চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন কেন অবৈধ নয়

1

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি ভেঙে দেওয়া এবং জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন কেন অবৈধ নয়-এ মর্মে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায়ের দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেছেন। আগামী ৫ ডিসেম্বর রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অপর দুই কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ব্যতিরেকে গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি ভেঙে দেয়ার আদেশ জারি করেন।এরপর গত ১৩ নভেম্বর জেলা প্রশাসক নিজেকে আহব্বায়ক করে চার সদস্যের একটি অন্তর্বর্তী কমিটি গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। জেলা প্রশাসকের ওই আদেশের বিরুদ্ধে দফায় দফায় লিখিতভাবে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তার আদেশ প্রত্যাহার করার কথা বলা হলেও রহস্যজনক কারণে তিনি এতে কর্ণপাত করেননি। পরে ক্লাবের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করেন। রিটের চতুর্থ দফা শুনানী শেষে হাইকোর্টের দ্বৈতবেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকসহ তিন বিবাদীর বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। এ রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট আগামী ৫ ডিসেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেছেন।
শুনানীতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের পক্ষে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ মেজবাহুল আনোয়ার, ব্যারিস্টার হারুনুর রশীদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেলসহ ডিএজি ও এএজিগণ অংশ নেন। শুনানী শেষে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বলেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের কমিটি ভেঙে দেয়া এবং অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এক সপ্তাহের রুল দিয়ে আগামী ৫ ডিসেম্বর শুনানীর জন্য ধার্য করেছেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নির্বাচন হয় দুই বছর মেয়াদী। সে মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। তার আগেই খুব স¤প্রতি এ কমিটি অবৈধ এবং অন্যায়ভাবে ভেঙে দেয়া হয়। কারা ভাঙল চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক। তিনি ব্যক্তিগত সফরে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে একটি রিপোর্ট দিয়েছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ে। তথ্য মন্ত্রণালয় ওই চিঠির ভিত্তিতে চট্টগ্রামের ডিসিকে বললেন যে, এটার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়ার জন্য। চট্টগ্রামের ডিসি কোনরকম শোকজ ছাড়াই কমিটি ভেঙে দিয়েছেন, যেটা তাদের কোনো জুরিসডিকশনে নেই। সে কমিটি ভাঙার আদেশের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে রিট ফাইল করি। এতে সরকার পক্ষ হাজির হয়। শুনানীতে আদালত বলেছেন, এটা আপনারা জুরিসডিকশনের বাইরে করেছেন। তখন সরকার পক্ষ থেকে বলা হয় খবর নেবে বলে। খবর নিতে গিয়ে একসপ্তাহে দেখা গেল, জেলা প্রশাসক নিজের নাম নিজে প্রস্তাব দিয়ে আহবায়ক হয়ে একটি এডহক কমিটি করে দিয়েছেন। সেটাও হাইকোর্টে রিটে দাখিল করা হয়েছে। আমরা বলেছি, প্রাথমিক আদেশটাই অবৈধ, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে যা কিছু করা হয়েছে সবকিছুর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আদালত বিস্তারিত শুনেছেন। সরকার পক্ষে অতিক্তি এটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনেছেন। শুনানী শেষে একসপ্তাহের জন্য রুল দিয়েছেন এ বলে যে, কেন কমিটি ভেঙ্গে দেয়া এবং পরবর্তীতে অন্তর্র্বতী কমিটি অবৈধ ঘোষণা করা হবে না আগামী ৫ ডিসেম্বর শুনানীর জন্য ধার্য করেছেন। আমরা আশা করছি ওইদিন শুনানী শেষে একটি সিদ্ধান্ত হবে, ওই আদেশ টিকবে কি টিকবে না। আমরা বলেছি এটা অবৈধ আদেশ, কারণ ডিসির কোনো অথরিটি নেই কমিটি ভাঙ্গার।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট সরকার পটপরিবর্তনের সুযোগে বহিরাগত একদল দুর্বৃত্ত চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় ক্লাবের কয়েক সদস্য মারধরের শিকারও হন। পরবর্তীতে ক্লাবে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ অচলাবস্থা নিরসনের কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক ক্লাবের নির্বাচিত ব্যবস্থা কমিটি ভেঙে দেয়া এবং পরবর্তীতে নিজেকে আহব্বায়ক করে চার সদস্যের একটি অন্তর্বর্তী কমিটি গঠনের অফিস আদেশ জারি করেন। এসব আদেশ অন্যায়, অবৈধ, রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান বহিভর্‚ত দাবি করে ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করার পর রিট মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়। বিজ্ঞপ্তি