নিজস্ব প্রতিবেদক
আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর উপজেলায় কোরিয়ান ইপিজেডে (কেইপিজেড) বিচরণকৃত চার হাতি রক্ষায় চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিকল্প আবাসস্থল গড়ে তোলা হবে। সেখানে হাতি উপযোগী জলাধার, খাদ্য ও আবাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসন এবং হাতি সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণে গঠিত কমিটি ও জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর দুইদিন চায়না ইকোনমিক জোন এলাকা পরিদর্শন করেছে বন বিভাগের একটি টিম। পুরো এলাকাটি হাতি বিচরণের উপযোগী হওয়ায় আনোয়ারা উপজেলা প্রশাসনের কাছে খাস জায়গার বিষয়ে তথ্য চেয়েছে বন বিভাগ।
পরিদর্শন টিমের প্রধান বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ পূর্বদেশকে বলেন, ‘চায়না ইকোনমিক জোন এলাকায় দুইদিন গিয়ে যা বুঝেছি জায়গাটি হাতি বিচরণের উপযোগী এবং হাতির আবাসস্থল করা যাবে। যে কারণে জায়গার রেকর্ড ও খতিয়ান দেখেছি। সেখানে বেশকিছু জায়গা বেজাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পুরো জায়গাটি সার্ভে করলে কিছু জায়গা বের হবে। যতটুকু জেনেছি প্রায় ৭২ একর জায়গা খালি আছে। বেজাকে বরাদ্দ দেয়া জায়গাগুলোও এখনো খালি রয়েছে। সবকিছু জেনেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডের কাছে জমির তথ্য চাওয়া হয়েছে।’
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসন এবং হাতি সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণে উপকমিটি গঠন ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দেয় মন্ত্রণালয়। কমিটিতে বন বিভাগের কর্মকর্তা, আইইউসিএন প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের রাখা হয়েছে। এ কমিটিকে ছয়টি নির্দেশনা পালন করে পরবর্তী তিন সপ্তাহের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন বা অগ্রগতি অর্জন করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই ছয় নির্দেশনার মধ্যে একটি হচ্ছে চায়না ইকোনমিক জোনে হাতি উপযোগী জলাধার, খাদ্য ও আবাসস্থলের সম্ভাব্যতা যাচাই। সবগুলো নির্দেশনার বিষয়ে ইতোমধ্যে গঠিত কমিটি প্রাথমিক অগ্রগতি সভা সম্পন্ন করে করেছে। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে সেখানে বিপত্তি দেখা দিয়েছে।
অগ্রগতি সভার তথ্য মতে, হাতি বিচরণে নিরাপত্তা বাড়াতে ও কার্যক্রম পরিচালনায় যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে যে অর্থব্যয় হবে তাতে কিছুটা আপত্তি রয়েছে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের। তারা ইতোমধ্যে বরাদ্দ না থাকায় এ ব্যয় বহনে দ্বিমত পোষন করেছেন।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কেইপিজেডের হাতি-মানুষের সৃষ্ট দ্ব›দ্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিনি হাতি সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহনে জোর দেন। ইতোমধ্যে কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধি সংক্রান্ত অফিস আদেশে বলা হয়, হাতির প্রতি বিরূপ আচরন করে হাতিকে যাতে ক্ষিপ্ত করতে না পারে এবং মানুষ-হাতির সহাবস্থান নিশ্চিত করতে কেইপিজেডের নিরাপত্তা প্রহরীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ, আইইউসিএন এর প্রতিনিধি হাতির মল, মূত্র অথবা বর্জ্য পরীক্ষার মাধ্যমে হাতি কোন কোন দিকে যাতায়ত করে তার রুট ম্যাপিং নির্ধারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়াও ২০১৯ সাল থেকে মানুষ হাতি সংঘর্ষে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর কনফ্লিক্ট ম্যাপিংয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রুট ম্যাপিং ও কনফ্লিক্ট ম্যাপিংয়ে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবে। বিভাগয়ী বন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করে এই টিমকে ২০ দিনের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যে ব্যয়ভাবে কেইপিজেড গ্রহণ করবে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে হাতির চলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার প্রয়োজন হলে কেইপিজেড ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইআরটিকে সাথে নিয়ে নিয়মিত গ্রামবাসীদের সাথে হাতি ও মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়ে জনমত গড়ে তুলবে। জেলা প্রশাসন, কেইপিজেড ও বন বিভাগের প্রতিনিধি একত্রে হাতি ও গ্রামবাসীর সুরক্ষায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে একটি মতবিনিময় সভা করবেন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কিছু কাজ শুরু করেছি। কেইপিজেডের সাথেও কথা বলেছি। ৫০জনের ইআরটি টিম গঠন করেছি। এছাড়াও চায়না ইকোনমিক জোন এলাকায় যে আবাসস্থল গড়ার কথা বলা হয়েছে সেখানে বন বিভাগের লোকজন পরিদর্শন করেছে। আমরা যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিল করবো।’