চসিক মেয়রের প্রশংসনীয় উদ্যোগ

1

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন গতকাল সোমবার বিকালে সংস্থাটির অধীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরিরত ২৯৫জন শিক্ষক-চিকিৎসককে স্থায়ীকরণ করেছেন। মেয়রের এ পদক্ষেপকে ঐতিহাসিক এবং সাহসী সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজন, শিক্ষক নেতা ও চিকিৎসকরা। সূত্র জানায়, বিগত ২০০৬ সাল থেকে শুরু করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ২৯৫জন অস্থায়ী শিক্ষক, চিকিৎসক, কনসালটেন্ট, পরিদর্শককে স্থায়ীকরণ করেন চসিক কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে ১৭৪ জন কিন্ডারগার্টেন, প্রাইমারি ও মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক, ৭৮ জন কলেজের প্রভাষক, ১৫ জন পুরুষ ও ১৫ জন মহিলা চিকিৎসককে মেডিকেল অফিসার পদে, ২ জন কনসালটেন্ট পদে, ৮ জন স্বাস্থ্য সহকারী পদে এবং ৩ জনকে স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। এসব শিক্ষক ও চিকিৎসকরা বিগত প্রায় দুই জন মেয়রের আমলে নিয়োগ পেলেও জন প্রতিনিধিদের অনাগ্রহ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়নি। ফলে তাদের স্বল্প বেতনে দীর্ঘদিন টানাপোড়নের মাধ্যমে তাদের জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। বর্তমান নগর জীবনে যেখানে বাসা ভাড়া, নিত্যপণ্যসহ উর্ধ্বমুখী জিনিসপত্রের বাজারে একজন মানুষের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে, সেখানে একজন স্কুল শিক্ষক বেতন পেতেন সর্বোচ্চ ১৭ হাজার টাকা আর কলেজ শিক্ষক পেতেন ২৬ হাজার টাকা। চিকিৎসকদের অবস্থাও অনুরূপ ছিল। বিগত চার বছর আগে যখন করোনা মহামারিতে দেশ পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছিল, তখন এসব অস্থায়ী শিক্ষকদের দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছিল। অনেক শিক্ষক পরিবারকে গ্রামে রেখে এ শহরে চাকুরির জন্য কোনরকম কারো আশ্রয়ে থাকতে হতো। ভুক্তভোগী একজন শিক্ষক গতকাল মেয়রের চাকরি স্থায়ীকরণের ঘোষণার পর অশ্রুসজল নয়নে কাঁদতে দেখা যায়। একজন সাংবাদিক তাঁকে খুশির খবরের পর কাঁদতে দেখে কেন চোখের পানি! জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলেন, ‘দীর্ঘ ১৩ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটালেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। অতীতে মেয়র, চসিকের কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি, কাউকে হৃদয়ের যন্ত্রণা, মনের দুঃখ, সামাজিক ও পারিবারিক সম্মান ও কষ্টের কথা বুঝাতে পারিনাই। সবাই আশ্বাসই দিয়েছেন তবে আমলাদের বিধিবিধানের মারপ্যাঁচে আমাদের উপেক্ষায়ই করে গেছেন। কিন্তু মেয়র ডাঃ শাহাদাত আমাদের মনের কথা, আমাদের চোখের ভাষা বুঝেছেন, তিনি আমাদের অপেক্ষার প্রহরের ইতি টেনেছেন। আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করেছেন। তিনি বাস্তবেই জনতার মেয়র। তিনি সত্যিকারের জনদরদী ও মানবিক জনপ্রতিনিধি। মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই তাঁকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। গতকালের সিটি কর্পোরেশন টাইগারপাস কার্যালয়ে দেখা যায় শত শত শিক্ষক-চিকিৎসকের কারো মুখে হাসি কারো চোখে আনন্দশ্রু। উল্লেখ্য যে, গতকাল সোমবার মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নির্ধারিত সফরে কানাডার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন বিকাল সাড়ে চারটায়। বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে চসিক কনফারেন্স হলে সংক্ষিপ্ত এক সভায় চসিক কর্মকর্তা, কর্মচারি, শিক্ষক-চিকিৎসকদের সামনে বহুল প্রত্যাশিত এ ঘোষণা দেন। এসময় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেও অনেকেই স্থায়ীকরণের অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা ন্যায়ভিত্তিক যাচাই-বাছাই শেষে উপযুক্তদের স্থায়ী করেছি। বাকিদেরও ধাপে ধাপে স্থায়ী করা হবে।’ মেয়র জানান, ‘দায়িত্ব পালনকারীদের সম্মান ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা স্বচ্ছতা, মেধা ও নিষ্ঠার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করেছি, যাতে সিটি কর্পোরেশনের সেবা আরো দক্ষ ও গতিশীল হয়।’ বলাবাহুল্য, ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের চার মাস পর নভেম্বরের ১৮ তারিখ এক আইনি লড়াইয়ে জিতে ডা. মাহাদত হোসেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর, চট্টগ্রামকে একটি উন্নত গ্রিন, কিøন, হেলদি নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। নিজেই প্রতিটি ওয়ার্ড-মহল্লায় গিয়ে কাজের তদারকিসহ চসিককে স্বাবলম্বি, নগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কওে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘স্টুডেন্ট হেলথ কার্ড’ চালু করে পুরো দেশের আলোচনায় এখন মেয়র শাহাদাত। কারণ এ জাতীয় কর্মসূচি দেশে এটিই প্রথম। এছাড়া ঈদুল আজহার আগে চসিকের সাধারণ বিভাগের দেড় শতাধিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিকে স্থায়ী করেছেন মেয়র। এরপর এটি মেয়র মহোদয়ের স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ও দ্বিতীয় পদক্ষেপ। আমরা মনে করি, মেয়রের এ পদক্ষেপ সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে যেই কারণে একটি স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে মূল্যায়ন করা হয় তা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। ১৯২৭ সালে পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান নুর আহমদ পৌরসভার অর্থায়নে অবৈতনিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ প্রায় একশত বছরধরে সিটি কর্পোরেশন শিক্ষাখাতকে লালন করে আসছে। চট্টগ্রামে শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার মানোন্নয়নে সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক অবদান রেখে আসছে। মেয়রের এ প্রশংসনীয় উদ্যোগ শিক্ষার অগ্রগতি ও মনোন্নয়নে শিক্ষকদের আগ্রহ আরো বাড়াবে-এনটি প্রত্যাশা নগরবাসীর।