নাসিরুদ্দিন চৌধুরী
এদিকে আরিফ সাহেব চট্টগ্রাম চলে আসার পর নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। জিয়াউর রহমান সাহেব প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। ছাত্রদলের কমিটি গঠনের পর তেমন আর তোড়জোর হয়নি। আর জাসদের গণবাহিনীর অনেক সদস্য ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে চলে আসে ভবিষ্যৎ চিন্তা করে। এদিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও গঠন করা হলো। এখন জাগদলের কনভেনিং কমিটি গঠন নিয়ে তোড়জোর শুরু হলো। আরিফ সাহেব ও জহির উদ্দিন খান মিলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ, উত্তর জেলা, কক্সবাজার ও পটিয়ার কনভেনিং কমিটি গঠন করলেন। পরে অলি সাহেব বললেন, চট্টগ্রাম সিটি কমিটি করার জন্য। তিনি বললেন সব কমিশনারকে ডাকতে হবে। তখন চট্টগ্রাম মিউনিসিলিটি ছিল। ৩১ ওয়ার্ড, মিউনিসিলিটির চেয়ারম্যান ফজল করিম সাহেব। তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাঁদের সাথে সরসারি দল করতে চাননি। তবে ৩১জন ওয়ার্ড কমিশনারের মধ্যে তিনি ১৮ জনকে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন। এদের মধ্যে বখশীরহাট ওয়ার্ড কমিশনার মাহবুবুল হক সাহেব কমিশনারদের দায়িত্ব নিলেন। তিনি এক সময় আওয়ামী লীগ করতেন।
চট্টগ্রাম সিটির কমিটি করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউটে সভা ডাকা হল। সভায় কমিশনার মাহবুবুল হক সাহেব কনভেনার হিসাবে আরিফ মঈনুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করলে সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ড কমিশনার তোরাব আলী (তিনি এক সময় আওয়ামী লীগ করতেন।) মাহবুবের প্রস্তাবটা সমর্থন করলেন। আর সঙ্গে সঙ্গে সব ওয়ার্ড কমিশনার তালি দিয়ে সমর্থন করলেন। এদের মধ্যে ছিলেন মহিলা ওয়ার্ড কমিশনার সকিনা চৌধুরী, শামসুন নাহার পরান, জি এ মান্নান, সুলুকবহরের কমিশনার মোস্তাফিজ (উনি এক সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।), পশ্চিম মাদারবাড়ির হাকিম খান, (তিনি একসময় মুসলিম লীগ করতেন।) পূর্ব মাদারবাড়ির জাফর আসে নি। পূর্ব মাদারবাড়িতে একটা ‘রেড লাইট’ এরিয়া আছে। উনি বললেন ওটা উচ্ছেদ করতে চান তিনি। বললেন, ওটা যদি তুলে দিতে পারেন তবে আমি জাগদলে আসব। তিনি বললেন, ঠিক আছে। আপনি শীঘ্রই জাগদলে আসবেন, ওটার ব্যবস্থা আমি করছি। চকবাজারের দু’জন কমিশনার- একজন মিন্টু আরেক জনের নাম মনে আসছে না। মিন্টু পরেও কমিশনার হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঐ এলাকায় কমিশনার, তাঁরা সবাই বসে যুগ্ম আহবায়কদের নাম ঠিক করলেন। এদের মধ্যে ছিলেন সকিনা চৌধুরী, শামসুন নাহার পরান, জিএ মান্নান, মাহবুবুল হক চৌধুরী, বাকি সবাই মেম্বার। ওখানে বসেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন যে এলাকায় কমিশনারদের আমরা পাইনি, ঐ সমস্ত এলাকায় নির্বাচনে দ্বিতীয়স্থানে যারা ছিল তাদেরকে দিয়ে কমিটি করা হবে। এবং ঠিকই একমাসের মধ্যে পুরো সিটির ওয়ার্ড কমিটিগুলো করে ফেলা হয়েছিল। আরিফ সাহেব প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাঁর আম্মার গাড়ি নিয়ে বেরুতেন, ফিরতেন ভোরে ভোরে। সারারাত বাড়ি বাড়ি গিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ও রাজনীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করতেন। কারণ রাতে বের হওয়ার একটা সুবিধা সবাইকে