‘চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে’ এ স্লোগানের বাস্তব প্রতিফলন হোক

4

গত ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত নিয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভা ও সংবাদ সম্মেলনে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে’। এই চট্টগ্রাম শুধু আমার একার নয়; এই চট্টগ্রাম আমাদের সবার। এই স্লোগান দিয়ে আমি আমার কার্যক্রম শুরু করব। আমাদের চট্টগ্রামের প্রতি মমত্ববোধ ভালোবাসা থাকতে হবে। তখনই আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য সুন্দর পরিচ্ছন্ন গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি, হেলদি সিটি উপহার দিতে পারব। যেটি আমার নির্বাচনী ইশতেহারে আপনারা দেখেছেন। এসময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমি এসি রুমে বসে থাকার লোক নই, আমি নিজেই স্পটে যাব। আমি কিন্তু সকালে এখানে বেশিক্ষণ থাকবো না। দুুই থেকে তিন ঘণ্টা অফিসে থাকবো। এরপর আমি বেরিয়ে যাবো একদিন এক-এক ওয়ার্ডে পরিদর্শন করবো। আমার সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযানের লোকজন এবং ডেঙ্গু সেল নিয়ে যারা কাজ করছেন তারাও থাকবেন। আমি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরবো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম নিজে দেখবো। একটু আগে শুনেছি পরিচ্ছন্ন বিভাগে প্রায় ২ হাজার কর্মচারী নিয়োজিত। আমি প্রতিটা ওয়ার্ডে গিয়ে সশরীরে তাদের দেখতে চাই। এসময় তিনি পরোক্ষভাবে হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেন এবং বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি যদি কাউকে আমি না দেখি তাদের চাকরি হয়তোবা নাও থাকতে পারে’। আমাকে অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। কারণ আমি বারবার বলছি আমি এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের কাজের প্রতি সিনসিয়ারিটি এবং কাজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। তাই আজকে আমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের ওপর জোর দিতে চাই। প্রথমে একটা ক্লিন সিটিতে রূপান্তর করতে চাই। আমি বলতে চাই যে দোকান ও প্রতিষ্ঠানের সামনে ময়লা আবর্জনা পাওয়া যাবে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এসময় তিনি চসিক কর্মকর্তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সমস্ত বিন রেডি করে রাখার নির্দেশনা দেন। দোকানদাররা দোকানের সামনে একটা একটা বিন বসিয়ে দেবেন। দোকানদাররা সেই বিনে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন। সবারই উচিত নিজের আঙিনাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। আপনার সামনের যে উঠান আছে সে উঠান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব আপনাদের। আর বাকিগুলো আমি করব কাজেই আপনাদের দোকানের সামনে যদি কোনো ময়লা পড়ে থাকে তাহলে আমি কিন্তু আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। আমার সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযানের কর্মীরা এবং যারা কর্মকর্তারা আছে আপনারা সবাই থাকবেন। আমি রাজনীতি করেই বড় হয়েছি। কোনো ভয়-ভীতি, ধমক এগুলো কেউ দিলে সেটা বোকার স্বর্গে বাস করবেন। কাজেই আমি সবাইকে বলছি যে প্লিজ দেশটাকে ভালোবাসুন। দেশের প্রতি মমত্ববোধ দেশের প্রতি ভালোবাসা দেশের প্রতি যদি আপনার সততা না থাকে আপনি নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবেন না। মেয়র বলেন, আমাদের এখন প্রধান যে সমস্যা সেটা হচ্ছে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পাশাপাশি সব নাগরিককে সচেতন করার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিসহ মশা নিধন করা হবে। লার্ভিসাইড কিলিং করার যে স্প্রে করা হয়, আমি যখন এসেছি এই লার্ভিসাইডের কোয়ালিটি একটু টেস্ট করতে চাই। এমন কোনো স্প্রে আমি চাই না যে স্প্রে দিয়ে মশা লাফ দিয়ে উঠে যাবে এবং মশা মরছে কিনা সেটা দেখতে হবে। মশা না মরলে এই ধরনের ওষুধ কিন্তু আমি গ্রহণ করব না। সিটি মেয়র মেমন হাসপাতালে পৃথক ‘ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় সেল’ গঠনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, একসময় দেখতাম যে মেমন হাসপাতালে প্রচুর রোগী চাইল্ড অ্যান্ড ম্যাটারনাল ফ্যাসিলিটিসের জন্য আসত। এটা চট্টগ্রামে এক নাম্বার ছিল। আমি ওই এক নাম্বার জায়গায় মেমন হসপিটালকে নিতে চাই এবং ৪১ ওয়ার্ডে যেসব ছোট ছোট হেলথ রিলেটেড সেন্টার আছে, ডিসপেন্সারি; এগুলো আরো অ্যাকটিভ করতে হবে। প্রয়োজনে সেখানে একটা ছোট্ট অপারেশন থিয়েটার করে দিয়ে, ছোট ছোট যে সার্জারিগুলো যাতে হয় সেগুলো আমরা সেখানে করতে পারি। আমি বলছি আমি যাব, আমি হাঁটবো কোনো সমস্যা নাই। আমি সময় দিব। সিটি করপোরেশনকে আমি একটা পরিবর্তনের জায়গায় নিয়ে আসতে চাই। সাড়ে তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে কারচুপির মাধ্যমে ফল পাল্টানোর অভিযোগ দ্রুত নির্বাচন ট্রাবুন্যালে মামলা করেছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। অবশেষে বহু প্রতিকূলতা কাটিয়ে রায় যায় শাহাদাতের পক্ষে। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ট্র্যাবুনালের নির্দেশ অনুযায়ী ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করে মেয়র পদে দায়িত্ব পালনের শপথসহ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বভার ন্যস্ত করেন। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে একজন সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসেবে সুনাম রয়েছে চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেনের। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র চট্টগ্রাম নগর রাজনীতিসহ কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তিনি বিভিন্ন পদে ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। চন্দনাইশে পৈত্রিক বাড়ি হলেও স্থায়ী নিবাস গড়েছেন বাকলিয়ায়। চট্টগ্রাম নগরবাসীর কাছে একজন মেধাবী রাজনীতিক হিসেবে ডা. শাহাদাতের কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের একটি ক্রান্তিকালে তিনি দেশের দ্বিতীয় প্রধান নগর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব নিয়েছেন। এসময় তার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সব চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তিনি যে স্লোগান নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, নগরবাসীর প্রত্যাশা তিনি সেই স্লোগানের বাস্তব রূপ দিতে সক্ষম হবেন। আমরা তাঁর সফলতা কামনা করছি।