরী অটো রাইচ মিল, পটিয়া উপজেলার বুধপুরা বাজারের মো. ইসমাইলের মালিকানাধীন মেসার্স শাহগদী বয়লার সিদ্ধ মেজর রাইচ মিল, হাজী মো. আবু মুছার মালিকানাধীন মেসার্স দরবার অটো রাইচ মিল, আনোয়ারা উপজেলার মো. জসিম উদ্দীনের মালিকানাধীন মেসার্স আল মাহমুদ অটো রাইচ মিল, গোলাম মোহাম্মদের মালিকানাধীন মেসার্স হুর জাহান অটো রাইচ মিল, বাঁশখালী উপজেলার এনামুল হকের মালিকানাধীন মেসার্স খাজা অটো রাইচ মিলকে আমন সংগ্রহ মৌসুমে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহে চুক্তি না করায় শোকজ করা হয়েছে।
গত ২২ ডিসেম্বর আটটি মিলকে দেয়া পৃথক শোকজ চিঠিতে বলা হয়, ২০২৪-২৫ মৌসুমে আমন সংগ্রহের জন্য গত ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত চুক্তির সময়সীমা নির্ধারণ ছিল। এই সময়ের মধ্যে চুক্তিযোগ্য মিলের অনুক‚লে বরাদ্দকৃত চাল উক্ত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সরকারের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে সংশ্লিষ্ট খাদ্য গুদামে সরবরাহ দেয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে চুক্তি সম্পাদন করা হয়নি। যা অনাকাঙ্খিত, অগ্রহণযোগ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খাদ্য অধিদপ্তরের দুইজন কর্মকর্তা বলেন, চুক্তি না করা আট মিল মালিককে পাঁচ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হলেও তারা ২১ দিনেও তা দেয়নি। যে কারণে চাল সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় মিলের লাইসেন্স বাতিলসহ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে হুঁশিয়ারী দেয়া হয়েছে। এরা এখনো শোকজের জবাব না দিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। তবে শোকজের জবাব পেতে আরোও দুই একদিন অপেক্ষা করেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, আমন সংগ্রহ মৌসুমে ৩৩ টাকা ধান, ৪৭ টাকা সিদ্ধ চাল ও ৪৬ টাকা আতপ চাল দাম নির্ধারণ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। কিন্তু এই দাম নিয়ে মিল মালিকদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। আতপ চালের দাম ৪৬ টাকা নির্ধারণ হলেও চাল সংগ্রহেই লোকসানের মুখে পড়ছে মিলাররা। এক শ্রেণির মিল মালিকরা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে গুদামে চাল সরবরাহে বাড়তি সুবিধা আদায় করছে। যারাই লোকসানের শঙ্কায় আছে তারা চুক্তি করেনি।
চুক্তি না করা পটিয়ার দরবার অটো রাইচ মিলের মালিক হাজী মো, আবু মুছা পূর্বদেশকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন মিল কারখানা চালায়নি তাই চুক্তি করি নাই। এছাড়াও দাম নিয়েও একটু সমস্যা হয়েছে। উনারা একেক মিল থেকে একেক রকম চাল নেয়। চালের কোয়ালিটি নিয়ে সমস্যা হওয়ায় চুক্তি করি নাই। আমি কোনোরকম নোটিশ না পাওয়ায় জবাব দিইনি।’