এম এ হোসাইন
ছাত্রদলের নেতৃত্ব থেকে উঠে আসা নেতাদের হাত ধরে সঠিক পথে ছিল বিলুপ্ত চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল কমিটি। সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ কোনো কোন্দল বা বিরোধ ছাড়াই টানা ৬ বছর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কমিটি গঠনের পর থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল এ কমিটি। দলের দুঃসময়ে গতিশীল নেতৃত্ব যুবদলকে সম্মুখসারিতে নিয়ে এসেছিল। স্বৈরশাসকের পতনের পর বিএনপির যখন দল গোছানোর সময়, তখন ঠুনকো কারণে বিলুপ্ত ঘোষণা হয়েছে নগর যুবদলের কমিটি। এতে থানা ও ওয়ার্ড কমিটিহীন অবস্থায় থাকা যুবদলের সাংগঠনিক ভিত্তি অনেকটা নড়েবড়ে অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘তিন সংগঠনের যৌথ কর্মীসভা শুরু হয়েছে। যার কারণে আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুই জায়গায় অবস্থান করছেন। সংগঠন গোছানো দরকার। চট্টগ্রামের কমিটি এর মধ্যে হয়ে যাবে।’
সরকারবিরোধী আন্দোলনে গেল সময়ে বিএনপি কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম এগিয়ে ছিল। এমনকি ঢাকায় কর্মসূচি পালন করতে পারেনি এমন সময়েও চট্টগ্রামে কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।বিএনপির এই শক্তির মূলে ছিল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সহযোগিতা। যার মধ্যে যুবদলের নেতৃত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। যে কোনো কর্মসূচিতে দীপ্তি-শাহেদের নেতৃত্বে যুবদল ছিল ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলিত। আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি তারা ইউনিটগুলোও সাজিয়েছিলেন। ফলে শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি হয়েছিল। এতে নেতাদের প্রত্যাশাও বেড়েছিল। কিন্তু এমন গোছানো সংগঠন হঠাৎ করেই বিলুপ্ত করা হয়েছে। একই সাথে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় অনেকটা হতাশা বিরাজ করছে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের মধ্যে। কমিটি আসতে দেরি হওয়ায় সে হতাশা দিন দিন বাড়ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। নিশ্চয়ই সংগঠনের ভালোর জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে যতদিন দায়িত্বে ছিলাম চেষ্টা করেছি সংগঠনকে এগিয়ে নিতে। থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। আগামীতে সুযোগ পেলে দলকে আরও সুসংগঠিত করার চেষ্টা করব।’
মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গত ২১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে বিলুপ্ত করা হয় নগর যুবদলের সাংগঠনিক কমিটি। একই সঙ্গে বিলুপ্ত করা হয় মহানগরের আওতাধীন সব থানা ও ওয়ার্ড কমিটিও। তখন শিগগিরই নতুন কমিটি ঘোষণা হবে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল। এরপর থেকে যুবদলের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। সম্ভাব্য কমিটিতে স্থান পেতে পদপ্রত্যাশীরা শুরু করেন লবিং, দৌড়ঝাঁপ। স্থানীয় নেতাদের কাছ ধরনা দেওয়া থেকে শুরু করে নেতৃত্ব পেতে রাজধানীতেও ছুটেছেন কেউ কেউ। তবে সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নতুন নেতৃত্বের দেখা না মেলায় হতাশা নামছে তৃণমূলে।
একই বিষয়ে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ বলেন, ‘কমিটি গঠন, পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংগঠনে প্রত্যেকের একটা জবাবদিহিতা থাকে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। সর্বোচ্চ যেটা করা যায় সেটা চেষ্ঠা করেছি। আগামীতেও সংগঠনের জন্য কাজ করে যাব। এখন সংগঠন যেটা উপযুক্ত মনে করে সেটা করবে।’
সূত্র মতে, নগর যুবদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা আসার সম্ভাবনা বেশি। সুপার ফাইভ বা শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে কমিটি আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদের সভাপতি পদে আসার সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানা গেছে। তবে বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন অথবা সহ-সভাপতি শাহেদ আকবরও সভাপতি পদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন দল থেকে বহিস্কার থাকায় নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচএম রাশেদ খানকে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে। এছাড়াও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ, নগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ফজলুল হক সুমন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি মো. সিরাজ উদ্দিন কমিটিতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সুপার ফাইভে স্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারেন তারা।
তবে ‘আহব্বায়ক’ কমিটি আসলে এ হিসাব পাল্টাবে। বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি আহব্বায়ক হবেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। যদিও দীপ্তিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পদে পদায়ন অনেকটা নিশ্চিত। বিএনপির রাজনীতিতে চলে গেলে যুবদলের রাজনীতি ইতি টানতে হবে দীপ্তিকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিলুপ্ত কমিটির এক নেতা বলেন, ‘নগর যুবদলের ইতিহাসে এই দীপ্তি-শাহেদের কমিটি সবচেয়ে সফল বলা যায়। কারণ তারা থানা ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলো যেমন গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন তেমনি কঠিন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামেও সম্মুখসারিতে ছিলেন। সবচেয়ে একটিভ একটি কমিটি ভেঙে দেয়া দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। নেতৃত্বের পরিবর্তন আনতে পারে, কিন্তু কমিটিহীন থাকা শুভকর নয়। দ্রুত যোগ্য ও ত্যাগীদের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা দরকার।’
২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও এলাকায় সংঘটিত একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে মূলত নগর যুবদল ও আওতাধীন থাকা থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন এবং কৃষি বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আমিনকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দলীয় সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ইতোমধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এ ঘটনার তদন্তে মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম হওয়াতে বহিস্কৃত নেতারা দলে ফেরার সম্ভাবনাও তৈরি করছে। এতে যুবদলের নেতৃত্বে মোশাররফ হোসাইনের সম্ভাবনা তৈরি করবে।
তৃণমূলের দাবি, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে যুবদলের আলোচিত নেতাদের বিরুদ্ধে জুটেছে বহু মামলা। একাধিকবার জেলও খেটেছেন অনেক নেতা। দলের দুঃসময়ে যারা মাঠে ছিলেন, বঞ্চনার শিকার হয়েছেন, তারাই যেন এবার নেতৃত্বে আসেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সভাপতি, মোহাম্মদ শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক ও ইকবাল হোসেনকে সিনিয়র সহসভাপতি করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা দিয়েছিল কেন্দ্র। চার মাসের মাথায় ঘোষণা করা হয় ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এর আগে ২০১১ সালের ১৮ নভেম্বর দীর্ঘ ১৫ বছর পর চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কাজী বেলালকে সভাপতি, মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সাধারণ সম্পাদক ও ইকবাল হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব ১১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি ঘোষণা করেন।