চন্দনাইশে চাষাবাদ করে লাভবান মহেশখালীর কৃষকেরা

1

মো. শাহাদাত হোসেন, চন্দনাইশ

চন্দনাইশে চলতি বোরো মৌসুমে মহেশখালীর কৃষকেরা জমিতে চাষাবাদ করে লাভবান হয়েছেন। মহেশখালীর ৩০ জনের অধিক কৃষক চন্দনাইশের বিভিন্ন বিলে খাজনায় জমি নিয়ে বোরো ধানের চাষ করে লাভবান হয়েছেন। কারণ চলতি মৌসুমে লবণাক্ততা তেমন না থাকার কারনে বাম্পার ফলন হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শহীদ মুরিদুল আলম সড়কের (বরকল সড়ক) দুই পাশে সারি সারি করে রাখা হয়েছে ধান। কেউ ধান মাড়াচ্ছেন, কেউ ধান মাড়িয়ে গাড়িতে তুলছেন, কেউ ধান কেটে ট্রাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন মহেশখালীতে। বেশ কয়েক বছর ধরে অর্ধ শতাধিক কৃষক চন্দনাইশের বিভিন্ন বিলে চাষাবাদ করে আসছেন লাভের আশায়। চলতি মৌসুমে সময়মত জমিতে ধান রোপণ, পরিচর্যা এবং আবহাওয়া অনুক‚লে থাকার পাশাপাশি লবণাক্ততা না থাকায় ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষকেরা জানান, চলতি মৌসুমে প্রতি কানি (৪০ শতক) জমিতে ৮০ আড়ির অধিক (প্রতি আড়ি ৮ কেজি) ফলন উৎপাদন হয়েছে। ফলে কৃষকেরা খরচ পুঁষিয়ে লাভের মূখ দেখছেন। বোরো মৌসুমে প্রতি কানি জমির পানির খরচ ২ হাজার, জমির খাজনা দেড় হাজার, ধানের বীজ ২ হাজার, কীটনাশক ও সার খরচ ৫ হাজার, ধান রোপণ ৪ হাজার, ধান কাটা ৫ হাজার, ধান মাড়াই ১ হাজার টাকাসহ প্রতি কানিতে ১৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়।
এদিকে চন্দনাইশের অনেক কৃষক চাষাবাদ থেকে সরে পড়ায় দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ হয়নি বেশ কিছু জমিতে। গত কয়েক বছর ধরে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, বাঁশখালীর শত শত কৃষক মৌসুমে এসে কম মূল্যে খাজনায় জমি নিয়ে চাষাবাদ শুরু করে। ফলে চন্দনাইশের অধিকাংশ জমি চাষাবাদের আওতায় চলে আসে। চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন চন্দনাইশের শহীদ মুরিদুল আলম সড়কে রাত-দিন ধান মাড়ানো, ধান কেটে সারি সারি করে রাখার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে।
মহেশখালীর কৃষক নুর হোসেন, কাজল, হারুন জানান, আমাদের এলাকায় চাষাবাদের জমি কম হওয়ায় প্রতি কানি জমি ১২ হাজার টাকা খাজনা দিতে হয়। যে পরিমাণ কৃষক রয়েছেন সে পরিমাণ জমি না থাকায় অনেকে চাষাবাদ করতে পারেন না। যারা করেন তারা ১ কানির বেশি জমিতে চাষাবাদ করতে পারেন না খরচ বেশি হওয়ার কারণে। এখানে প্রতিজন কৃষক তাদের এলাকার এক কানির খাজনা দিয়ে ৮ থেকে ৯ কানি জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন। তাদের এলাকায় ধানের থেকে খড়ের দাম বেশি।
কারণ হিসেবে তিনি জানান, এক কানি জমির খড় ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ধানের চেয়ে খড়ের দাম বেশি। কারণ কৃষকেরা গরু পালন করে, গরুকে খড় খাওয়ানোর পর গরুর গোবর ব্যবহার হয় পান ক্ষেতে। ফলে খড়ের দাম আনেক বেশি, চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।
মহেশখালীর কৃষকেরা জানান, বাংলাদেশে মহেশখালী মিষ্টি পানের জন্য বিখ্যাত। সম্প্রতি মহেশখালীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কারণে চাষাবাদের অনেক জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। ফলে কৃষকেরা চন্দনাইশে এসে কম খরচে চাষাবাদ করে ধান উৎপাদনের পাশাপাশি খড়, উৎপাদিত ধান ট্রাকে করে প্রতিদিন নিয়ে যাচ্ছেন নিজ এলাকায়। কেউ ধান কেটে খড়সহ, কেউ ধান মাড়িয়ে খড় ও ধান আলাদা করে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে। বোরো ধান চাষ ব্যয়বহুল হলেও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের চোখে খুশির আমেজ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদ হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে চন্দনাইশে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৩ হাজার ৪২০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কম হয়েছে। চন্দনাইশে পৌরসভা, বরকল, বরমা এলাকায় বেশ কিছু জমিতে লবণাক্ততার কারণে কৃষকেরা চাষাবাদ করেননি। মহেশখালী থেকে আসা কৃষকদের কারণে এ এলাকার অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকেরা চাষাবাদে এগিয়ে আসবেন বলে তিনি মনে করেন।