এম এ হোসাইন
চট্টগ্রাম শহরের জন্য পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিচালনা ও উন্নত করা চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান কাজ। মূল কাজ বাদ দিয়ে সংস্থাটি এতোদিন রাজনীতি চর্চায় বেশি মনোযোগী ছিলো। পূর্বতন সরকারের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য দেখানো কাজে পরিণত হয়েছিল। সেই ধারা থেকে এখনো বের হতে পারেনি সংস্থাটি।
ইতোমধ্যে পতিত সরকারকে খুশি করতে ওয়াসা ‘প্রাণজল’ নামে একটি প্রকাশনা বের করেছে। উন্নত মলাটে তৈরি এই প্রকাশনার মাধ্যমে মূলত শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা বন্দনা করা হয়েছে। শহরের এক তৃতীয়াংশ মানুষকে পানি বঞ্চিত রেখে ওয়াসা যেন হাসিনা প্রীতিতে ব্যস্ত ছিল। দু’টি প্রকল্পের শোধনাগারের নাম পরিবর্তন করে শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করেছে। এর বাইরে শেখ রাসেলের নামেও একটি প্রকল্পের নামকরণ করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। শেখ হাসিনাকে খুশি করাই সংস্থাটির মুখ্য কাজে পরিণত হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে এখনো বের হতে পারেনি সংস্থাটি। এখনো হাসিনা প্রীতি রয়ে গেছে ওয়াসার পানির বিলে। ‘শেখ হাসিনার মূলনীতি, গ্রাম শহরের উন্নতি’- এমন স্লোগান লিখা পানির বিল এখনো দিচ্ছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, ‘বিল দেখে বলছেন, নাকি না দেখে বলতেছেন’। তিন মাসের বিলের কপি হাতে থাকার কথা জানালে তিনি বলেন, ‘তিন মাসের বিলের কথা বলে লাভ নেই। এই মাসের বিলের কপি দেখেন, সেখানে এমন কিছু নেই’।
তবে গ্রাহকরা বলছেন ভিন্ন কথা। চট্টগ্রাম ওয়াসার গ্রাহক বিলে উপরে লেখা রয়েছে, ‘শেখ হাসিনার মূলনীতি, গ্রাম শহরের উন্নতি’। একই বিলে ডান পাশে লেখা, ‘দেশ প্রেমের শপথ নিন, দুর্নীতিকে বিদায় দিন’। গত আগস্ট মাসে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও নিয়মিত বিল দিয়ে যাচ্ছে ওয়াসা। সেই বিলের কপিতে এসব স্লোগান দেখে গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে অনেকে জানিয়েছেন, চলতি মাসের অনেক বিলে মার্কার দিয়ে স্লোগান মুছে দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রোমন দে বলেন, বিলে স্লোগানের একটি স্টিকার ছিল, সেটা কম্পিউটার প্রোগ্রামারকে বাদ দিতে বলা হয়েছে। এমডি স্যারও বিষয়টি জানেন। এই মাস থেকে বিলে স্টিকারটি যাওয়ার কথা না। আমি আবার খবর নিচ্ছি, এমনটা হওয়ার কথা না। বিলের কাগজগুলো পুরো বছরের জন্য কেনা হয়। স্টিকারটি কাগজে ছাপানো আছে, যার কারণে হঠাৎ করে বন্ধও করা যায় না। সেটি আমরা মুছে দিতে বলেছি।
শুধু ওয়াসার গ্রাহক বিলে নয়, শেখ হাসিনার স্লোগান ও মুজিব শতবর্ষের লোগো সংবলিত বিভিন্ন ফরম দেখা যাচ্ছে ওয়াসার ওয়েবসাইটে। যদিও এসব ফরম ৫ জুলাইয়ের পূর্বে আপলোড করা। তবে জুলাই পরবর্তি সময়ে এসব ফরম আপডেট করা হয়নি। যার কারণে সেখানে এখনো পতিত সরকারের নানান স্লোগান রয়ে গেছে।
ফয়সল আদনান নামের এক গ্রাহক বলেন, হাসিনা পতনের পাঁচ মাস পর হলেও তার নামসহ স্লোগান রয়েছে ওয়াসার বিলে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা এখনও ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার হাসিনার নাম প্রচারে ব্যস্ত। এটা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। অচিরেই এটি কর্তৃপক্ষের সংশোধন করা উচিত। এখানে যারা আছে তারা তার সমর্থক গোষ্ঠী হতে পারেন। অথবা দায়িত্বহীনতার কারণে প্রচারণা চালিয়েছেন। একজন স্বৈরাচারের বিদায় হয়েছে। কিন্তু এখনো বিলের মধ্যে হাসিনার স্লোগান থাকা জুলাই আন্দোলনকারীদের সাথে মশকরা’র শামিল।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন। তার দেশ ত্যাগের পর সব কিছুর পরিবর্তন হলেও ওয়াসার তেমন পরিবর্তন হয়নি। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত ওয়াসার তখনকার এমডি ফজলুল্লাহকে সরানোর জন্য গ্রাহকদের আন্দোলন করতে হয়। শেষ পর্যন্ত ফজলুল্লাহকে সরানো হলেও এখনো শেখ হাসিনার বার্তা রয়ে গেছে ওয়াসার বিলে ও বিভিন্ন ফাইলে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।