চট্টগ্রাম-জিয়ার উত্থান এবং ছাত্রদল জন্মের কাহিনী

2

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

পূর্বানুবৃত্তি

মাসখানেক পরে প্রেসিডেন্ট জিয়া আবার অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিনকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে বললেন আরিফ সাহেব, কেমন চলছে আপনার Youth- তিনি বলেন, স্যার Youth, Response খুব ভালো। কিন্তু এদেরকে একত্রিত করা Very difficult . কারণ এরা তো এক জায়গায় থাকে না। ছাত্ররা যেরকম সবাই এক জায়গায় আছে, এরা ত এক জায়গায় নেই। এদেরকে use, করা যাবে, ইলেকশনের আগে, ভোটিং এর আগে। পার্টি করার আগে।Otherwise এদেরকে কোনো ফোরাম ছাড়া অর্গানাইজ করা খুবই ডিফিকাল্ট। ওরা যার যার বিজনেসে busy, , যার যার কাজে busy, , তিনি বলেন স্যার, How about Gathering the students.
উনি বললেন, No, no, Idon’t want to bring the students into Politics. ওরা দেশের সম্পদ, ওরা ঠিকভাবে পড়াশোনা করুক। অতীতে ছাত্ররা রাজনীতিতে ঢুকে পড়াশোনা করে নাই, সেশন জট হয় আমাদের এখানে। আপনি এক কাজ করেন, আপনি আবারো অন্যান্য Students দলের নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে বলেন, ওদেরও যেন স্টুডেন্ট পলিটিক্স বন্ধ করে দেয়।
আরিফ মঈনুদ্দিন লক্ষ করলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া স্টুডেন্টদেরকে রাজনীতিতে আনার ব্যাপারে খুব পক্ষপাতী নন। তিনি আর কথা বাড়ালেন না। যারা স্টুডেন্ট লিডার আছে চিটাগাং য়ুনিভার্সিটিতে, তিনি সবাইকে বলেন দেখেন স্টুডেন্টদেরকে বোধ হয় পলিটিক্সে রাখা ঠিক হবে না। এদেরকে পড়াশোনা করতে দেয়া উচিত। কিন্তু দেখলেন, লিডাররা Response খুব ভালো দিচ্ছেন না। ওরা বললেন স্টুডেন্টরা পলিটিক্স করবে, স্টুডেন্টরা পলিটিক্স করেই তো বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। ওরা বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার-এ লিডিং রোল প্লে করেছে। এত তাড়াতাড়ি বন্ধ করা যাবে না। এর মধ্যে জিয়া সাহেবের সঙ্গে আরিফ মঈনুদ্দিনের দেখা হয় বঙ্গভবনে, যখনই কোনো অনুষ্ঠান হয় সেখানে দাওয়াত পান।
এরপর অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন তাঁর য়ুনিভার্সিটির কলিগদের কাছে এপ্রোচ করে তাঁদেরকে বলেন, দেখেন ভবিষ্যতে একটা নতুন পার্টি হবে। আমরা যারা ক্লিন, চলেন আমরা ওটাতে জয়েন করি। আর পলিটিক্স করলে য়ুনির্ভাসিটির চাকরি ছাড়তে হবে না। অনেক বোঝালেন তিনি, কিন্তু কেউ ডাইরেক্টলি ইনভলভ হতে চায় না। য়ুনিভার্সিটিতে পলিটিক্স করবে। কিন্তু বাইরে, এই রিস্কটা কেউ নিতে চায় না। তিনি আবার প্রেসিডেন্টের কাছে যান। এ সময় চিটাগাং য়ুনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্ররা একটা আন্দোলন করছিলো পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে আলাদা করে একটা পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট স্থাপন করার জন্য। মানে আলাদা একটি ডিপার্টমেন্ট। ওদের দু’জন নেতাকে তিনি ডাকলেন। তাঁর এখনো মনে আছে দুই ভাইয়ের নাম, হাসান ইমাম আর হোসেন ইমাম। ওরা চিটাগাং-এর না, বাইরের, ব্যবসায়ীর ছেলে। তিনি বললাম, দেখ, তোমাদের সমস্যা কি। ওরা বললো, স্যার আমরা আন্দোলন করছি, পৃথিবীর সব জায়গায় পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন আলাদা, এখানেও করতে চাই। তিনি বললেন আমি কি আপনাদের জন্য চেষ্টা করবো। তারা বললো, স্যার, করলে তো খুব ভালো হয়। তিনি ভাবলেন, এদের একটা কাজ যদি করে দিতে পারি, ওরা আমার ফিউচার দলের ভালো সমর্থক হবে। তিনি এ বিষয়টা নিয়ে প্রথমে কর্ণেল অলি সাহেবের সঙ্গে আলাপ করলাম। তিনি বললেন আমরা তো দু’সপ্তাহ পরে চিটাগাং আসবো। তখন আপনি এটা প্রেসিডেন্ট সাহেবকে সরাসরি বলবেন।
জিয়া সাহেব আসার আগে অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন পাবলিক এডিমিনিস্ট্রেশনের কয়েকটা ছেলেকে নিয়ে গেলেন চিটাগাং এয়ারপোর্টের ভিভিআইপি রেস্ট হাউসে। আর আমাদের ভাগ্য এমন ভালো, প্রেসিডেন্ট সাহেবের সঙ্গে এডভাইজার ফর এডুকেশন সৈয়দ আলী আহসান, উনিও এসেছেন। একদম আমাদের লাক কি ভালো। জিয়া সাহেব তাঁকে বললেন, Arif, How are you, আমি বললাম, স্যার jvK wK fv‡jv| wRqv mv‡ne Zuv‡K ej‡jb, , Avwg ejjvg, m¨vi Fine. These are the students of Chittagong umivesity of political Science. They have got a problem.Very genuine one. They want Political Science to be divided into Political Science and public Administration. উনি সঙ্গে সঙ্গে সৈয়দ আলী আহসান সাহেবকে বললেন, আপনি দেখেন তো এটা কিভাবে তাড়াতাড়ি করা যায়’। এভাবে জিয়া সাহেব On the spot decision দিয়ে দিলেন। ছেলেরা কি খুশি। ওরা Thank you, Thank you বলতে বলতে উঠতে চাইলো। বললাম বসেন বসেন এত তাড়াতাড়ি Thank you দিয়ে গেলে হবে না। চা খান।’ সবাইকে চা খাওয়ালাম। চা টা খেয়ে আমরা চলে আসলাম। ছেলে যতগুলি গিয়েছিলো, Mujibbadi এবং সবগুলি on the spot convince হয়ে গেল।
তারপরে কিছুদিন পরে আর একটা সমস্যা হলো। ছেলেরা চিটাগাং য়ুনিভার্সিটিতে রেল কানেকশান চায়। অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন বললেন ঠিক আছে, তোমাদের পক্ষ হয়ে আমি কি চেষ্টা করবো। তারা বললো স্যার, করলে তো ভালোই হয়। আপনি তো অলরেডি আমাদের একটা কাজ করে দিয়েছেন। এখানে তো দেখি আপনি ছাড়া আমাদের কাজ আর কেউ করতে পারবে না। তিনি বললেন ঠিক আছে, তোমরা এক কাজ করো, তোমরা সবাই In a body, irrespective of all parties, একটা Application লেখো To the honourable President of Bangladesh, তোমরা কি চাও। ওরা লিখে তাঁকে দিলো। তিনি এটা কর্ণেল অলি সাহেবকে দিলেন। অলি সাহেব সেটা প্রেসিডেন্টকে দিয়ে Imedimtely করিয়ে নেন। অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন