চাকরির নিয়োগে আবেদন ফি বাতিল বা ন্যূনতম করা হোক

2

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

শিক্ষা অর্জনের পর শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি হয় চাকরি নামক সোনার হরিণের। সেখানে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা। পদের চেয়ে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা হয় বহুগুণ বেশি। সেক্ষেত্রে গ্রামের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ে। গরীব ও মেধাবীরা আরো পিছিয়ে থাকে। পিছিয়ে থাকার কারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়, হতে পারে দরিদ্রতা কিংবা লবিং দুর্বলতা! এর ফলে বাড়তে থাকে বেকারত্বের হার। বাড়ে অসহায়ত্বের দীর্ঘশ্বাস।
বহুদিন ধরে চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদন ফি নিয়ে বিভিন্নভাবে বিতর্ক চলে আসছে। কেউ বলেন, আবেদন ফি ন্যূনতম করা যায়। কেউ বলেন একেবারে মওকুফও করা যায়।
চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই, ইন্টারভিউ কার্ড কিংবা লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র আসবে কি না, তারও গ্যারান্টি নেই অথচ তার আগেই গুনতে হয় আবেদন ফি!
আর এ টাকা নেওয়া হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেকারদের কাছ থেকে, যাদের আয়ের কোনোই পথ নেই।
নিয়োগকর্তারা হয়তো নিয়োগ-সংক্রান্ত খরচ মেটানোর কথা বলবেন। নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া, উত্তরপত্র মূল্যায়ন প্রভৃতি কাজে খরচ হবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এ খরচ কেন একজন বেকারের ঘাড়ে এসে পড়বে? আবেদন ফি কেন আকাশচুম্বি হবে?
চাকরির আবেদনের এই ফি নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে আমি মনে করি, ফি বাতিল করাই উচিত। কেননা একজন চাকরিপ্রার্থীকে যোগ্যতা অনুযায়ী অনেকবার আবেদন করতে হয়। আর সব আবেদনকারীকে সামর্থ্যবানও বলা যাবেনা। দরিদ্র পরিবারের অনেক সন্তান আছে যাদের দিনে দু’বেলা খাবারও জোটেনা। কষ্ট করে হয়তো লেখাপড়া করেছে, চাকরির জন্য আবেদন করেছে। ক্ষেত্রবিশেষে আবেদন ফি হয় মাত্রাতিরিক্ত। যা খুবই দুঃখজনক। বিভিন্ন মহল থেকে এ নিয়ে কথা উঠলেও কোন সুরাহা হয়না।
একজন শিক্ষার্থী সারাজীবন পড়ালেখা করার কারণে তার অনেক অর্থব্যয় হয়েছে। গরিব ও মেধাবি শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে, টিউশনি করে কিংবা কোন সহৃদয়বান ব্যক্তির সহযোগিতা নিয়ে পড়ালেখা করতে হয়েছে। বিভিন্নসময় এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকাগুলো। বিত্তবান লোকের ছেলেমেয়েরা হয়তো কোনধরনের কষ্ট ছাড়াই তাদের শিক্ষার পাঠ শেষ করে। যদিও তাদের সংখ্যা তত বেশি নয়। এমনিতে তাদের অনেক সন্তানসন্ততি বিদেশ গিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ওখানেই সেটেল্ড হয়। এখানেও বেশিরভাগ চাকরির দিকে ঝুঁকেনা। তারা তাদের বাবার ব্যবসাপাতি দেখাশুনা করে। সে হিসেবে মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাই চাকরির প্রতি আগ্রহী। চাকরির সুবাদে তারা মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে একটি ছোট্ট সংসারের স্বপ্ন দেখে।
এসব পর্যালোচনা করে বলা যায়, রাষ্ট্রের কাছে চাকরিপ্রার্থীদের এটুকু আবদারতো (আবেদন ফি মওকুফ) থাকতেই পারে। এতদিন এ বিষয়টি তেমন গুরুত্ব না পেলেও আমি মনে করি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইলে যে কোনভাবে এ বিষয়টি ম্যানেজ করতে পারেন। কারণ এটিও এক ধরনের বৈষম্যই বলা যায়। এমনিতে কত টাকা কতদিকে চলে যায়! অতিরিক্ত কোন একটি খাত থেকে এর ব্যয় মেটানো যেতে পারে।
অনেক চাকরিপ্রার্থী আছেন যারা আবেদন ফি দিতে দিতেই ফতুর হয়ে যান। ক্ষয় হয় জুতার তলা। শেষপর্যন্ত অনেকের চাকরিও হয়না। বেছে নিতে হয় প্রবাস জীবন বা অন্য কোন কাজ। এসব দেখলে মন খারাপ হয়। কষ্টের মাধ্যমে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেও চাকরি না হলে মনক্ষুন্ন হতে পারে যে কারোরই। এখন অবশ্য অনেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ক্ষুদ্রব্যবসা বা অন্য কোন কাজ করতে উদ্যোগী হচ্ছেন। এটা ভালো দিক। বেকারত্ব দূর করতে এটি সহায়ক হবে।
যেটা বলছিলাম, চাকুরির আবেদনে ফি বাতিল করার সময় এসেছে অথবা এমন একটি ন্যূনতম ফি নির্ধারণ হোক যা দিতে কারো পক্ষে কোনপ্রকার কষ্ট হবেনা। এটা প্রতি নিয়োগ পরীক্ষার জন্য একই রাখাই উচিত হবে বলে মনে করি।
উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, নানা কারণে চাকরির নিয়োগে আবেদন ফি সম্পূর্ণ বাতিল করাই যুক্তিসংগত। না হলে ফি করা হোক একেবারেই ন্যূনতম যা দিতে চাকরিপ্রার্থীদের কোন ধরনের কষ্ট হবেনা। এর মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা কোনপ্রকার চাপ ছাড়াই নিয়োগ পরীক্ষায অংশ নিতে পারবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট