চমেক হাসপাতালের সব ওয়ার্ডে হকারের উৎপাত

29

সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশনা থাকলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতেও দেখা যায় হকারদের উৎপাত। হাসপাতালের কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশ থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন। এতে প্রায় সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীর মূল্যাবান জিনিস ও ওষুধপত্র চুরির ঘটনা ঘটছে। বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।
এদিকে গত ১৪ আগস্ট স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী দেশের সব সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ও কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নিরাপত্তা নিয়ে। প্রতিমন্ত্রী ওই সভায় সব হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন। হাসপাতালে ভিজিটরদের সময় নির্ধারিত করে দেওয়া, নির্দিষ্ট একটি ভিজিবল স্থানে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের ফোন নম্বর দেওয়া, সিসি ক্যামেরা বসানো, নজরদারি বাড়ানো, আর্চওয়ে এবং মেটাল ডিটেক্টর বসানোর কথা বলা হয়। সবকিছুর পরেও অসাধু কর্মচারীদের কারণে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালে যাদেরকে নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা নিজেরাই যদি নিরাপত্তা ভঙ্গ করার কাজে সহযোগিতা করে তাহলে কোনদিন শৃঙ্খলা ফিরবে না। তাই সবার আগে হাসপাতালে অসাধু কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে।
সরেজমিনে চমেক হাসপাতালের ১৩, ১৪, ২৬নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে- হাসপাতালের প্রবেশ পথে আনসারদের একটি টিম দায়িত্বে রয়েছে। নিচতলা থেকে উপরে উঠতে সিঁড়িতে রয়েছে নিরাপত্তাকর্মী। আর প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের প্রবেশ পথে রয়েছে দারোয়ান। এছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীর সাথে একজন অভিভাবক ঢুকার অনুমতি রয়েছে। দালালদের দৌরাত্ম নির্মূল করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের জন্য পাসকার্ডের ব্যবস্থাও করেছে। কেউ যদি ওয়ার্ডে যেতে চায় তাহলে তাকে নিচতলা নির্দিষ্ট বুথ থেকে পাসকার্ড নিয়ে যেতে হবে। এতকিছুর পরও হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে বহিরাগত হকারদের উৎপাত বেড়েছে। চমেক হাসপাতালের ভেতরে হকারদের কেউ চা, কেউ পান ও সিগারেট বিক্রি করছে। কর্মচারীদের সাথে কথা বলে পান, সিগারেটের বক্স নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করছেন বলে জানান কয়েকজন চা বিক্রেতা। এখানে কোনও ধরনের নিরাপত্তা নেই। যে যেমন খুশি যাতায়াত করছে।
চমেক হাসপাতালের ১৩নং ওয়ার্ডের সামনে এক চা বিক্রেতা জানান, কর্মচারীদের বিনা পয়সায় চা খাওয়ালে তারা ওয়ার্ডে প্রবেশের অনুমতি দেন। এভাবে তিন থেকে চার ঘণ্টা অবস্থান করার সুযোগ পান তারা। রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছে চা বিক্রি করে কিছু টাকা আয় হয়।
অন্য একজন ভাসমান হকার জানান, নিরাপত্তাকর্মীরদের ২০ থেকে ৩০ টাকা দিয়ে হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করি। তারপর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে পান সিগারেট বিক্রি করি।
সূত্র জানায়, হাসপাতালের ওয়ার্ড গুলোতে বহিরাগতদের দৌরাত্ম থাকায় বিভিন্ন সময় চুরির ঘটনা ঘটছে। প্রায় সময় রোগী ও তাদের স্বজনদের মূল্যবান জিনিস ও ওষুধপত্র চুরির অভিযোগ আসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানা সময়ে অভিযান চালিয়ে অনেক চোর চক্রের সদস্যদের আটকও করেছে। তবুও থামছে বহিরাগত হকারদের উৎপাত।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভূইয়া বলেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রচেষ্টা সবসময় অব্যাহত রয়েছে। আমাদের টিম নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করছে। রোগী ও তাদের স্বজনরা চিকিৎসা নিতে এসে যাতে কোন ধরনের ভোগান্তিতে না পড়ে সেজন্য আমরা কাজ করছি।
চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের রোগীদের সেবা পেতে মূল বাধা হলো দালাল চক্র। তাদের সাথে জড়িত আছে হাসপাতালের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। আমরা চেষ্টা করছি দালাল মুক্ত করে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে। হাসপাতালে দালালদের উৎপাত বন্ধে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এতে দালালদের উৎপাত অনেক কমে যাবে। সেই সাথে রোগীদের ভোগান্তিও কমে যাবে বলে আশা করছি।