চরম শিক্ষক সংকট, আটকে আছে নিয়োগ পরীক্ষার ফল

1

ইকবাল ফারুক, চকরিয়া

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজে শিক্ষক সংকট কাটছে না। বর্তমানে এ কলেজে ১ হাজার ৮৫৭ জন ছাত্রী লেখাপড়া করছেন। চরম শিক্ষক সংকটের কারনে কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কার্যক্রম।
শিক্ষক সংকট কাটাতে গত তিনমাস আগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হলেও এখনো প্রকাশ হয়নি ফলাফল। এ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে অধ্যক্ষের পদটিও শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়েই চলছে কলেজের কার্যক্রম। শিক্ষক সংকট থাকায় অনেক বিভাগেই হচ্ছে না নিয়মিত ক্লাস। গত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও এ প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রমের নেতিবাচক চিত্র ফুটে উঠেছে।
জানা গেছে, চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজের শিক্ষক শূন্যতা কাটাতে গত ৮ জুন অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে ৮ জন খন্ডকালীন প্রভাষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে গত ২৪ আগস্ট ৬টি বিষয়ে ৬৩ জন পরীক্ষার্থীকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত করে তালিকা প্রকাশ করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
ওই তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও তৎকালীন কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মো. ফখরুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. এরফান উদ্দিনের উপস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন মাস পার হলেও এখনো ফলাফল প্রকাশ করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। মৌখিক পরীক্ষার জন্যও ডাকা হয়নি উত্তীর্ণদের।
গত ৬ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অ্যাডহক কমিটি দেয়। এতে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন ফরায়েজীকে সভাপতি মনোনীত করা হয়।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার একমাত্র মহিলা কলেজটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে এমপিওভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ডিগ্রি এবং ২০১৭-১৮ সালে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু হয়। এ কলেজে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ১ হাজার ১২৩ জন। ডিগ্রি (পাস কোর্স), স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থী আছে ৭৩৪ জন। রয়েছে দু’টি একাডেমিক ভবনও।
কলেজে সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও প্রদর্শক পদ আছে ৩৪টি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদ আছে ৯টি। একাদশ, দ্বাদশ ও স্নাতকে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে তিনটি পদ খালি আছে। জীববিজ্ঞানে কোনো শিক্ষক নেই। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে শিক্ষক আছে একজন, বাকী পদ শূন্য। অথচ ছাত্রীদের জন্য এ বিষয়ে পাঠ নেওয়া বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। ল্যাব চালু নেই, ল্যাব সহকারী পদও শূন্য রয়েছে। আইসিটি ল্যাব প্রদর্শক পদ থাকলেও, শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়নি আজও।
জীববিজ্ঞান ও ইংরেজির প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া তিনজন পরীক্ষার্থী বলেন, যথা নিয়মে আমরা আবেদন করেছিলাম। পরে যাচাই-বাছাই শেষে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হই। লিখিত পরীক্ষা দিয়ে তিন মাস ধরে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়নি। শুনেছি, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কোনো এক অদৃশ্য শক্তির চাপের মুখে নাকি এই নিয়োগ আটকে গেছে। আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশ না করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তারা।
কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বেশ কয়েকজন ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার কারনে আইসিটি বিষয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। প্রতিদিন একটি বা দু’টি বিষয়ে ক্লাস না করেই শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফিরতে হয়। অনেকটা অনিশ্চয়তা নিয়েই কলেজে যেতে হয় তাদের। শিক্ষক সংকট, মানসম্মত পাঠদান ও ল্যাব ক্লাস না হওয়ার কারণে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সংখ্যাও দিনদিন কমে যাচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে গত এইচএসসি পরীক্ষায় ৪৬ শতাংশ ছাত্রী পাশ করেছে। কিন্তু ২০২৩ সালে পাশের হার ছিল ৭৩ শতাংশ। কলেজে বিপুল সংখ্যক ছাত্রীর জন্য ক্যান্টিন ও কমনরুম নেই। নেই খেলার মাঠও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন প্রভাষক বলেন, কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে ৮ জন শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তখন শতভাগ স্বচ্ছভাবে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস হলেও এখনো ফল ঘোষণা করা হয়নি।
চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জুবাইদুল হক বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে কমসংখ্যক শিক্ষক দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কলেজে শ্রেণিকক্ষ আছে ১১টি। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে অনেক সময় একরুমে তিনটি ক্লাস এক সঙ্গে করতে হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তত আরও ১২টি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন। শিক্ষকসংকট দূর করতে প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে ৮ জন প্রভাষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।