দেখেন ওখানে ওরা জায়গা টায়গা মাপতে লাগলো। মেপে টেপে ওখানে একটা রেল লাইনের বন্দোবস্ত হয়ে গেলো। ঠিক তার পর পর ঢাকায় জাপান এয়ারলাইন্সের একটা বিমান হাইজ্যাকিং ড্রামা হলো। ওই হাইজ্যাকিং ড্রামার সময় একটা ব্রিগেডে মিনি ক্যু হলো। এয়ারফোর্স এন্ড আর্মি ক্যু। অনেক এয়ারফোর্স এবং আর্মি অফিসার মারাও গিয়েছিলো বিমান ক্যুর সমাধানের সময়ে অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন পথে দেখেন একটা পোস্টার খোন্দকার মোশতাক আহমদের, তিনি পোস্টারটা আস্তে করে ছিঁড়ে নিয়ে কর্ণেল অলি সাহেবকে ফোন করে বললেন, এরকম একটা পোস্টার রাস্তায় দেখি। উনি বললেন, একটা কাজ করেন, ঐ পোস্টারটা নিয়ে আপনি কালকে বঙ্গভবনে চলে আসেন। পোস্টার নিয়ে বঙ্গভবনে যান অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন। তাঁর মনে নেই কি লেখা ছিলো পোস্টারে। মনে আছে শুধু ডেমোক্রেটিক লীগের পোস্টার ছিলো ওটা। অলি সাহেব পোস্টারটা নিয়ে ভিতরে গেলেন প্রেসিডেন্টের ওখানে। পাঁচ মিনিট পরে এসে বললেন যে, মামা ভিতরে যান। উনি আপনাকে ডাকছেন। অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন তো একেবারে অপ্রস্তুত। দরজায় গিয়ে দেখেন, উনি ক্যামোফ্ল্যাজ ইউনিফর্ম পরা চিফ অফ আর্মি স্টাফ। উনি এসে তাঁকে রিসিভ করে বসালেন। বসে ওনার উলশী যদুনাথপুর স্বনির্ভর প্রজেক্টের পুরো একটা ভিউ দিয়ে দিলেন, আধা ঘণ্টা ধরে। বললেন, আমাদের বাংলাদেশের খালগুলি সব বাঁকা বাঁকা, যার জন্য বৃষ্টি হলে আশেপাশে ফ্লাড হয়ে যায়। বাঁকগুলি সোজা একটা লুপ কাটলে পানি ওভারফ্লো করবে না, ওটা সাঁই করে ড্রেন দিয়ে চলে যাবে। ওভারফ্লো হবে না। আশেপাশে যে পানিগুলি থাকবে, ওগুলি আমরা কাজে লাগাবো for irrigation. হাঁস মুরগীর খামার, ফলের খামার, সবজি খামার এবং আমার এই টাইপের একটি প্রজেক্ট অলরেডি হয়ে গেছে। আমি বললাম স্যার, কোথায়? তিনি বললেন যশোর উলশী যদুনাথপুর। প্রত্যেকটা উলশী টাইপ প্রজেক্ট থেকে কত হাজার টন চাল সারপ্লাস হবে। উনি তাঁকে বিরাট এক ফিগার দিলেন। ঐ সময় বোধ হয় দেশে ৪৬৫টি, না ৬০০ থানা ছিলো। বললেন প্রত্যেক থানার মধ্যে যদি এতগুলি সারপ্লাস হয় তাহলে আমাদের এত লক্ষ টন চাল ইয়ারলি সারপ্লাস হবে। অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন বললেন স্যার, এত সারপ্লাস চাল দিয়ে আপনি কি করবেন। উনি বললেন, We will export to the middle east countries. They have got shortage of Rice. অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন বললেন From where you will get all the money. জিয়া সাহেব বললেন Money is no Problem. তিনি এই প্রথম প্রেসিডেন্ট জিয়ার মুখ থেকে শুনলেন Money is no Problem. পরে এটা কিন্তু একটা Phrase হয়ে গিয়েছিলো জিয়া সাহেবের।
তারপর চা টা খেয়ে সেখান থেকে চলে আসলেন অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন। চিটাগাং এসে ছাত্রদেরকে ডাকলেন, যারা তাঁর ডাইরেক্ট ছাত্র, ওসমান গণি চৌধুরী, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, যিনি পরে আওয়ামী লীগের এমপি হন রাউজান থেকে, আনোয়ারুল হক কাদেরী, পরে বিএনপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি হয়েছিলো, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, পরে এমপি হয়েছিলো পটিয়া থেকেÑএরকম পাঁচ সাতজন ছেলেকে নিয়ে লাইব্রেরীর যেটা কনফিডেন্সিয়াল সেকশন, ওখানে গিয়ে ওদেরকে চা-সিঙ্গারা খাইয়ে জিয়া সাহেবের স্বনির্ভর প্রজেক্ট এর ব্যাপারটা ওদেরকে বোঝালেন। তিনি বললেন আর য়ু অল কনভিন্সড। ওরা বললো ইয়েস স্যার, ইটস এ ভেরি নাইস থিং টু মেক দি কান্ট্রি সেলফ সাফিসিয়েন্ট। তিনি বললেন মানি উইল বি নো প্রবলেম। তোমাদের যারা বন্ধু-বান্ধব আছে, তাদেরকে বলবে, প্রেসিডেন্ট জিয়া ইজ এ ভেরি অনেস্ট পারসন। হি ওয়ান্টস টু বিল্ড দিস কান্ট্রি। আর স্টুডেন্ট কমিউনিটির মধ্যে যাদের এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটা অগ্রগামী ভূমিকা ছিলো, তাদের এটা এখন একটা দায়িত্ব টু বিল্ড আপ দি কান্ট্রি। অবিশ্বাস্য ব্যাপার, দু’তিনদিনের মধ্যে পনের বিশ জন করে ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলে আসছে তাঁর কথা শোনার জন্য। তাঁর চা-সিঙ্গারাও চলছে, আর ওরাও আসছে। এভাবে দলে দলে আসার ফলে লিডাররা তাঁকে ধরে বসলো। তাঁরা বললো আরিফ ভাই, আপনি কিসব করছেন। আমি বললাম, এদেশটাকে স্বনির্ভর করতে হবে। আমাদের ইফতি মানে জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতিখারউদ্দিন, মুজিববাদী ছাত্রলীগের সভাপতি ইদ্রিস, ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে সম্ভবত আবদুল্লাহ ছিলো। এরকম সব লিডাররা এসে জিজ্ঞেস করছে, কিন্তু তাঁকে কেউ বাধা দেয়নি। বললো, স্যার আপনারা করেন, আমরা তো ডাইরেক্টলি আসতে পারবো না। অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন মনে মনে চিন্তা করলেন, জিয়া সাহেব শুনলে আবার মাইন্ড করবেন কিনা। কারণ উনি তো তাঁকে স্টুডেন্টদেরকে পলিটিক্সে ইনভলভ্ করতে মানা করেছেন। পরে ভেবে ঠিক করেন, জিজ্ঞেস করলে বলবেন, আমি তো পলিটিক্সে ইনভলভ করছিনা। আমি এদেরকে দেশ গড়ার স্বনির্ভর প্রজেক্টের মধ্যে ইনভলভ করবো। শয়ে শয়ে ছাত্র আসতে থাকলো।
তারপর বরাবরের মত তাঁর বঙ্গভবনে ডাক পড়লো। জিয়া সাহেব তাঁকে বললেন, Arif, How is your youth.. তিনি বললেন to organise youth is very difficult. But Students are coming in large numbers in aid of your Swanirvar Project. I will involve them in politics. তিনি বললেন খুব ভালো। Why dont’s you take them to my Swanirvar Project in Ulshi Jadunathpur. I will just briefing for this Project. অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন বললেন ঠিক আছে স্যার। I will take them.
চিটাগাং এসে তিনি সিলেক্ট করলেন ক’জন নেয়া যায়। তখন চিটাগাং-যশোর ডাইরেক্ট ফ্লাইট ছিলো বিমানের। চল্লিশ জন ছাত্র আঁটবে। ৫জন জাসদ ছাত্রলীগ, ৫জন মস্কোপন্থী, ভালো ছাত্র ৫ জন, আর জামায়াত তো তখন প্রসার হয়নি, তাই যারা একটু ঐ মাইন্ডেড তাদের থেকে ৫জন, মহিলা ৫জন। সবাইকে গ্রুপ গ্রুপ করে একত্রিত করলেন ঠিকই, কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো গমনেচ্ছু ছাত্রের সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায়। প্লেনে আঁটবে চল্লিশ জন, যেতে চায় পাঁচশো জন। মহা মুসিবত।
তিনি আনোয়ারুল হক কাদেরী, ওসমান গণি চৌধুরী, পটিয়ার সিরাজ, আর একজন ওসমান ছিলো, ওর বাড়ি সাতকানিয়া, চকরিয়ার শাহজাহান চৌধুরী, আরো আছে সবার নাম এখন আমার মনে পড়ছে না, তাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে দিলেন যে, তোমরাই ঠিক করো কারা কারা যাবে। Meanwhile ড. করিম হয়ে গেলেন ভাইস চ্যান্সেলার আর আবুল ফজল সাহেব ঢাকায় Adviser to the preisdent সৈয়দ আলী আহসান সাহেব সম্ভবত তখন অবসর নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর কাজ হয়ে গেছে। পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টের কাজটা আলী আহসান সাহেবের সময়ই হয়ে যায়। তখন ড. করিম বললেন যে, আমার ছেলে শেখুলকেও নিয়ে যেতে হবে।’ তিনি চিন্তা করলেন, ভাইস চ্যান্সেলর সাহেবের ছেলে ও তো ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে, তারপরেও নিয়ে গেলেন। কারণ তাঁর ভাইস চ্যান্সেলরের সাপোর্ট লাগবে এখানে পলিটিক্স করতে গেলে।
ঢাকায় গেলেন। ঢাকায় গিয়ে অলি সাহেবের সঙ্গে আলাপ করে তাঁকে বললেন, এতগুলি ছেলেকে নিয়ে যাবো। আমার কাছে আছে তো মাত্র পনের হাজার টাকা, আরো ত মনে হয় টাকা লাগবে। তিনি বললেন, আমি চিটাগাং বলে দিচ্ছি। আপনাকে ফান্ড যোগাড় করে দেবে। কে যোগাড় করে দেবে? চেয়ারম্যান ফজল করিম।
অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন চেয়ারম্যান ফজল করিম সাহেবের কাছে গেলেন। সেখানে দেখেন সেকান্দর হোসেন মিয়া বসা, তিনি তখন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট। আর ইউসুফ গণি চৌধুরী, হাতি কোম্পানীর নাতি। ভদ্রলোক কিন্তু আওয়ামী লীগের সাপোর্টার, তবে ফজল করিম সাহেবের খুব ঘনিষ্ঠ লোক। অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন যখন ফজল করিম সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন, তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ আমাকে তো অলি সাহেব বলেছেন আরিফ, আপনাকে কিছু ফান্ড যোগাড় করে দেয়ার জন্য। দেখি কি করা যায়। অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন বললেন আপনি আমাকে একটি টাইম লিমিট দেন। কারণ, আমি তো ফর এভার বসে থাকতে পারবো না। আর না হলে I shall go for some other source. দেখলেন, দিন সাতেক চলে গেল, কোনো রেসপন্স পেলেন না। Meanwhile তিনি বিমানে গিয়ে সিট রিজার্ভ করে ফেলেছেন। তাঁর টাইমটা সঠিক মনে নেই। ওটা ডিসেম্বরের দিকে হবে। ঐ সময় চিটাগাংÑএর স্টেশন ম্যানেজার ছিলেন জেনারেল মাজেদুল হকের ছোট ভাই। নামটা ভুলে গেছেন। He was very cooperative. তো আসা যাওয়ার টিকিট বুক করে ফেললেন।
