নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটার জাহাজযোগে দেশের ৩৪টি নৌ-রুটে পণ্য পরিবহনে সিরিয়াল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নতুন সিরিয়াল পদ্ধতির কার্যক্রমে ইতোমধ্যে ২৮০টি জাহাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। আর প্রথমদিনে প্রায় ৫০টি জাহাজের সিরিয়াল দেওয়া হয়েছে। ভাড়া কমেছে আগের তুলনায় ৫ থেকে ৬ শতাংশ।
গতকাল সোমবার নগরীর আগ্রাবাদে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল (বিডবিøউটিসিসি) অফিস মিলনায়তনে বার্থিং মিটিং কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম এসব কথা বলেন।
বিডবিøউটিসিসি সেল’র কনভেনর সাঈদ আহমেদের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও শিপ সুপারভাইজার মোহাম্মদ মনজুরুল কবির, সেল কর্মকর্তা সফিক আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবির প্রমুখ।
মহাপরিচালক বলেন, দেশের অন্যান্য পরিবহন সেক্টরের মতই নৌপরিবহন সেক্টরকে নিরাপদ, সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল করার জন্যই সিরিয়াল পদ্ধতিতে লাইটারেজ জাহাজগুলো যেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন করতে পারে। এতে আমদানি রফতানি ও ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিক ও নিরাপদ থাকার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীলতা পাবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বছরে হ্যান্ডলিং হয় প্রায় ১০ কোটি টন পণ্য। আমদানীকৃত ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালসহ নানা শিল্পপণ্য মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে (ছোট জাহাজ) স্থানান্তর করে পরিবহন করা হয় অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে।
গত ১৫ অক্টোবর প্রণীত এ নীতিমালায় লাইটার জাহাজের সিরিয়ালভুক্তি, বরাদ্দ ও জাহাজের ভাড়া নির্ধারণের একক দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলকে (বিডবিøউটিসিসি)।
নতুন নীতিমালা অনুসারে, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের সুপারভাইজরি কমিটি এ সেলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী বিডবিøউটিসিসির বরাদ্দ ছাড়া কোনো লাইটার জাহাজ বাংলাদেশের কোনো সমুদ্রবন্দরে আসা মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত থাকতে পারবে না।
তবে যেসব ফ্যাক্টরী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব লাইটার জাহাজ রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের অব্যাহতিপত্র পাওয়া সাপেক্ষে নিজস্ব জাহাজে পণ্য পরিবহন করতে পারবে।
বিডবিøউটিসিসি কর্তৃক আয়োজিত এই সভায় বার্থিং কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশন, কোষ্টাল শিপ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চট্টগ্রাম, লোকাল এজেন্ট এসোসিয়েশন, পণ্যের এজেন্ট এসোসিয়েশনের সদস্য সহ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্যে কনভেনর সাঈদ আহমেদ বলেন, বিডব্লিওটিসিসি’র মূল লক্ষ্য দুর্নীতিমুক্ত করা ও সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ। সকল স্টেক হোল্ডারদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতামূলক সেল তৈরি করা। সেলের সকল কার্যক্রম Integration এর মাধ্যমে Digitalized করা।
খরচের অপব্যবহার রোধ করা। মাদার ভেসেল এর পণ্য দ্রুত খালাসের মাধ্যমে ডেমারেজ থেকে রক্ষা করে বিদেশে দেশের ভাবমুর্তি উজ্জল করা। বিডব্লিওটিসিসি একটি ব্যবসায়িক সংগঠন। যা হবে রাজনীতিমুক্ত সংগঠন। জাহাজের ভাড়া সকলের সম্বন্বয়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহীতায় এনে নির্ধারণ করা।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সকলক্ষেত্রে আকাশ পথে, সড়ক পথে, আন্তর্জাাতিক সমুদ্র পথে দফায় দফায় তেলের মূল্য বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, ঊংঃধনষরংযসবহঃ খরচ বৃদ্ধি হয়েছে। কই আমাদের সেক্টরের ভাড়া তো বৃদ্ধি হয়নি। নৌ শ্রমিকদের ৬-৮ মাস বেতন ভাতা দিতে পারিনি। অনেকের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে, শহরের বাসার যাবতীয় খরচ বহন করতে না পেরে গ্রামে চলে গেছেন।
এছাড়া বর্তমানে যে পরিমাণে জাহাজ আছে তা মাসে ১ ট্রিপ এর বেশি সম্ভব নয়। ১০০০ মে. টনের একটি জাহাজ মাসে ২ লাখ ২৮ হাজার ২৩৮ টাকা, বছরে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ২৫৬ টাকা বর্তমান ভাড়ার দরে লস করেন। যদিও নৌ শ্রমিকদের গেজেট অনুযায়ী বেতন-ভাত্যাদিসহ অন্যান্য খরচাদি ধরা হয়নি। তা করলে লসের পরিমান আরও হবে। তবুও লস মেনে নিয়ে জাহাজ মালিকরা নিরূপায় হয়ে তাদের জাহাজ পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।