চিকিৎসকদের কর্মস্থলে থাকা নিশ্চিত করতে হবে : ইউনূস

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

চিকিৎসকদের যেখানে বদলি করা হবে তাদের সেখানে থাকাটা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানের বিষয়ে তুলে ধরা হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো বহুদিনের সমস্যা, এর মাধ্যমে আমরা যদি এসব সমস্যার সমাধান করতে পারি তা হবে যুগান্তকারী ঘটনা।
তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা বিরাজ করছে, সেগুলোর সমাধানে কমিশনের সুপারিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে যেসব সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একটি বড় সমস্যা হচ্ছে ডাক্তারের সংকট, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তার থাকলেও যেখানে দরকার সেখানে ডাক্তার নেই। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এটা ছাড়া সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের যেখানে পোস্টিং সেখানে থাকাটা নিশ্চিত করতে হবে।
কমিশনপ্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে এই কমিশনের সদস্যরা তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার নিকট হস্তান্তর করেন।এসময় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক লিয়াকত আলী, ডা. সায়েবা আক্তার, সাবেক সচিব এম এম রেজা, ডা. আজহারুল ইসলাম, ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি উমায়ের আফিফ উপস্থিত ছিলেন।
এর মধ্য দিয়ে দুই ধাপে গঠিত ১১ সংস্কার কমিশনের সবগুলো প্রতিবেদন সরকারপ্রধানের দপ্তরে জমা পড়ল
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপারিশসমূহ
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, সবার জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ, রেফারাল ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে। এটা স্বাস্থ্যের বর্তমান বাজেট দিয়ে সম্ভব। তাই, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। এছাড়াও দেশের যে কোনো হাসপাতালে অস্বচ্ছল ২০ শতাংশ রোগী যেন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবামূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠন : বিদ্যমান স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্যাডার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সব জনবল নিয়ে নতুন সিভিল সার্ভিস করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবিত এই সার্ভিসের নাম হবে ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস (বিএইচএস)’। শুধু তা-ই নয়, এই সার্ভিসের জন্য একজন চিকিৎসকের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র সচিবালয় করা, নিয়োগের জন্য আলাদা পিএসসি গঠন এবং পৃথক বেতনকাঠামোরও সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পদোন্নতি : স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা, এই তিনটি বিভাগে লাইন প্রমোশনের জন্য পর্যাপ্ত পদসোপান তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কর্মকর্তাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’-এ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগ পৃথককরণ : চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একাডেমিক ও সার্ভিস হাসপাতাল হিসেবে ভাগ করে তাদের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ স্ব-স্ব বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জনবল নিয়োগ ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ : নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বেই প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য ডিজিটাল হাজিরা ও সরেজমিনে তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বাজেট বরাদ্দ ও দালাল দমন : সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যার পরিবর্তে চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা অনুপাতে বাজেট বরাদ্দ এবং দালালদের দৌরাত্ম্য অবসানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ : চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের স্বার্থে ভারসাম্য রেখে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন এবং ল্যাবরেটরিগুলোর মান গ্রহণের জন্য একটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।

ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি : সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, আইএইচটি এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সদর জেনারেল হাসপাতালসমূহে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং ফিজিওথেরাপিস্ট পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা : গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব প্রদান এবং সরকার সুনির্দিষ্ট শর্তে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কেন্দ্রগুলো পরিচালনা আউটসোর্স করার সুপারিশ করা হয়েছে।