আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মিয়ানমার-চীন সীমান্তে এক বছর ধরে চলা লড়াইয়ের পর মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী বিরুদ্ধে লড়াইরত শক্তিশালী বিদ্রোহী জোটের অংশ জাতিগত সংখ্যালঘু আর্মি জান্তার সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসা বিদ্রোহী জোটের সদস্য তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) সোমবার তাদের আলোচনার বসতে প্রস্তুত থাকার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে। জান্তার ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং চীনের দিক থেকে চাপ বাড়তে থাকার মুখে টিএনএলএ এমন সিদ্ধান্ত জানাল।
২০২১ সালে গণতন্ত্রের প্রতীক অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রথমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দিয়ে শুরু হয়ে পরে তা সশস্ত্র প্রতিরোধের রূপ নেয় এবং জান্তার বিরুদ্ধে একাধিক ফ্রন্টে বিদ্রোহী হামলা শুরু হয়। টিএনএলএ তাদের অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলা বন্ধ করতে চায়। তাই তারা আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং চীনের মধ্যস্থতার চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে।
টিএনএলএ-র মুখপাত্র লওয়ে ইয়াই ও বলেছেন, “আমাদের বেসামরিক নাগরিকরা বিমান হামলা ও অন্যান্য সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সুতরাং, আমাদের একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে।”
২০২২ সালে সমন্বিতভাবে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ১০২৭-এর বিদ্রোহী জোটের অংশ টিএনএলএ। এই জোট সামরিক জান্তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযানে কয়েকটি শহর ও সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা সরকার।
ওদিকে, বিদ্রোহী জোটের অপর দুটি গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও সাড়া দেয়নি।
মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বেইজিং মিয়ানমারে যে কোনো ধরনের যুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলার বিরোধিতা করে। তাই সব পক্ষকে লড়াই বন্ধ করে সংলাপের মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে। নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র মাও নিং বলেন, “চীন সক্রিয়ভাবে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে শান্তি প্রক্রিয়ায় সাধ্যমতো সমর্থন ও সহায়তা করে যাবে।”
চীনের মধ্যস্থতায় জান্তার সঙ্গে বিদ্রোহী জোট জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছিল। তবে, সেই চুক্তি জুনে অকার্যকর হয়ে পড়লে পুনরায় সংঘাত শুরু হয়। মিয়ানমারের জান্তার একজন মুখপাত্র রয়টার্সের ফোনকলের জবাব দেননি। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) বলেছে, দেশের সংকট নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় চীনকে অবশ্যই মিয়ানমারের জনগণের আকাঙ্খার দিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে।
এনইউজি এর মুখপাত্র কিয়াও জাও বলেন, “আমি চীনকে বলতে চাই, তারা যেন এমন কোনও বৈঠক না করে, যা মিয়ানমারের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়। কারণ তা এই দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে না।”