ফারুক আবদুল্লাহ
দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিয়ন্ত্রণ নিতে ফের তৎপর হয়ে উঠেছে স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্টদের দোসররা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ভ‚মিকা রাখা কতিপয় বিতর্কিত নেতাদের পক্ষে প্রীতি সমাবেশ করে তুমুল বিতর্ক আর সমালোচনার মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশন অন্তর্গত সমমনা পরিষদ। আগামী নির্বাচনে সাধারণ সদস্যদের ওপর ভর করে এসব স্বৈরাচারদের দোসররা যাতে আবারও ফিরে আসতে না পারে, এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গত ৩০ অক্টোবর বিকালে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশন অন্তর্গত সমমনা পরিষদের উদ্যোগে এক প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান শুরু করার সময় প্রশাসনের বাধার মুখে পড়লেও পরে নানা উপায়ে প্রীতি সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ চলাকালীন সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ভ‚মিকা রাখা কতিপয় চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের বিতর্কিত নেতাদের আগমনের খবর পেয়ে সমন্বয়কদের একটি দল ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে আসে। এসময় পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
এই অনুষ্ঠানের আহব্বায়ক ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছৈয়দুল মোস্তফা চৌধুরী রাজু। তিনি চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের বর্তমান উপদেষ্টা। আর প্রীতি সমাবেশের সদস্য সচিব ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আলতাফ হোসেন চৌধুরী (বাচ্চু)। তিনি চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটির ১ম সহ-সভাপতি। গত ৪ আগস্ট নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যাদের নেতৃত্বে হামলা হয়েছিল, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী, চান্দগাঁও এবং ডবলমুরিং থানায় ৩টি মামলা সহ আরও কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়।
একইভাবে অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু। তিনি কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি, খুলশী থানার সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটির সভাপতি এ কে এম আকতার হোসেন বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে চারবার সুযোগ পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা হয়েছে জানা যায়।
প্রীতি সমাবেশে বক্তব্যে সমন্বয়ক রিজাউর রহমান বলেন, আমাদের কাছে সকাল ১০-১১টার দিকে ইনফরমেশন আসে, আওয়ামী লীগের একজন বৃহৎ ডোনার আলতাফ হোসেন চৌধুরী এই প্রোগ্রামে আসছে। এতবড় একটি পরিসরে এমন ধরনের একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে তারা কিভাবে এই জায়গায় ফ্লোর দেয়। আমরা এখানে আসছি, এর প্রেক্ষিত ছিল যাতে কোন ধরনের স্বৈরাচারের দোসর আবারও আমাদের মাঝে জায়গা করে নিতে না পারে। যদি এদের দোসররা আবারও বিভিন্ন ধরনের নামে-বেনামে প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে পুনর্বাসিত হয়, সেটা আমাদের জন্য বড় লজ্জার বিষয়। এত বড় লজ্জা নিয়ে আমরা চট্টগ্রামের মাটিতে বেঁচে থাকতে পারবো না।
তিনি বলেন, যদি এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিরা আপনাদের ওপর ভর করে আবার ফিরে আসতে চায়, তাহলে আমরা কষ্ট পাবো। শুধুমাত্র কষ্ট পাবো এমন না, আমাদের শহীদ ভাইয়েরাও কষ্ট পাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাজু-আকতার-বাচ্চু-বিলু সিন্ডিকেটের এক নিয়ন্ত্রণে ছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস। এসময় তারা কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের ব্যানারকে কুক্ষিগত করে বন্দর-কাস্টমসে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সমস্ত অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে রাজু-আকতার-বাচ্চু আত্মগোপনে চলে যায়। এদের পক্ষে গত ৩০ অক্টোবর সমমনা পরিষদের উদ্যোগে প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করে তুমুল বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় উঠে।
অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ছিল ক্যামিকেল, ফেব্রিক ও সকল এসোটেড গুডস এবং তারা আমদানিকারকের সাথে যোগসাজশে পণ্যের মূল্য ও ওজন কম দেখিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক মো. উবাইদুল হক (আলমগীর) বলেন, এই প্রোগ্রামের নেতৃত্বে আমি নাই। আমি একজন সাধারণ মেম্বার হিসেবে গিয়েছিলাম। আমার শরীর খারাপ ছিল বিদায় চলে আসছি। আর ওদের পক্ষে সমাবেশ করা হয়েছে সেটা আমি জানি না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রীতি সমাবেশে সমন্বয়কারী ও চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, যারা আমাদের থামাতে চায় তারা আমাদের থামাতে না পেরে নানা ষড়যন্ত্র করছে। পুলিশকে ভুল বুঝিয়েছিল। পরে তারা বুঝতে পেরে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত দেয়। আর সমন্বয়করাও এসেছিল। তারা আলোচনা করে চলে যায়।
বিতর্কিতদের পক্ষে প্রীতি সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হয়নি। এইরকম পরিস্থিতি যদি হয়, তাদেরকে বাদ দিয়ে করা হবে। তবে তারা যদি সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসে তখন দেখা যাবে। এটি ব্যক্তিগত মতামত।