নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ পুনর্বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম আহব্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নতুন ট্যারিফ কাঠামো আজ বুধবার থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত ট্যারিফ অনুযায়ী, জাহাজ ও লজিস্টিক সেবার ওপর গড় হারে প্রায় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসারে ২৩টি খাতে নতুন ট্যারিফ আদায় করার ঘোষণা দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তির মুখে নৌপরিবহন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে সেটা একমাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ায় আজ বুধবার থেকে নতুন ট্যারিফ কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের চিঠিতে বলা হয়, ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ ট্যারিফ কাঠামো প্রণয়নের সময় মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় হার ছিল ৩০.৬১ টাকা। বর্তমানে (২০২৫ সালে) এই হার ১২২ টাকা ছাড়িয়েছে অর্থাৎ বন্দরের বিদ্যমান ট্যারিফেই কার্যত চার গুণের বেশি বেড়ে গেছে। গত কয়েক দশকে বন্দরের সার্ভিস ফি, হ্যান্ডলিং চার্জ, পাইলটেজ, ডেমারেজ ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে ট্যারিফ ধাপে ধাপে বেড়েছে। ফলে বর্তমানে অতিরিক্ত বড় পরিসরে ট্যারিফ পুননির্ধারণ করলে তা আমদানি-রপ্তানির ব্যয় বহুলাংশে বাড়িয়ে দেবে।
চট্টগ্রাম বন্দর একটি সেবাদানকারী সংস্থা, কোনো বাণিজ্যিক লাভকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান নয় উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, বিদ্যমান ট্যারিফ আদায়ের মাধ্যমেই বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে আধুনিকায়ন ও স¤প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করার পরেও বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের সংরক্ষিত তহবিলে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্যারিফ (মাশুল) বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ।
প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব ট্যাংকার, বাল্ক কার্গো, কনটেইনার ও অন্যান্য জাহাজ আগমন করে, সেগুলো দেশের জ্বালানি, খাদ্যশস্য, শিল্প কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য পরিবহনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রিন্সিপালদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিসমূহ, যেগুলোর ভিত্তি বিদ্যমান ট্যারিফ কাঠামো। ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে আস্থা হ্রাস পাবে এবং চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিকভাবে একটি অনিশ্চিত ও ব্যয়বহুল গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ট্যারিফ বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বলা হয়, রপ্তানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে কনটেইনার হ্যান্ডলিং, স্টোরেজ এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে।
আমদানি পণ্যের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে জ্বালানি, গম, সার ও শিল্প কাঁচামালের ক্ষেত্রে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেশের মূল্যস্ফীতির ওপর পড়বে। আন্তর্জাতিক শিপিং কমিউনিটির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা কমে যাবে।
চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অবকাঠামোগত সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘কস্ট-বেইজড অ্যান্ড সার্ভিস-ওরিয়েন্টেড’- মডেলে পরিচালিত হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, কেবল রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ট্যারিফ বাড়ানো সমর্থনযোগ্য নয়। পাশাপাশি, দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশসূচক এবং আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস পারফরম্যান্স ইনডেক্সেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়া প্রস্তাবিত নতুন ট্যারিফ বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত রাখা হোক এবং বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য একটি সময়োপযোগী পর্যালোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডার (স্থানীয় শিপিং এজেন্ট, আমদানি-রপ্তানিকারক, জাহাজ মালিক, ব্যবসায়ী সংগঠন) এর সঙ্গে পরামর্শক্রমে যৌক্তিক ও বাস্তবভিত্তিক ট্যারিফ কাঠামো নির্ধারণ করা হোক। বন্দরের কাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সেবা-ভিত্তিক এবং অলাভজনক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা হোক। এসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম।











