নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিনে ১ হাজার ১৭৩ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর এই হার শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ। অন্যদিকে শ্রুতি লেখক না পেয়ে কোনো কিছু লিখতে না পেরে সাদা খাতা জমা দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন ৭ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। তারা সাদা খাতা জমা দিয়ে পরীক্ষা শেষ হওয়ার অনেক আগেই কেন্দ্রের বাইরে চলে যান।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথমদিনের বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী।
শিক্ষাবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা মিলিয়ে এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৪৪৪ জন। মোট ২১৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৭১ জন। চট্টগ্রাম জেলায় ১২৮টি কেন্দ্রে ৮৯ হাজার ৬১৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নিয়েছেন ৮৮ হাজার ৮২৮ জন। অনুপস্থিত ছিলেন ৭৮৭ জন। কক্সবাজার জেলায় ৩১ টি কেন্দ্রে ১৮ হাজার ২৬৮জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ হাজার ৭৮ জন অংশ নিয়েছেন। অনুপস্থিত ছিলেন ১৯০ জন। রাঙামাটি জেলায় ২১টি কেন্দ্রে ৬ হাজার ১৫১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ হাজার ৯০ জন অংশ নিয়েছেন। অনুপস্থিত ছিলেন ৬১ জন। বান্দরবান জেলায় ১৫টি কেন্দ্রে ৩ হাজার ৯৩৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৮৮৮ জন অংশ নিয়েছেন। অনুপস্থিত ছিলেন ৫০ জন। খাগড়াছড়ি জেলায় ২৪টি কেন্দ্রে ৬ হাজার ৪৭২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ হাজার ৩৮৭ অংশ নিয়েছেন। অনুপস্থিত ছিলেন ৮৫ জন।
এদিকে চট্টগ্রামে এসএসসি পরীক্ষায় বসেও শ্রুতিলেখক না পাওয়ায় কিছুই লিখতে পারেননি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাত শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর প্রথমদিনে নগরীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসেছিলেন তারা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাত পরীক্ষার্থী চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগ এলাকার রহমানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, শ্রুতিলেখক নিয়োগের নীতিমালা হচ্ছে, তাকে সর্বোচ্চ অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া হতে হবে এবং বয়স ১৮ বছরের নিচে হতে হবে। কিন্তু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা যাদের শ্রুতিলেখক হিসেবে ঠিক করেছিলেন, তাদের সবাই এসএসসি কিংবা এর ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থী। যে কারণে পরীক্ষার আগে বিদ্যালয় থেকে তাদের এসব শ্রুতিলেখককে অনুমতি না দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে একেবারে পরীক্ষার আগে এ সিদ্ধান্ত জানানোর কারণে নতুন শ্রুতিলেখক ঠিক করতে পারেননি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা।
মো. জসিম নামের একজন অভিভাবক বলেন, শ্রুতিলেখক অষ্টম শ্রেণি কিংবা এর নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থী হতে হবে, এটা আমাদের জানা ছিল না। আমার ওয়াইফ এবং বড় ছেলে স্কুলে নিয়মিত যায়। তাদের আগেভাগে কিছু বলা হয়নি। শেষমুহুর্তে এসে নিয়মের কথা বলে আমাদের বিপদে ফেলে দেয়া হয়েছে।
আরেক অভিভাবক বলেন, আমাদের নীতিমালার কথা আগে বলা হয়নি। এজন্য অষ্টম শ্রেণির ওপরের শিক্ষার্থীকে শ্রুতিলেখক হিসেবে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু গত সোমবার স্কুল থেকে বলা হয়েছে তারা পারবে না। শ্রুতিলেখক হতে পারবে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। অথচ আগে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রুতিলেখক হিসেবে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আমরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে বারবার অনুরোধ করেছি। শিক্ষাবোর্ডেও গিয়ে অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। পরীক্ষাকেন্দ্রে কিছুসময় বসে থেকে কিছু লিখতে না পেরে একপর্যায়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাত পরীক্ষার্থী কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। পরে অভিভাবকরা তাদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, শ্রুতিলেখক হিসেবে যাদের নেওয়া হয়েছিল, তাদের জন্য বোর্ডের অনুমতি ছিল না। শ্রুতিলেখকদের কেউ কেউ ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র ছিল। নীতিমালার বাইরে তো আমরা বিষয়টি অনুমোদন করতে পারি না। এছাড়া অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা ছিল।