চমকে যাওয়ার মত আর কত ঘটনা ঘটবে ?

2

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) যেন এক অনিয়ম ও অমানবিক সব ঘটনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাস্থ্যসেবার প্রধান হাসপাতাল এটি। কিন্তু এখানে যেসব কর্মচারি কাজ করেন বিশেষ করে ওয়ার্ড বয়, নার্স, আয়া এমনকি কিছু কিছু চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও মাঝেমধ্যে গুরুতর অভিযোগ উঠে। সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান চুরি ও বেচাকেনা, সরকারি ওষুধ রোগীদের না দিয়ে বাইরে বিক্রি করা, দালালদের মাধ্যমে রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করানো,প্যাথলজিক্যাল টেস্ট মেডিকেলে না করে বাইরে করানোর জন্য রোগীদের বাধ্য করানো, রোগী ও স্বজনদের বকশিসের নামে ঘুষ প্রদানে বাধ্য করা সহ ব্লাড ডোনেশন, আইসিইউ এডমিন থেকে শুরু করে রোগী ও স্বজনদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের কথা সংবাদপত্রে প্রায় শিরোনাম হতে দেখা যায়। এরমধ্যে রয়েছে কথায় কথায় নার্স, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিসহ স্বাস্থ্যসেবার বিপরীতে নানা কর্মসূচি। যা শুধু অনিয়মই নয়, অমানবিকও বটে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃত। অথচ বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রধান স্বাস্থ্য নিকেতনে মানুষের অধিকার হরণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদনটি পড়লে গা শিউরে উঠে। কত বড় নিষ্ঠুর হলে একজন ওয়ার্ড বয় টাকার লোভে একজন নবজাতকের মুখ থেকে অক্সিজেন খুলে নিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে! পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭দিন আগে চকরিয়ায় জমজম হাসপাতালে এ নবজাতকের ভূমিষ্ঠ হয়। এরপর শিশুটি নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। ৯ মার্চ শিশুটিকে চমেক হাসপাতালের ৩২ নং ওয়ার্ডের ৩০ নং বেডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। শিশুটি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটে গত শনিবার। সকাল ১০টায় শিশুটির অক্সিজেনের পানি শেষ হয়ে গেলে শিশুটি আবারও অসুস্থ হতে দেখে বাবা বেলাল ওয়ার্ড বয়কে নতুন পানি দিতে অনুরোধ জানান। এসময় ওয়ার্ড বয় আগে বখশিস দাবি করে বসেন এবং পানি সরবরাহ বন্ধই রাখেন। এরমধ্যে ওয়ার্ড পরিষ্কারের কথা বলে অনেকটা জোর করে শিশুটির মা বাবাকে বের করে দেন। কিছুক্ষণ পর যখন মা বাবা ওয়ার্ড এ আসেন তখন তাদের সেই আদরের শিশুটিকে আর জীবিত দেখতে পান নি। নিথর দেহ বেডে পরে আছে। কী নির্মম ও নিষ্ঠুরতা! সামান্য বখশিসের লোভে একটি শিশুর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিল পাষন্ড ওয়ার্ড বয় ! শিশুটির বাবা বেলাল অভিযোগ করেছেন, ওয়ার্ড বয় বখশিস না পাওয়ায় তার সদ্যবজাত শিশুকে অক্সিজেনের পানি বন্ধ করে হত্যা করেছে। তিনি আরো অভিযোগ করেছেন, ভর্তির পর থেকে অক্সিজেনসহ নানা বিষয়ে ওয়ার্ড বয়, আয়া ও অন্যান্যরা শুধু বখশিসই দাবি করে আসছিলে। প্রতিবার অক্সিজেনের পানি দেয়ার জন্য ২০০ টাকা করে বখশিসের নামে ঘুষ আদায়ের কথা তিনি জানান। এ ঘটনা চট্টগ্রামে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেলের অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রায় সময় পত্রিকার শিরোনাম হয়, কিন্তু গত শনিবারের ঘটনা যে কেউকে নাড়া দিবে। যদি অভিভাবকের অভিযোগ সত্য হয়, তবে ধরে নিতে হবে এটি একটি নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড। এটির সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত বয়কে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এর দায় নিতে হবে। আমরা অতীতে দেখেছি, অপারেশনে চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা, সদ্যভূমিষ্ঠ শিশু চুরি হওয়ার ঘটনা, সরকারের দেয়া বিনামূল্যের রোগীর ওষুধ বাইরের ওষুধের দোকানে বিক্রি করার মত ঘটনা হাতেনাতে ধরা পড়লেও এসব অপরাধের বিচার শেষ পর্যন্ত পথে আটকে যায়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মত একটি গণচিকিৎসালয়ে এ জাতীয় ঘটনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিলে অপরাধের মাত্রা কিছুটা হলেও হ্রাস পেত। মানুষ মেডিকেলে আসে বাঁচার আকুতি নিয়ে। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স বা ওয়ার্ড বয়ের অবহেলা, উপেক্ষা কিংবা অনিয়মের বলি হয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করলে এর দায় অবশ্যই মেডিকেল কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায়। আমরা আশা করি, মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত ওয়ার্ড বয়ের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেবেন।