চট্টগ্রাম ওয়াসা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম ওয়াসা বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেখাগেছে। বরাদ্দের বহুটাকা সরকারের পক্ষ হতে ব্যয় হলেও নগরবাসী তার প্রকৃত সুফল পেতে দেখা যায়নি। সরকারি টাকা বরাদ্দ হলে হবে না, প্রকল্পের টাকা যথাযথ ব্যয় হচ্ছে কি না,জনগণের উপকারে প্রকল্প কতটুকু ভূমিকা রাখবে তার দিকে সরকারি কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকতে হবে। ওয়াসার পানি প্রকল্পের অবস্থা এপ্রকল্পে যেন না হয় সে বিষয়ে গভির দৃষ্টি রাখা জরুরি।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলীতে স্যুয়ারেজ প্রকল্পসহ ১২ হাজার ৫৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত ১৩ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন (স্যুয়ারেজ) প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
গতকাল রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। একনেকে অনুমোদন দেয়া ১২ হাজার ৫৩২ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪ হাজার ৯৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ৭ হাজার ৩২৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১ হাজার ১০৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরীতে ৬টি ক্যাচমেন্ট এলাকায় স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে দু’টি ক্যাচমেন্ট ছাড়া (ক্যাচমেন্ট ৩ এবং ৬) অবশিষ্ট ৪টি ক্যাচমেন্ট একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
‘উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন প্রকল্প’টির ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ দশমিক ২১৫২ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারি টাকা ৩৬২ দশমিক ০৩৫০ কোটি এবং অবশিষ্ট টাকা হচ্ছে ফ্রান্স ভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এফডি’র। ২০২৫ এর জানুয়ারি থেকে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উত্তর কাট্টলী এলাকার ৩ লক্ষ মানুষ সুবিধাভোগ করবেন।
সম্প্রতি একনেকের সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট-৫ স্যানিটেশন প্রকল্প’ অনুমোদন হয়েছে। নগরীতে ৬টি ক্যাচমেন্টের মাধ্যমে স্যূয়ারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে যা চট্টগ্রামবাসীর জন্য আশাব্যঞ্জক। ‘উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট-৫ স্যানিটেশন প্রকল্পের’ জন্য ভ‚মি অধিগ্রহণ করতে হবে না। এই প্রকল্পের ভ‚মি আগেই অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তর কাট্টলী এলাকার ৩ লাখ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা পাবেন। প্রকল্পটির কাজ দ্রæত শুরু হবে। এখন আমরা কনসালটেন্ট নিয়োগ দেবো। এরপর ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হবে। কালুরঘাট এবং পূর্ব বাকলিয়ায় ক্যাচমেন্ট ২ এবং ৪ এর জন্য ভ‚মি অধিগ্রহণ করতে হবে। ভ‚মি অধিগ্রহণের জন্য আবার প্রকল্প নিতে হবে।
এই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের উত্তর কাট্টলী এলাকার প্রায় তিন লক্ষ জনগণকে উন্নত স্যানিটেশন সেবার আওতায় আনা।
৬টি ক্যাচমেন্টের মাধ্যমে সমগ্র চট্টগ্রাম শহরকে পর্যায়ক্রমে একটি পরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জানা গেছে, উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট-৫ স্যানিটেশন প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকাটি থেকে গৃহস্থালির পয়োঃবর্জ্য সংগ্রহ ও পরিশোধন করা এবং পানির উৎসের দূষণ, বৃষ্টির পানির সাথে পয়োঃবর্জ্যরে মিশ্রণজনিত দূষণ এবং গ্রীণ হাউস গ্যাস নির্গমনের ঝুঁকি থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগরীর জনগণের জীবনযাত্রার মান, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অবদান রাখা।
এর আগে গত ২০২৩ সালের ২২ জুন দাতাসংস্থা এফডির সাথে অর্থায়ন সংক্রান্ত ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরে বর্তমানে কোনো পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থ্য নেই। মহানগরীতে পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সূচনা এবং ক্রমান্বয়ে সকল নগরবাসীকে আধুনিক পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা স্যানিটেশন মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে। আগামি ৩০ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ওয়েস্ট ওয়াটার সংগ্রহ ও পরিশোধন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ চিহ্নিত করা হয়েছে এই মাস্টার প্ল্যানে। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সুপারিশ রয়েছে। প্রণীত মাস্টার প্ল্যানে পুরো মহানগরীকে ৬টি ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভাগ করে প্রতিটি ক্যাচমেন্ট এলাকার পয়োঃবর্জ্য পরিশোধনে ১টি পয়োঃশোধনাগার (এসটিপি) এবং পুরো শহরের জন্য ২টি ফিক্যাল ¯ø্যাজ শোধনাগার ব্যবস্থাপনের সুপারিশ করা হয়। প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম গুলো হলো ৫০ হাজার ঘনমিটার (দিনে) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োঃশোধনাগার, ৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পয়োঃপাইপ লাইন স্থাপন, ৮১০০টি গৃহ সংযোগ লাইন, অনসাইট স্যানিটেশন এবং ফিক্যাল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম, স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন, কমিউন্যাল সেপটিক ট্যাংক, পাবলিক টয়লেট ও ডিইডবলিওএটিএস নির্মাণ ও পুনর্বাসন কাজ ৭৯৭টি।
একনেকে পাশ হওয়া উত্তর কাট্টলী স্যানিটেশন প্রকল্পসহ ১৩ প্রকল্পের কাজে সততা,নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। এপ্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর জনগণ যেন উপকার ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব।