অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে জনদুর্ভোগ কমানো। সরকার এক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে বটে, বাজারে এর কোন প্রভাব দৃশ্যমান নয়। গতকাল শুক্রবার সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পিয়াঁজের দাম কিছুটা কমলেও চাল থেকে শুরু করে শাক-সবজিসহ সবকটি নিত্যপণ্যেও দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এতে মানুষের ভোগান্তি দিনের পর দিন বেড়ে চলছে। এখন শীতকাল, শুষ্ক মৌসুমে বাজারে বিপুল পরিমান শাক-সবজির সরবরাহ থাকলেও ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত প্রতিটি কাঁচা পণ্যের দাম হাকা হচ্ছে। গরু, ছাগল, মুরগি ও মাছের দামেও একই চিত্র। এখন নবান্নের মৌসুম। বাজারে উঠেছে আমনের নতুন ধান। এবার উৎপাদনও হয়েছে আশানুরূপ। ১০ দিনের মধ্যে ধানের দাম মনপ্রতি কমেছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। এরপরও চালের বাজারে অস্থিরতা চলছে। প্রতিটি চালের কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। ধানের ভালো ফলনের পরও উচ্চ মূল্যের চালের বাজার উদ্বেগজনক। বাজারের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মনে করেন, চালের বাজার অস্থিরতার পেছনে কাজ করছে বিগত সরকারের আমলের সিন্ডিকেট। বিশেষ করে মিল মারিকরা সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে চালের বাজার অস্থির করে তোলে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ বঙ্গ ও চট্টগ্রামের মিল মালিকরা অতীতে কারসাজি করে চালের দাম যেভাবে বাড়াতের এখনও সেই একই কায়দায় তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। একাধিক সূত্রমতে, চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কাজ করছেন আওয়ামীপন্থি মিল মালিকরা। এদিকে আমনের ভরা মৌসুমে চট্টগ্রামেও বাড়ছে চালের দাম। দুঃখজনক হলো, দাম স্থিতিশীল রাখতে শুল্ক প্রত্যাহার, বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির পরও বাজারে দামের প্রভাব নেই। প্রতি বস্তা চালের দাম ১৫ দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। নানা উদ্যোগ নেওয়া সত্তে¡ও কেন চালের বাজারের অস্থিরতা দূর হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। অপরদিকে দেশের প্রান্তিক জনপদ এখন সবুজে সমারোহ। নতুন নতুন শাক-সবজি যেমন সিম, বেগুন, মুলা, বাধা কপি, ফুল কপি, কাচা মরিচে গ্রামীন হাটগুলো ভোরের আলোয় উজ্জল হয়ে উঠে। শহর থেকে বেপারীরা গিয়ে ৩০/ ৪০ টাকা কেজিতে এসব সবজি কিনলেও শহরের আড়তও খুচরা ব্যবসায়ী কাছে ২ থেকে ৩গুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সবজি। নতুন আলুর দাম কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। পুরনো আলু ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। সমুদ্র মাছ কোনটিই কেজি ৬০০ টাকার নিচে নেই। দেশী প্রজাতির মাছ লুই, কাতাল ইত্যাদিও দামও ৩০০ টাকার নিচে নয়। মুরগির দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও স্বভাবিক বাজার দর বেশিই বলা যায়। সরকার ইতোমধ্যে আমদানিকৃত নিত্যপণ্যের উপর শুল্ক একপ্রকার তুলেই দিয়েছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করীদের ইতোমধ্যে হুঁশিয়ারি করা হয়েছে। আমরা মনে করি, সাবধানতা বা হুঁশিয়ারি নয়, সিন্ডিকেট বন্ধের কার্যকরি পদক্ষেপই বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রে কঠোর আইনি পদক্ষেপও জরুরি। চালসহ নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশে বিপুলসংখ্যক নিম্ন-আয়ের পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছে। দেশে বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষকে ঋণ করে খাবার কিনতে হচ্ছে। বহুদিন ধরেই এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রশ্ন হলো, যাদের ঋণ করার সুযোগ নেই তাদের কী হবে? বস্তুত সিন্ডিকেটের কারণেই চালের বাজারের অস্থিরতা দূর হচ্ছে না। ক্ষমতার পালাবদলের পরও চালসহ নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর হচ্ছে না, এটা দুঃখজনক। পরিবহন খাতেও চাঁদাবাজি কমেনি। দুঃখজনক হলো, সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা যেন স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হতে হবে।
বর্তমান দরিদ্র মানুষ অর্থের অভাবে সময়মতো চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছেন না। চালসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ পুষ্টিকর খাবার ক্রয় করার সামর্থ্য হারিয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম চড়া থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত বাধ্য হয়ে খাওয়া কমিয়ে দেয়। কাজেই যেভাবেই হোক, নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করতে হবে। এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, অসাধু ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম মানবিকতা বলতে কিছুই নেই। সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করে দ্রæত সব ধরনের পণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করতে হবে। বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তদারকির পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। অতিলোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।