ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা চীনের সরবরাহ করা জে-১০সি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ফ্রান্সের তৈরি রাফালসহ একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও এই দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি, তবে ঘটনাটি তাইওয়ানের জন্য উদ্বেগজনক এক বার্তা বহন করে।
এক শীর্ষ ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানান, পাকিস্তান কমপক্ষে একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। পাশাপাশি দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, চীনের তৈরি একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান কমপক্ষে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
সবশেষ ১১ মে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন শীর্ষ কর্মকর্তাও বিস্তারিত না জানিয়ে বলেন, ক্ষয়ক্ষতি সামরিক অভিযানের অংশ। এমন পরিস্থিতি স্পষ্টভাবেই চীনের পক্ষে যায়। কারণ, চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, জে-১০ ও পিএ-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ তাদের উন্নত প্ল্যাটফর্মগুলো ফ্রান্সের তৈরি রাফালের তুলনায় প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে রয়েছে।
অনেক দেশই পাক-ভারত সংঘর্ষের দিকে গভীর নজর রেখেছে, রাখছে। মূলত পাকিস্তানের ব্যবহার করা চীনা অস্ত্রগুলো কতটা কার্যকর, তা সবাই জানতে চায়। তাইওয়ানের মতো যেসব দেশ চীনকে সরাসরি হুমকি বলে মনে করে, মূলত তারাই পরিস্থিতি বুঝতে বেশি আগ্রহী। তাইওয়ান সম্ভবত এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
চীনের সামরিক বøগারদের দাবি, তাইওয়ানের নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অধিনায়ক লু লিশি এক রাজনৈতিক নিবন্ধে ভারতের পাঞ্জাবে পাওয়া একটি বিমানের ধ্বংসাবশেষের ছবি বিশ্লেষণ করেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি ওই ছবি এবং প্রকাশ্যে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করেন, সেটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান কি না।
ওই নিবন্ধে তাইওয়ানের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল শুয়াই হুয়ামিনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ভারতীয় বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত মিগ-২৯ ও সু-৩০ ও রাফালের মতো যুদ্ধবিমানগুলো তাইওয়ানের বিমান বাহিনীর মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমানের চেয়ে বেশি উন্নত। ঝংতিয়ান নিউজ স্টেশনের একটি অনুষ্ঠানে তিনি তাইওয়ানের বিমান বাহিনীকে সতর্ক হতে বলেন।
আরেক নিবন্ধে কিছু চীনা সামরিক ব্লগার উপহাসের ছলে তাইওয়ানের সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেন। তারা বলেন, পশ্চিমা যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে চীনা যুদ্ধবিমানগুলো কতটা ভালো কাজ করেছে, তা দেখে তাইওয়ানের সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
চীনা নেটিজেন এবং বøগারদের একটি অংশ বলছে, তাইওয়ানের কিছু বিশেষজ্ঞ চীনের যুদ্ধবিমান নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। তাইওয়ান প্রণালিতে যদি কোনো সংঘাত শুরু হয়, তাহলে তাদের বিমান বাহিনী মিরাজ ২০০০-৫ ব্যবহার করে চীনের উন্নত জে- ১০ সি যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়বে? আরেক সামরিক বøগার বলেন, ভারতের ক্ষতি দেখে তাইওয়ানের জনগণ অবশেষে চীনা অস্ত্রের শক্তি মেনে নিতে বাধ্য হতে পারে।
তাইওয়ানের প্রশাসন পাকিস্তানের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, দূরপাল্লার পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত, চতুর্থ প্রজন্মের চেয়েও উন্নত জে-১০সি যদি সত্যিই রাফাল এবং অন্যান্য ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলোকে ভূপাতিত করে, তাহলে তা তাইওয়ানের জন্য খুবই উদ্বেগের হয়ে দাঁড়াবে।
চীনা যুদ্ধবিমান, বিশেষ করে পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ মডেলের বিরুদ্ধে তাইওয়ানের যুদ্ধবিমানগুলো টিকতে পারবে কি না, তা তাইওয়ানের লোকেদের ভেবে দেখতে হবে। ২০২৭ সালের মধ্যেই চীন তাইওয়ান আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১৯৯২ সালে চীনের এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমান ঠেকাতে তাইওয়ান ৬০টি মিরাজ-২০০০-৫ মডেলের বিমান সংগ্রহ করে। এই যুদ্ধবিমানের এয়ারফ্রেম প্রায় ২৫ বছরের পুরনো। এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক বেশি। এটি ওড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টায় খরচ ২৮ হাজার ৫০০ ডলার।
তাইওয়ান বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৬৬টি এফ-১৬ ভাইপার পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। জে-১০সি মডেলের যুদ্ধবিমানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এফ-১৬ভি উতরে যেতেও পারে। কিন্তু পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ স্টিলথ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পেরে ওঠার সম্ভাবনা কম।