বাসায় পাওয়া যায়। আর চট্টগ্রামের রীতি হলো যত রাতে হোক কেউ কারো বাসায় গেলে দরজা খুলে দেবে এবং জিজ্ঞেস করবে ভাত খেয়েছেন কি না, না খেলে এক ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে। এভাবে সারা চট্টগ্রামে তাঁরা কমিটি করেছেন। এরপর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখনই চট্টগ্রাম যেতেন তাঁরা জাগদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কর্মীরা এয়ারপোর্টে অভ্যর্থনা জানাতেন। সার্কিট হাউসে বসে সভা করতেন। জিয়াউর রহমান সাহেব আস্লে গ্রামে গঞ্জেও চলে যেতেন। সাধারণ মানুষের সাথে হাত মেলাতেন। কথা বলতেন তার, বক্তব্য শুনলে মানুষ খুশি হতো। দিন দিন তার জনিপ্রয়তা বাড়ছিল। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ কি ৪ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘোষণা করা হলো। তাঁরা সবাই নির্বাচনী কাজে নেমে পড়লেন। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদী ‘ফ্রন্ট’ হয়ে গেল একটি। ফ্রন্টের শরীক হিসাবে আসলো মুসলিম লীগ, ইউপিপি, ভাসানী ন্যাপসহ আরা ছোটখাটো কয়েকটি দল। এদের মধ্যে মুসলিম লীগ ও বামপন্থী দলগুলোর অনেকেই সরাসরি জাগদলে যোগ দেয়। ফ্রন্ট হওয়াতে তাঁদের রাজনৈতিক ব্যস্ততা ও গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। ২৭ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমর্থনে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের জনসভা দেয়া হলো লালদীঘি ময়দানে। এসময় তাঁরা নাসিমন ভবনে বসে কাজের পরিকল্পনাগুলো করতেন। জনসভায় তাঁরা যত লোকের উপস্থিতি আশা করেছিলেন, তার একশ ভাগ বেশি লোক উপস্থিত হয়েছিলো।
সভার দিন সকালে জিয়াউর রহমান সাহেব চলে আসলেন। তাঁরা এয়ারপোর্ট থেকে ওনাকে সার্কিট হাউসে নিয়ে আসেন। তখন ওখানে ছোটখাটো একটা মিটিং হয়। এতে লালদীঘির জনসভায় সভাপতিত্ব করার জন্য মুসলিম লীগের সাবেক এমপি ইসলাম মিয়ার নাম প্রস্তাব করা হলো আর সভা পরিচালনা করার জন্য জহিরউদ্দিন খানের নাম। এক মাস আগে ইসলাম মিয়া জাগদলে যোগ দিয়েছেন, চট্টগ্রাম থেকে তার নির্বাচন করার ইচ্ছ ছিলো যখন দেখলেন জাগদল দ্রæত প্রসার লাভ করছে তাই দলে যোগ দিয়েছেন। জহির উদ্দিন সাহেব বললেন, আরিফ ইসলাম মিয়াকে কনভেনর করে তুমি জয়েন্ট কনভেনার থাকো। উনি প্রবীণ লোক সাবেক এমপি। তিনি বললেন ঠিক আছে এখন যে কনভেনিং কমিটি আছে তা ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে নির্বাচন হোক। উনাকে সবাই চাইলে উনি হবেন? আর তাছাড়া যে কেউ দলে আসলেই তাকে বড় পদে বসাতে হবে কেন। উনি আসছেন, দেখি ওনার কর্মকান্ড। তখন জহিরউদ্দিন সাহেব চুপসে গেলেন। আর তিনি কনভেনার থাকতে অন্যজন কেন সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তিনি বললেন, সিটিতে জনসভা হচ্ছে সিটির কনভেনার সভাপতিত্ব করবেন। ঠিক আছে ইসলাম মিয়াকে নিয়ে সভা করেন-আমি লালদীঘিতে যাচ্ছি না। তাঁদের এসব কাথাবার্তা শুনে ওপর থেকে নেমে আসলেন অলি সাহেব। তিনি বললেন, কি হবে বলেন। তখন তিনি বললেন ‘ইট ইজ ভেরি নরমাল।” আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি লালদীঘিতে বঙ্গবন্ধু আসলেও আওয়ামী লীগের আন্দরকিল্লা ইউনিয়নের সভাপতি সভাপতিত্ব করেছেন। লালদীঘিটা যেহেতু আন্দরকিল্লায়। তখন অলি সাহেব বললেন, আপনি বলেন তাহলে কাকে দিয়ে করি। তখন তিনি বললেন ঠিক আছে আমি স্যাক্রিফাইস করবো কিন্তু সভা পরিচালনা করবেন জাহাঙ্গীর সাহেব। জহিরউদ্দিন খান ভালো বাংলা বলতে পারেন না। তিনি বাংলা বলতে বলতে আবার চাটগাঁইয়া বলে ফেলবেন। আর জাহাঙ্গীর সাহেবকে দেখেছি অনেক সভা পরিচালনা করতে খুব সুন্দরভাবে। অলি সাহেব বললেন ঠিক আছে আপনি খুশি তো। তিনি বললেন হ্যাঁ খুশি। তখন অলি সাহেব বললেন, ঠিক আছে এবার লালদীঘি চলে যান। আরিফ সাহেব জাহাঙ্গীরকে নিয়ে লালদীঘি গেলেন। দেখেন মাঠ ভরে গেছে, লোকে লোকারণ্য। তিনি মঞ্চে উঠলেন। দেখলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ছেলেরা সবাই মঞ্চের আশেপাশে। আর ইউপিপি’র ছেলেরা সবাই মঞ্চের নিচে। যেহেতু কাজী জাফর সাহেব আসবেন। তিনি জাহাঙ্গীর সাহেবকে বললেন আপনি এখন সভা শুরু করেন। তিনি খুব সুন্দরভাবে সভা শুরু করলেন।
জাহাঙ্গীর চৌধুরী তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন কাকে কাকে বক্তৃতা করতে দেবেন। তিনি বললেন প্রথমে ব্যারিস্টার মাহবুবুল কবির চৌধুরীকে দেন। তিনি পটিয়া থেকে এমপি ইলেকশন করছিলেন, ভাসানী ন্যাপের, খুব ডেডিকেটেড। একটু পরে ইসলাম মিয়া জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে ডেকে বললেন, ফজলুল কাদের ছেলে গিয়াস কাদের চৌধুরীকে বক্তৃতার সুযোগ দিতে। আরিফ সাহেব বললেন উনি আবার কোত্থেকে এলেন। যাই হোক ওনার নাম ঘোষণা করা হল। উনি বক্তৃতা শুরু করলেন। তাঁর পাশে ছিল ওসমান গণি চৌধুরী। সে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন করতো। সে জাগদলের উত্তরের কনভেনর ছিল। ওসমান তাঁকে বললেন, উনি কিভাবে আসলেন। আপনি এক কাজ করেন, মঞ্চের পিছনে চলে যান। তিনি মঞ্চের পিছনের দিকে গিয়ে ফিরে দেখেন গিয়াস কাদেরের পায়জামা পাঞ্জাবী ছাড়া আর কিছু নাই। তিনি সেখান থেকে পালালেন। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়া মঞ্চে আসলেন। জাহাঙ্গীর সাহেব আবার সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথাবার্তা বলে সভা আবার শুরু করলেন। এবার তাঁর নাম ঘোষণা করলেন যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন। তখন সবাই করতালি দিয়ে উঠলো। মঞ্চের আশেপাশে ছিল বিশ্ববিদ্যায়ের সব ছেলে। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মতো বক্তৃতা করেননি। খুব ছোট বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ওটা জাহাঙ্গীর সকালে তাঁকে লিখে দিয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি ধানের শীষে ভোট দেবেন কিনা জিজ্ঞেস করলেন। জনসভার সবাই হাত তুলে জবাব দিলেন হ্যাঁ। তাঁর বক্তৃতা শেষ হলে- জিয়া সাহেব তাঁকে ইশারা করে ডাকলেন। বললেন আরিফ ওয়েলডান। ইউ রিচ ইউর মার্ক। তিনি বললেন থ্যাংক ইউ স্যার। এরপর একে একে নেতারা বক্তৃতা রাখলেন। পরে জিয়াউর রহমান সাহেব বক্তব্য রাখলেন। তিনি প্রথমে মঞ্চের সামনে এসে দু’হাত তুলে জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। এক পর্যায়ে তিনি মাথার টুপিটা ছুঁড়ে মারেন জনতার দিকে। কয়েক হাজার জনতা এ টুপিটা নেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কতক্ষণ এভাবে হইচই করার পর জিয়া সাহেব বক্তৃতা দিলেন। তিনি দুটি কথার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বললেন-আপনারা কি ধ্বংসের রাজনীতি চান না কি শান্তি আর উৎপাদনের রাজনীতি চান? জনতা দু’হাত তুলে উৎপাদনের রাজনীতির প্রতি সমর্থন জানায়। সমাবেশে এতো লোক আসছিল যে নিউ মার্কেট, আন্দরকিল্লা সহ লালদীঘির চারপাশ কানায় কানায় ভরে গেলো। পর জিয়াউর রহমান