চন্দনাইশ প্রতিনিধি
চন্দনাইশে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সর্বত্র দিন-রাত ফসলি জমি থেকে অর্ধ শতাধিক মাটি কাটা সিন্ডিকেট বেপরোয়াভাবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাটি কাটছে চক্রগুলো। প্রায় সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না কৃষি জমির উপরের মাটি কাটার মতো গুরুতর ক্ষতিকর কার্যক্রম।
মাটি দস্যুরা কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে স্কেভেটর দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে ড্রাম ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে ইটভাটা, পুকুর, ডোবা, নতুন বাড়ির জায়গায় মাটি ভরাট করছে। মাটি কাটায় নিয়োজিত ড্রাম ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান থেকে মাটি পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হচ্ছে। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রতিটি সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে যান ও মানুষ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। অন্যদিকে তপ্ত রোদে ধূলিময় হয়ে থাকে সড়ক। ফলে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চালকেরা দুর্ভোগ পোহান। এতে বাড়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
জানা গেছে, অনেক কৃষক বেশি লাভের আশায় তাদের ফসলি জমির উপরের মাটি বিক্রি করে দেন। কিন্তু কৃষকরা বুঝতে পারছেন না এই উপরের মাটি চলে যাওয়ার কারণে কৃষি উৎপাদনে ভাটা পড়ছে। কৃষি উৎপাদনে এই মাটিই বড় ভ‚মিকা রাখে। নিচের মাটি কৃষির ফলন ফলাতে কোনো ভ‚মিকা রাখেন না। আবার মধ্যরাতে কৃষকের জমির মালিককে না জানিয়েই কেটে নিয়ে যাচ্ছে ফসলী জমির টপসয়েল। ফসলি জমির টপসয়েল কাটার কারণে কৃষি জমি ধ্বংস, সড়কগুলো নষ্ট ও ধুলাবালির কারণে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে গেলে জমির ঊর্বরতা হারিয়ে সে জমিতে ১৩ বছর ধরে ফসল উৎপাদন হয় না। মাটি দস্যুরা দিন-রাত মাটি কাটায় ব্যবহার করছে ড্রাম ট্রাক, পিকআপ ভ্যান। এসবের শব্দেও এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। বিশেষ করে রাত ১১ টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন, ২টি পৌরসভার বিভিন্ন বিলের ধানি জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা। অনেক সময় জমির মালিকও জানে না কে বা কারা তার জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। মাটিকাটা চক্রের লোকজনের বেপরোয়া আচরণে এলাকাবাসী তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। মাটি বহনকারী ড্রাম ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানের বেপরোয়া গতি প্রায়ই মানুষকে হতাহত করছে। বিগত ১৫ বছর ধরে একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে টপসয়েল কেটেছে মাটি দস্যুরা। এ সকল সিন্ডিকেট ৫ আগস্টের পর পর নিজেরাই রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করে এখন আগের মতোই মাটি কেটে বিক্রি করছে। কৃষি জমির টপসয়েল কাটার পাশাপাশি উপজেলার পাহাড়ি এলাকার টিলা কেটে পরিবেশ ধ্বংস করছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা, বিনাশ্রম কারাদন্ড, ট্রাক ও স্কেভেটর জব্দ করেও কোনোভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না মাটি কাটা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন, ২টি পৌরসভায় অর্ধ শতাধিক মাটি কাটা সিন্ডিকেট দিনের চেয়ে রাতে বেশি ফসলি জমি ও পাহাড়ের টিলার মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব মাটি তারা বিক্রি করছে বিভিন্ন ইটভাটায়, পুকুর, ডোবা বা নতুন বাড়ির জায়গায় মাটি ভরাট ও নিচু জমি ভরাট করার কাজে। উপজেলার পাহাড়ি এলাকা কাঞ্চননগর, লর্ড এলাহাবাদ, হাশিমপুর, ধোপাছড়ি, বৈলতলী, চন্দনাইশ পৌরসভা, জোয়ারা, বরকল, বরমা, সাতবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি দস্যুরা। দক্ষিণ হাশিমপুর বড়পাড়া এলাকায় কৃষি জমির মাটি কেটে পুকুরে পরিণত করেছে। একইভাবে সাতবাড়িয়া হাছনদন্ডী এলাকায় খননকৃত জতখাল ভরাট করে ফেলেছে মাটি দস্যুরা। পাশাপাশি সড়কের সেতুর পাশ থেকে কৃষি জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে সেতুটিও হুমকির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
চন্দনাইশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ডিপ্লোমেসি চাকমা বলেন, প্রতিদিন মাটি কাটা লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে অর্থদন্ড, বিনাশ্রম কারাদন্ড, মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত স্কেভেটর, ড্রাম্পার, ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিব হোসেন বলেন, মাটি কাটার সংবাদ পেলে যত রাতই হোক অভিযানে চলে যাচ্ছি। আমরা দিন-রাত মাটি কাটা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি।