চমেক হাসপাতালে এসি বিস্ফোরণ

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এয়ার কন্ডিশন (এসি) মেরামতের সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন শ্রমিক মো. শওকত ওসমান (৩৫)। গতকাল সোমবার বিকেলে চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত শওকত নগরীর পতেঙ্গা থানার বিজয় নগর এলাকার বাসিন্দা।
চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, সকালে হাসপাতালের ছয়তলা ভবনের এসি মেরামতের কাজ করছিলেন তিন শ্রমিক। তারা গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক ঠিকাদারের অধীনে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করছিলেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ একটি এসির কম্প্রেসার বিস্ফোরিত হলে তিনজনই দগ্ধ হন। গুরুতর আহত শওকত ওসমানকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়, আর বাকি দুইজনকে হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হলেন চকবাজারের কালাম কলোনির তানভীর (৩০) এবং বাঁশখালীর বাহারছড়া এলাকার মিশকাত (১৮)।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বিস্ফোরণের সময় শওকত ছয়তলা থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যায় এবং মাথায়ও গুরুতর ইনজুরি হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মারা যান।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক বলেন, ‘আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন শওকত। বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আহত আরও দুই শ্রমিকের অবস্থা এখন স্থিতিশীল।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তাসলিম উদ্দিন বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তিন শ্রমিক ছয়তলা ভবনের ছাদে এসি মেরামতের কাজ করছিলেন। হঠাৎ কম্প্রেসার বিস্ফোরিত হলে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দ্রæত ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। হাসপাতালের কোনো রোগী বা স্টাফ আহত হননি, তবে শ্রমিকরা গুরুতর দগ্ধ হন।’প্রত্যক্ষদর্শী এক হাসপাতাল কর্মচারীরা জানান, ‘বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম ভবনের কোনো অংশ ধসে পড়েছে। দগ্ধ তিনজনকে চিৎকার করতে দেখেছি। আমাদের কয়েকজন স্টাফ দৌড়ে গিয়ে তাদের নিচে নামিয়ে আনেন। তখন শওকতের শরীর প্রায় সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল।’
শওকতের এক সহকর্মী বলেন, ‘আমরা প্রায়ই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এসি মেরামতের কাজ করি। আজকেও শওকত ভাইয়ের কাজ ছিল সাধারণ দিনের মতোই। হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় শেষ করে দিলো সব। শওকত ভাই আমাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন। সবাই তাকেই অনুসরণ করত।’
চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. মো. জুলফিকার জানান, ‘শওকতের শরীরের প্রায় ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। সঙ্গে মাথায় আঘাত পাওয়ায় রক্তক্ষরণও হয়। এত গভীর দগ্ধ অবস্থায় বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য থাকে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
এদিকে হাসপাতালের ভেতরে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কর্মচারী ও রোগীস্বজনদের মধ্যে। এক নার্স বলেন, ‘এত বড় হাসপাতালে নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল। এসি রক্ষণাবেক্ষণের সময় কেন নিরাপত্তা গিয়ার বা গ্যাস টেস্টিং করা হয়নি, সেটা প্রশ্ন।’
চট্টগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিস্ফোরণের সময় আমাদেরকে জানানো হয়নি। তবে আমরা টিম পাঠিয়ে কারণ জানার চেষ্টা করবো।’
ময়নাতদন্ত শেষে নিহত শওকতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালেই তার লাশ পতেঙ্গা বিজয় নগরে নিজ বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
একই ঘটনায় আহত তানভীর ও মিশকাত এখনো হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও মানসিকভাবে আতঙ্কে আছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ক নতুন নির্দেশনা দিয়েছি। ভবিষ্যতে কোনো রক্ষণাবেক্ষণ কাজের আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কাউকে কাজ করতে দেওয়া হবে না।’