সাহেব চলে যাবেন, আরিফ সাহেবরা তাঁকে এয়ারপোর্টে বিদায় দিলেন। বিমানে ওঠার সময় জিয়া তাঁর সাথে হ্যান্ডসেক করলেন। এরপর তাঁরা সবাই নির্বাচনের প্ল্যান করলেন। ভোটারদেরকে কিভাবে আনা নেয়া হবে ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়। মূলত ওয়ার্ড কমিশনাররা কাজগুলো করেছেন। নির্বাচনের জন্য সেন্টার থেকে ফান্ড আসছিল। বেশি টাকা না। ‘টোকেন’ আর কিছু পোস্টার। নির্বাচনের দিন সকালে অলি সাহেবের শ্যালক সাব্বির একটা জিপ নিয়ে আসলো; তিনি তাঁদের যুবদলে যোগ দিলেন। আরিফ সাহেব সামনে বসলেন। একে একে একরামকে তুললেন। কাজী আকবর, জসীম, শিল্পপতি ইউসুফ সাহেবের ছেলে; তারপর দেবু, বেনু, সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে, তাঁদেরকে নিয়ে প্রত্যেক ভোট সেন্টারে ঘুরলেন। রেজাল্ট, ভেরি গুড। চিটাগাং সিটির মধ্যে বাকলিয়ার ৯৯% ভোট ধানের শীষে পড়লো। মনে মনে ভাবলেন ভবিষ্যতে আমার নির্বাচনে এভাবে ৯৯% ভোট পাবো ইনশাল্লাহ।
কয়েকদিন পর ঢাকায় গেলেন আরিফ সাহেব। প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ হলো। তিনি খুব খুশি। তিনি বললেন আরিফ, আমি এ ফ্রন্ট থেকে দল বানাবো। সুতরাং আই নীড অল ইউর হেল্প ফ্রম দ্যা সিটি, তখন তিনি মনে মনে ভাবলেন যে এ একটা সুযোগ, এ সুযোগে সিটির কিছু কাজ করে নিই। তিনি বললেন স্যার-আই স্যার ওয়ানড এ গুড। ইটজ ওয়ার্ড কশিনার আই ট্রেন দ্যা মোর, অলদ্য মোর গুড। ইফ ইউ গুডন। ইন্টজ শামস ডেভেলপম্যান ওয়ার্ক, ওয়ার্ড অব দ্যা সিটি এনলিস্ট। ওয়ান এ ডু। জিয়া বললেন আরিফ নো প্রবলেম। পরে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের কমিশনারদেরকে নিয়ে ঢাকা চলে গেলেন। তার আগে কমিশনারদের নিয়ে বৈঠক করে ওয়ার্ডের কি সমস্যা তার তালিকা করলেন। এক একজন ওয়ার্ড কমিশনার ২/৩ টা করে কাজের লিস্ট দিলো। সুলুকবহরের ওয়ার্ড কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানকে বললেনÑ ‘ময়লার ডিপোটা’ সরাতে হবে। ওখানে গেলে বসা যায় না মাছির জন্য। বাকলিয়ার ওয়ার্ড কমিশনারকে বললেন তোমার এখানে কি সমস্যা আছে বলো। বলল চাক্তাই খাল তো একবার খনন করা হয়েছে আরো একবার করা দরকার। এছাড়া আর কিছু খুঁজে পাওয়া গেলো না। তিনি বললেনÑ চাক্তাই খাল ছাড়া আর কি খাল আছেÑ বলল আরো ৪/৫ টি খাল আছে। তিনি বললেন ঐ গুলোর নাম দিয়ে দাও। তাঁরা বঙ্গভবনে গেলেন। একটা রুমে বসলেন। মিনিটি পাঁচেক পর প্রেসিডেন্ট সাহেবের সাথে অলি সাহেব আসলেন। তিনি প্রত্যেককে বাই নেইম পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর উন্নয়ন কাজের লিস্টটা প্রেসিডেন্টের হাতে দিলেন। তিনি এটা মার্ক করে অলি সাহেবকে দিলেন।
প্রেসিডেন্ট সাহেব সবার সাথে হ্যান্ডসেক করলেন, পরে তাঁদেরকে বিদায় দিলেন। আরিফ সাহেব কমিশনারদের বিদায় দিয়ে অলি সাহেবের রুমে গেলেন। অলি সাহেব বললেন, ওয়েল ডান, ইউর সিটি কমিটির ইমপ্রেশন? তিনি বললেন ইট’স অল ইউর ব্যাকিং। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলেন হোম মিনিস্টারের কাছে। বখশীরহাট ইউনিয়নে একটা ফায়ার সার্ভিসের জন্য তালিকায় নাম দেয়া হয়েছিল। অলি সাহেব সেটা হোম মিনিস্টারকে ফোন করে ত্বরিৎ গতিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলে দিলেন। আসলে সামরিক শাসনের সময় উন্নয়নের কাজগুলে ত্বরিৎ গতিতে করা যায়। অলি সাহেব তারপর ফোন করলেন এলজিআরডি’তে। তিনি বলেন ইমিডিয়েটলি চিটাগাং সুলুকবহরের ‘ময়লার ডিপোটা’ সরিয়ে ফেলতে হবে। ফোনটা রেখে অলি সাহেব বললেন, মামু, ময়লার ডিপোটা তো আমিও দেখেছি। ওটার পাশে তো আমাদের এইট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোয়ার্টারগুলো ছিলো। আমরা ওটাকে সরিয়ে সেখানে একটা পার্ক- উদ্যান করে ফেলি। ওটার নাম দেবো ‘বিপ্লব উদ্যান’। তিনি বললেন ভেরি গুড। চিটাগাংÑএ কোন পার্ক নেই, ভালো হবে। এভাবে অলি সাহেব একে একে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ফোন করে তাঁর দেয়া তালিকার কাজগুলো করিয়ে নিলেন।
জুলাই কি আগস্ট মাস হবে, প্রেসিডেন্ট সাহেব আবার চিটাগাং এলেন। আরিফ সাহেব জাগদল ও ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের নিয়ে সার্কিট হাউসে গেলেন তাঁর সাথে দেখা করতে। তিনি তাঁদেরকে বললেন, বিগত নির্বাচনের ফলাফলে বুঝা গেল জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সুতরাং আমাদের নেতাদেরকেও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঐ যে তিনি বলেছিলেন, ফ্রন্টকে একটা দলে আনতে হবে এখন সে কাজটা তিনি করতে চান। জিয়া সাহেব তাঁকে বললেন, আরিফ, হাউ ইউর ওয়ার্ক গোয়িং? তিনি বললেনÑফাইন।
ডোন্ট ওয়ারি। এরপর সংসদ নির্বাচনে তিনি কোতোয়ালী আসন থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এম এ মান্নানকে হারিয়ে দেন। পরে তিনি মন্ত্রী হন। বিপ্লব উদ্যান বিষয়ে কিছু কথা বলা দরকার। মিউনিসিপ্যাল চেয়ারম্যান ফজল করিম চান নি উদ্যান হোক। তিনি মন্ত্রী হবার পর একদিন ডিসি, মিউনিসিপ্যাল চেয়ারম্যানকে নিয়ে ময়লার ডিপোটি দেখতে যান। ঘুরে ফিরে দেখেন। তখন মাটি নরম থাকায় পার্ক করা যাচ্ছিল না। আবুল ফজল আর ডিসি বললেন বর্ষা চলে গেলে পার্কের কাজ শুরু করা হবে। এর মধ্যে তাঁরা সেপ্টেম্বরের দিকে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে দিয়ে উদ্বোধন করালেন। পার্কের নক্সাও করলেন কিন্তু জিয়ার মৃত্যু আর নানা ঘটনায় সবকিছু ওলাট পালট হয়ে গেল।
কয়েক মাস পর চিটাগাং ক্লাবে মিউনিসিপ্যাল চেয়ারম্যান ফজল করিম সাহেবের সাথে দেখা হলে তিনি বললেন, উদ্যানের কি করলেন। তিনি বললেন, ওটা এখন হাউজিং প্রজেক্ট হয়ে গেছে। তখন এরশাদের সামরিক শাসন। চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রশাসক ব্রিগেডিয়ার মুফিজুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করে সব কথা তাকে বললেন। তিনি বললেন, আমার কাছে সবাই প্রজেক্ট নিয়ে আসলে আমি করে দিলাম। এখন তো প্লট এলটমেন্ট হয়ে গেছে। তিনি গিয়ে দেখলেনÑ ইটের রাস্তা হয়েছে, দেয়াল দিয়ে প্লট ঘেরা দেয়া হয়েছে। এটার নাম দেয়া হয়েছে ‘সুগন্ধা’।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর একদিন অলি সাহেব তাঁকে বললেন- বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিজাইন দিতে। কারণ সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাঁকে নির্বাচন করতে হবে। আরিফ সাহেব চাইছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে নির্বাচন করা যায় কি না? ডিসি’র সাথে আলাপ করলেন। তিনি তাঁকে আইন বই দেখে বললেন আপনি রাজনীতি করতে বাধা নেই। নির্বাচন করলে চাকরি ছাড়তে হবে। তারপর ঢাকায় গিয়ে প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি জানালেন। তিনিও বললেন, চাকরি ছাড়তে। তবু তিনি বললেন স্যার যদি নির্বাচনে হেরে যাই? তিনি তাঁকে অভয় দিলেন।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক