চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামীকাল রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের পরীক্ষা আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুষ্ঠু পরীক্ষার ধারা অব্যাহত রাখতে এবছর বেশ কিছু নির্দেশনা যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর মিছিল-মিটিংয়ে নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে পোস্টার সাঁটানো, ব্যানার টাঙানো, লিফলেট বিতরণ, দেওয়ালে চিকা মারা ও বুথ বসানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এমনকি ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে সকল ধরনের নোট, শিট, সাজেশন ও মডেল টেস্ট বিক্রয়ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খবর বাংলানিউজের
এবছর চবির আইসিটি সেলের অধীনে থাকবে একটি এন্টিপ্রক্সি টিম। যার মাধ্যমে যেকোনও ধরণের ভর্তি জালিয়াতি রোধ করা হবে। একইসঙ্গে জালিয়াতি রোধে পূর্বের অভিযুক্তদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তাই নিরাপত্তা বাহিনী সহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা মাঠে সক্রিয় থাকবে। পাশাপাশি র্যাগিং প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘সিইউ স্টুডেন্ট কমপ্লেন সেল’ নামক একটি ওয়েবপেজ চালু করেছে গত ২১ অক্টোবর। কর্তৃপক্ষের সাঁটানো বিভিন্ন ব্যানারে ওয়েবপেজটির লিংক দেওয়া থাকবে। এতে ভুক্তভোগীরা নিজেদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগকারীর নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় গোপন রাখার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সূত্র জানায়, ভর্তি পরীক্ষার সময় পুলিশ, র্যাব, ডিবি, ডিএসবিসহ সাত শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া ভর্তি জালিয়াতি ঠেকাতে ডিজিএফআই, এনএসআই’সহ হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর ১২০ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া হবে। সকল ধরনের পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট, চিকা মারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে যেসব পোস্টার ও চিকা মারা হয়েছে সেগুলো অপসারণের কাজও চলছে। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ছাত্রসংগঠনগুলোর মিছিল-মিটিংয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে পারবে তারা।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল হোটেল ও খাবারের দোকানে নির্ধারিত মূল্যের তালিকা সাঁটানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে ক্যাম্পাসের ভেতরে সকল ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এসএম আকবর হোছাইন বলেন, প্রশ্ন ফাঁসসহ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল অভিযোগ কেন্দ্রে প্রবেশের এক ঘন্টা পূর্বে লিখিতভাবে ইউনিট কো-অর্ডিনেটরকে জানাতে হবে। নেকাব ও বোরকা পরিহিত ছাত্রীরা মুখমÐল ও কান প্রদর্শন করতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল, স্মার্ট ঘড়িসহ যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে অ্যান্টি প্রক্সি অ্যাপস ব্যবহার করবেন দায়িত্বরতরা। পরীক্ষার দিন সকাল ৮টায় হল প্রভোস্টরা প্রত্যেকটি হল পরিদর্শন করবেন। ভর্তি পরীক্ষার ৪৮ ঘণ্টা আগে আসন বিন্যাস ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত করণের বাধ্যবাধকতা নেই।
দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছাত্রী ও মহিলা অভিভাবকদের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেখ হাসিনা হলে বিশ্রাম ও ওয়াশরুম ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া অভিভাবকদের জন্য বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেনের প্লাটফর্ম ‘নগদ’ এর স্পন্সরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছাউনি এবং পরীক্ষাকেন্দ্রের বাহিরে প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায় ছাত্রলীগের ‘অ্যান্টি র্যাগিং টিম’, ‘মেডিক্যাল টিম’, ‘তথ্য সহায়তা টিম’, ‘জয় বাংলা জরুরি বাইক সার্ভিস টিম’ কাজ করবে বলে জানিয়েছেন চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল।
প্রসঙ্গত, এবছর ভর্তি পরীক্ষায় চারটি ইউনিট ও দুইটি উপ-ইউনিটের মোট ৪ হাজার ৯২৬টি আসনের বিপরীতে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭০ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এবার ভর্তি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় ৩০ হাজার বেশি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাহিরে দুটি ইউনিটের পরীক্ষা পার্শ্ববর্তী হাটহাজারী সরকারি কলেজে অনুষ্ঠিত হবে। হল প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকরা হলগুলো পরিদর্শন করবেন।
উল্লেখ্য এবার ১ম বর্ষের (স্নাতক সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা ‘বি’ ইউনিট ২৭ অক্টোবর, ‘ডি’ ইউনিট ২৮ অক্টোবর, ‘এ’ ইউনিট ২৯ অক্টোবর, ‘সি’ ইউনিট ৩০ অক্টোবর এবং ‘বি ১’ ও ‘ডি ১’ উপ-ইউনিট এর ভর্তি পরীক্ষা ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।