মাজেদুল হক সাহেব তখন এডভাইজার টু দি প্রেসিডেন্ট। তারপর অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন অলি সাহেবকে ফোন করলেন। উনি বললেন ঠিক আছে আপনি ম্যানেজ করেন লোন টোন নিয়ে, পরে এটা আপনাকে আমরা Refund করবো। তিনি লোনটোন নিয়ে ম্যানেজ করলেন। এরপর আবার ঢাকা গেলেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফরমাল একটু ব্রিফিং দেয়ার জন্য। তখন প্রেসিডেন্ট বললেন, Good Arif, I am glad you are doing that. I am also glad that you are taking them from all Political Parties, so that no body can comiplain that you are fouowing a particular political party. And I am also glad you are taking five girl students. We want the Participation of girls. তিনি ওখানে গিয়ে আর ফান্ডের কথা বলেননি। লজ্জার কথা। প্রেসিডেন্ট আবার বললেন, Why dont’s you do one thing. After their seeing my project, why dont’s you take them over to me to Bangabhavan for a cup of tea. Let me see what they have got to say about my project. তিনি বললেন ঠিক আছে স্যার। বলার পর আবার একটা ফেরকা বেঁধে গেল। আবার চিটাগাং এসে প্রোগ্রাম Change করলেন। ওরা তো টিকিট ইস্যু করবে চিটাগং-যশোর-চিটাগাং, এখন করতে হচ্ছে চিটাগাং-যশোর-ঢাকা। চিন্তা করলেন ঢাকা থেকে ওদেরকে সস্তা দামে প্লেনে নিয়ে আসার দরকার নেই। ওদেরকে সস্তা দামে ট্রেনে পাঠিয়ে দেবেন। যাক তারা চিটাগাং থেকে রওনা হলেন, তাদেরকে রিসিভ করার জন্য যশোর এয়ারপোর্টে একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসলেন। ঐ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের সঙ্গে আবার দেখা, ৩২ বছর পরে। তাঁকে দেখে বললেন, আরিফ সাহেব মনে আছে আপনাদেকে আমি রিসিভ করেছিলোম যশোর এয়ারপোর্টে। যশোর এয়ারপোর্টে থেকে ফ্লাই করলেন, রিসিভ করার জন্য তাঁর এক বন্ধু আসেন, জাসদ ছাত্রলীগের সদরুদ্দীন আহমেদ, উনি যশোরের এয়ারপোর্ট বেসে কর্মরত ছিলেন। এয়ারপোর্ট বেসের আরও কিছু কিছু অফিসার তাঁর কথা শুনে রিসিভ করতে আসেন। ম্যাজিস্ট্রেট তাদের গিয়ে গেলেন যশোরের সার্কিট হাউসে, সেখানে তাদের কিছু Accomodation হলো আর বাকীদের রাখলো সরকারি একটা অডিটোরিয়ামে। তাদেরকে চা-টা খাইয়ে রাত্রে যশোরের ডিসি ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর সার্কিট হাউসে ডাকলেন। উনি তাদেরকে উলসী যদুনাধপুর কি জিনিস তা টপ-টু বটম একটা ব্রিফিং দিলেন। বললেন এটা যদি হয় তাহলে আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাবে। আর উনার কথাবার্তায় দেখলেন উনি জিয়া সাহেবের খুব সমর্থক। ডিসি ডেপুটি সেক্রেটারি র‌্যাঙ্ক,Ardent-supporter of General Zia, তারপর দিন সকালে তাদের যশোরে উলসী যদুনাথপুর নিয়ে গেলেন। ওখানে লোকাল চেয়ারম্যানরা ছিলেন। দেখলেন সত্যি নদীর স্রোত আশে-পাশে আছে, ওখানে পানি আছে কিন্তু আটকে নেই এবং Over flowও নেই। তারপর ওখানে কনটলের গাছ যেগুলি দেখলেন, কলের সাইজ-টাইজ দেখলেন এগুলি অন্যান্য কলের চাইতে Growth অনেক বেশি এবং আশে-পাশে যেখানে স্রোত আটকে আছে ওখানে অনেক মাছ। অফুরন্ত মাছের চাষ। আশে-পাশে হাঁস-মুরগির চাষ। ছেলেরা দেখে বলল স্যার আমাদের পুরা দেশে যদি এরকম প্রজেক্ট হয় তাহলে তো আমরা We will be cxporting country. তিনি বললাম দেখলে তো, তোমাদের এতদিন বললাম এখনতো বাস্তবে দেখলে। ছেলেদের খুব একটা উৎসাহিত দেখলেন। তারপর সেদিন রাত্রে মহিউদ্দিন খান আলমগীর আবার তাদের কাছ থেকে শুনলেন তারা কি দেখলেন। উনি Very impressed. বললেন কালকে সকালে আপনাদেরকে যশোহরের একটি গাছ থেকে পাড়া ফ্রেশ খেজুরের রস খাওয়াবো। সবাই খেলেন। ফার্স্ট ক্লাস। ওখানে লটপটি না কি দিয়ে মুরগির গিলা কলিজা দিয়ে একটা জিনিস খেলেন আর ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল স্যার আমরা এগুলো কি খাচ্ছি। ব্রেকফাস্ট শেষে তাদেরকে নিয়ে গেলো বেনাপোল বর্ডার দেখাতে। ফার্স্ট টাইম গেলেন। ওখানে বড় বড় ব্রিটিশ আমলের গাছ, খুব সুন্দর। শের শাহ সুরীর গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোডের অংশ নাকি ওটা। সেখান থেকে তারা বিকালে ফ্লাইটে ঢাকা যান। ঢাকা থেকে ছেলেদেরকে নিয়ে চারটার সময় বঙ্গবভনে যান চা খেতে। বঙ্গভবনের লনে তাদের জন্য চা-চক্রের আয়োজন করা হয়েছিলো। প্রেসিডেন্ট সাহেব আসলেন, কর্ণেল অলি সাহেব আসলেন। অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন অলি সাহেবকে বললেন কেমন হয়েছে ট্যুর। ছেলেরা তো প্রেসিডেন্টকে দেখে হুড়মুড় করে উনার দিকে এগিয়ে গেলো। তিনি আর অলি সাহেব দূর থেকে দেখছেন। ফজলে করিম অনেকগুলো ছবি-টবি তুললো। ছেলেরা জিয়া সাহেবকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন করছে, জিয়া সাহেব জবাব দিচ্ছেন। এক পর্যায়ে বিদায়ের সময় জিয়া সাহেব তাঁকে বললেন। Arif, why dont’s you take them to Television. ছেলেদেরকে বললেন আপনারা উনার সঙ্গে যান, টেলিভিশনে গিয়ে বলবেন আপনারা যা দেখেছেন সেটা বলবেন। আমি যদি ভাল করি সেটা বলবেন আর যদি খারাপ করে থাকি তাও বলবেন। তারা টেলিভিশনে গেলেন। যাওয়ার আগে পাঁচজন সিলেক্ট করতে তাঁর খুব অসুবিধা হলো। ওদেরকে বললেন তোমাদের মধ্যে যারা ভালো বক্তা তারা আমার সঙ্গে এসো। ওরা নিজেদের মধ্যে সিলেক্ট করে পাঁচজন আসলো। তাঁর মনে আছে একজন কক্সবাজারের মহসিন, আর একজন শাহজাহান, আরেকজন রাউজানের ওসমান, বাকী দুজনের নাম মনে নেই। তাঁর মনে হলো সেদিন থেকে তিনি বাংলাদেশে ওপেন হয়ে গেলেন, কার্লাড হয়ে গেলেন। এতদিন তো সব চুপিচুপি করলেন। তারপর টেলিভিশন প্রোগ্রাম করে ছেলেদেরকে চিটাগাং পাঠিয়ে দিলেন। চিটাগাং পৌঁছার পর ওরা বললো, স্যার এখন আমাদের কাজ করা উচিত। তিনি বললেন ঠিক আছে। কাজ করতে তো কোন অসুবিধা সেই। ছেলেদেরকে Convince করো, Money is no problem. কাজ করতে তো পয়সা লাগবেই. no problem. তিনি তাদের সাথে আলাপ-টালাপ করে পরে ঢাকায় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপ করলেন। প্রেসিডেন্ট বললেন Arif, why dont’s you hold a rally of the studen. তিনি বললাম এখানে তো হাজার হাজার ছেলে, র‌্যালি করতে হলো তো একটা বড় র‌্যালি করতে হবে। তিনি বললেন Arif, go for the rally, Money will be no problem. তারপর তিনি ওনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অলি সাহেবের রুমে বসলেন। অলি সাহেবকে বললেন মামু একটা তো র‌্যালি করতে হবে আর এটাতো আমাদের পলিটিক্যাল যে ধরস আছে তার সাথে মিল হতে হবে। তিনি বললেন হ্যাঁ। তিনি বললেন আমরা জাতীয়তাবাদী পলিটিক্স করছি এটা তো ওটার সঙ্গে সিমেট্রি হতে হবে। অলি সাহেব বললেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নাম দিলে কেমন হয়। আরিফ সাহেব বললেন খুব ভালো, Nationalist Politics- এর একটা পার্টি করতে হবে। অলি সাহেব বললেন আপনাকে আমি চিটাগাং মেডিক্যাল কলেজের ফিফথ ইয়ারের একজন স্টুডেন্ট ঠিক করে দেব, যে এই দলের entire Paper work করে দেবে। Manifesto, Constitution, Leaflet, Poster যা যা দরকার তৈরি করে দেবে।

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা